ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: আর হাতে গোনা মাত্র পাঁচ দিন বাকি পুরসভা নির্বাচনের। আর তাই শেষ কদিনের প্রচারে সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দল জোর কদমে নেমে পড়েছে প্রচারের কাজে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই পুরনাগরিক পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ভাবনা চিন্তা, পরিকল্পনা নিয়ে যেমন সকাল থেকেই হাজির হচ্ছেন মানুষের দরজায়, পাশাপাশি মিছিল,মিটিং থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে ব্যাপক প্রচার। পুরবোর্ড গঠন করতে পারলে বর্ধমানবাসীকে কোন রাজনৈতিক দল কি কি সুযোগ,সুবিধা দিতে পারবেন তা নিয়ে প্রার্থীরা তাদের লিফলেট পৌঁছে দিচ্ছেন ভোটারদের হাতে।
তবে তৃণমূল, বিজেপি এখনও তাদের ইস্তাহার প্রকাশ করতে না পারলেও ইতিমধ্যেই অন্যান্য দলের থেকে কিছুটা এগিয়ে বামফ্রন্ট অনেক আগেই তাদের ভোটের ইস্তাহার পত্র প্রকাশ করেছে। আর সেই ইস্তাহারে বর্ধমান শহরের ২০দফা সমস্যার কথা তুলে ধরেছে বাম জোট। যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে রাখা হয়েছে বর্ধমান শহরের দীর্ঘদিনের বাজারগুলোর অব্যবস্থা নিয়ে পরিকল্পনা। এরপরই রয়েছে শহরের মধ্যে দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটানোর চিন্তা ভাবনা। এছাড়াও একাধিক অপরিকল্পিত ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে এবার ইস্তাহারে বামফ্রন্ট এর প্রতিশ্রুতি – বর্ধমান পুরসভা গঠন করতে পারলে নাগরিক পরিষেবার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত এই সমস্ত সমস্যা দ্রুত সমাধনের কাজ শুরু করবে তারা।
সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বর্ধমান গ্রাম কেন্দ্রিক একটি শহর। এখানে অধিকাংশ মানুষই ব্যবসায়ী। অন্যদিকে বর্ধমান শহরের নানান প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ বিভিন্ন কাজে এই শহরে একসময় যাতায়াত করতেন। শহরের মধ্যে দিয়েই জেলার বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করতো। সেই ব্যবস্থা অনেকদিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে গত কয়েক বছরে শহরের ব্যবসা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যানজট কমানোর জন্য শহরের দুই প্রান্তে উল্লাস ও নবাবহাটে বাস স্ট্যান্ড করা হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনা অসম্পূর্ণ হয়েই রয়ে গেছে। বর্তমানে বর্ধমান শহরে প্রবেশ করতে গেলে টোটো তে অতিরিক্ত ৪০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। টাউন সার্ভিস বাসে মাল নিয়ে উঠতে নামতেও সমস্যা রয়েছে। আর এই সমস্যার জন্য শহরের বাজারগুলোতে দিনদিন কমেছে ক্রেতার সংখ্যা। বাইরের গ্রামগঞ্জ থেকে আসতে চাইছেন না শহরের ব্যবসায়ীদের মূল ক্রেতা লোকজনেরা। ফলে ক্রেতা ও ব্যবসায়ী উভয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।”
শহরবাসীর ও ব্যবসায়ীদের একাংশের দীর্ঘদিনের দাবি শহরের ভিতর দিয়ে চলাচল করতে দিতে হবে জেলার সমস্ত রুটের বাস। গত বিধানসভা ভোটের আগেই এই একই ইস্যুতে আন্দোলন শুরু করেছিল ব্যবসায়ী সুরক্ষা সমিতির সদস্যরা। যদিও সেই আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। পুরভোটের মুখে ফের এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিরোধীরা ইতিমধ্যেই ব্যবসায়ীদের মতামত কে স্বীকৃতি দিতে শহরের ভিতর দিয়ে ফের সব বাস চলাচল শুরু করার দাবি তুলেছে। আর বর্ধমান পুরভোটের আগে এই ইস্যুতেই সোচ্চার হয়েছে বামেরা। শাসকদলের অপরিকল্পিত পরিকল্পনাকে দায়ী করেই আসন্ন পুর নির্বাচনে প্রচারও চালাচ্ছেন বাম প্রার্থীরা।
বামেরা জানিয়েছে, তারা ক্ষমতায় এলে বর্ধমান শহরের ভিতরের তিনকোনিয়া বাস স্টান্ডকে (পুরনো বাসস্ট্যান্ড) সিটি বাস স্ট্যান্ড হিসেবে গড়ে তোলা হবে। বাইরে থেকে আসা বাসগুলি সেখানে দাঁড়াতে পারবে। প্রয়োজনে বেশ কিছু রাস্তা দিনের বেলায় একমুখী করে দেওয়া যেতে পারে। শহরের ভিতর দিয়ে যাওয়া জিটি রোডে ক্রিস ক্রস পদ্ধতিতে বাস চালানো হবে। যদিও বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস বলেন, “বর্ধমান শহরে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা জনসংখ্যার চাপ ও তার সঙ্গে যানজট এড়ানোর জন্য দুই প্রান্তে বাস স্ট্যান্ড করার পরিকল্পনা নিয়েছে বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা বা বিডিএ। এরপর শহরের ভেতরের জি টি রোড সম্প্রসারণের কাজ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শহরের মধ্যে ফের বাস চলাচল শুরু করা যায় কিনা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। একাধিক মিটিং করা হয়েছে বাস অ্যাসোসিয়েশন ও শহরের ব্যবসায়ী সংগঠন গুলোর সঙ্গে। ভোট মিটতেই বর্ধমানবাসীর স্বার্থে, প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
বিজেপির বর্ধমান সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক শ্যামল রায় বলেন,”সিপিএম এত বছর ক্ষমতায় থেকেও যে কাজ করতে পারেনি এখন নির্বাচনের আগে মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে তারা। সুষ্ঠুভাবে প্রশাসন পরিচালনা করতে একমাত্র বিজেপিই পারে। পুর নির্বাচনে বিজেপি জয় লাভ করে বর্ধমান পুরসভা গঠন করবে। সুশাসন ও সুন্দর নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার লক্ষ্যে বিজেপি পরিচালিত পুরসভা কাজ করবে।” ফলে পুরভোটের মুখে বাস চলাচল ইস্যু কে সামনে রেখে ফের সরগরম শহর বর্ধমান।