ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ১৪ দিনের শিশুর জিভের নিচের জটিল অস্ত্রোপচার করে নজির সৃষ্টি করল বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু শল্য চিকিৎসক এর একটি বিশেষ দল। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নাক কান গলা বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ঋতম রায়ের তত্বাবধানে এই বিরল অস্ত্রোপচারে ছিলেন হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের দোরথী ভট্টাচার্য, শ্বাশত ভট্টাচার্য। আনেস্থেসিয়ার চিকিৎসক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক সৌমেন মণ্ডল, তীর্থাশিষ মণ্ডল, তোফাজ্জেল সাহানা। আর শিশু বিভাগের চিকিৎসক হিসাবে ছিলেন তমাল কয়াল। সঙ্গে নার্স এবং অন্যান্য কর্মীরাদের অবদান ছিল অনবদ্য।
বর্ধমান হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত দুসপ্তাহ আগে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে জন্ম নেয় মেমারির সুলতানপুরের এক প্রসূতির সন্তান। জন্মের পরে দেখা যায় শিশুটির খেতে সমস্যা হচ্ছে। মায়ের বুকের দুধ সে স্বাভাবিক ভাবে খেতে পারছেনা। চিকিৎসক পরীক্ষা করে বুঝতে পারেন, শিশুর জিভের নীচে একটি জলফোস্কার মত হয়েছে। যেটি সাদামত হয়ে ফুলে আছে। তার ভিতরে রয়েছে তরল। আর তার জন্যই শিশুটি তার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি অনুযায়ী জিভের ব্যবহার করতে পারছে না। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে রানুলা (RANULA)। এটি শিষ্ট জাতীয় একটি সমস্যা।
জন্মের পরই এই সমস্যা নজরে আসায় শিশু বিভাগের চিকিৎসক শিশুটিকে রেফার করেন নাক কান গলা বিভাগে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের চিকিৎসক ঋতম রায় বলেন, সাতদিন যখন বয়স তখন আমরা বাচ্ছাটিকে হাতে পাই। প্রথমে সিরিঞ্জ দিয়ে ওই তরল বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু ফের জিভের নীচের অংশ ফুলে ওঠে। তাই অস্ত্রোপচার করার সিধান্ত নেওয়া হয়। শিশুটির জন্মের ১৪ দিনের মাথায় শিশুটিকে অজ্ঞান করে জিভের নীচের শিষ্ট সফল অস্ত্রোপচার হলো বর্ধমান মেডিক্যালে। এতো ছোট শিশুকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার বর্ধমান মেডিক্যালে প্রথম বলেই জানা গেছে। আর এই বিরল অস্ত্রোপচারের সাফল্যে স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছসিত বর্ধমান মেডিক্যালের সবাই।
মেডিকেল সূত্রে জানা গেছে, বড়দের ক্ষেত্রে এই সমস্যা অনেক সময়ই দেখা যায়। সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারও করা হয়। একটু বড় বাচ্ছাদের মধ্যেও এই রোগ দেখা দিলেও সদ্যজাতদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যায় না বললেই চলে। এটা খুব বিরল। চিকিৎসকদের কথায়, এত ছোট বাচ্ছাকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে অস্ত্রোপচার করা নিয়ে শুরু হয় চিন্তা। অবশেষে তিনজন আনেস্থেসিয়ার চিকিৎসককে নিয়ে দশজন চিকিৎসকের একটি টিম অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। গতকাল অর্থাৎ বুধবার প্রায় দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন চিকিৎসকদের এই টিম। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অস্ত্রোপচারের পর শিশুটিকে আই সি ইউ-তে রাখা হয়েছে। সে সুস্থও আছে।