ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: এতদিন রোগীর পরিবারের আত্মীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ আসত সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসার পর খোদ সরকারি হাসপাতালের এক শ্রেণীর কর্মী কিংবা বহিরাগত দালাল দের খপ্পরে পড়ে রোগীর পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ভুল বুঝিয়ে রোগীকে চিকিৎসা করানোর জন্য এক শ্রেণীর দালাল বাইরের কোনো নার্সিংহোমে পাঠিয়ে দেওয়ায় তাদের হাজার হাজার টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই সেখানে বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে কিংবা কোনো চিকিৎসাই হয়নি। এই নিয়ে অভিযোগ করতে গেলে নানান প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে রোগীর আত্মীয়দের।
এবার খোদ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধেই রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করানোর জন্য বাইরের ল্যাবের নাম সুপারিপ করার অভিযোগ সামনে এলো। আর বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হসপিটাল এর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ কে ঘিরে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য। বাইরের প্যাথলজিক্যাল ল্যাব থেকে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য কমিশন পাওয়ার ‘ সেটিং ‘ থেকেই এই চেষ্টা বলে রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এমনকি সেই ল্যাব বাড়তি টাকা দাবি করায় পরীক্ষা না করিয়ে হাসপাতালের সুপারের কাছে ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছেন রোগীর পরিজন। পাশাপাশি একই অভিযোগ করা হয়েছে বর্ধমান থানাতেও।
জানা গেছে, গত ১৫ আগস্ট বর্ধমান মেডিক্যালে এক শিশুর জন্ম দেয় ভাতারের ভাটাকুলের রাকিনা বেগম। জন্মের পর শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে শিশু বিভাগের এস এন সি ইউ-তে ভর্তি করা হয়। রোগীর পরিজনদের দাবি, গত ২৫ তারিখ শিশুটির একটি রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। তখন চিকিৎসক অমরেশ রায়, রোগীর পরিজনদের ডেকে বলেন, এই পরীক্ষা হাসপাতালে হয়না। এটি বাইরে থেকে করাতে হবে। পরিজনদের অভিযোগ, ওই ডাক্তারবাবু বাইরের ল্যাবের একজনকে ডেকে তাঁদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এবং রক্ত পরীক্ষার জন্য ১৩হাজার টাকা লাগবে বলা হয়। কিন্তু, এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে অনেক অনুরোধে ৮হাজার টাকায় রক্ত পরীক্ষা করতে রাজি হয় ল্যাবের ওই ব্যক্তি।
শিশুর কাকা সেখ জসীমউদ্দিন বলেন, “ল্যাবের ওই ব্যক্তিকে প্রথমে ২হাজার টাকা দেওয়া হয়। পরদিন তাঁকে বাকি টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু পরদিন ওই ল্যাব আরও বাড়তি টাকা দাবি করে। তখন তাঁরা বাধ্য হয়ে ফিরে আসেন। এবং সোমবার হাসপাতাল সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। সোমবার বিকালে বর্ধমান থানাতেও অভিযোগ করা হয়।” পাশাপাশি পরিবারের দাবি, হাসপাতালের সুপার পরীক্ষাটি বাইরে থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে করিয়ে দেওয়ায় আশ্বাস দিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রক্তের ওই পরীক্ষা বর্ধমান হাসপাতালে হয়না। তাই বাইরে থেকে করানোর কথা বলা হয়েছিল। হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ বলেন, “একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ভুল বোঝাবুঝির জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। যদিও একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে আসল তথ্য সামনে আসবে।” এদিকে খোদ সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক কিংবা কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিবারের সদস্যকে সরাসরি বাইরে থেকে নির্দিষ্ট ল্যাবে পরীক্ষা করিয়ে নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়ার নির্দেশ কে ঘিরে ইতিমধ্যেই সোরগোল শুরু হয়েছে।