ফোকাস প্রতিবেদন: রাত পেরোলেই মহাষষ্ঠী। দিকে দিকে পুজো শুরুর আনন্দ। প্রস্তুতিও সারা। এখন শুধুই বোধনের অপেক্ষা। মহা ষষ্ঠীর গোধূলি লগ্নে দেবীকে জাগ্রত করতে হয়, তারপর শুরু হয় মহাসমারোহে দেবীর পুজো। দেবী দুর্গার মুখমণ্ডলের আচ্ছাদন উন্মোচন করে দেওয়া হয় এদিন। এই যে ষষ্ঠীর দিন দেবীর মুখমণ্ডল উন্মোচন করা হয় এই রীতিটিকেই বলা হয় কল্পারম্ভ। কল্পারম্ভের পরে দেবীর বোধন হয়।বোধনের দিন কল্পারম্ভের ঠিক পরেই সকলে দেবীর শ্রীমুখ দর্শন করতে পারেন।
সমস্ত শাস্ত্রীয় রীতি মেনে ঘট ও জলভর্তি তাম্র পাত্র মণ্ডপের একপাশে রেখে দেবী দুর্গা ও চন্ডীর পুজো করা হয়। এই সম্পূর্ণ পুজো টি শুদ্ধাচারে করেন পুরোহিত গণ। দেবী দুর্গা ও চন্ডীর পুজোর পরে দেবীর জাগরণ অর্থাৎ বোধন হয়। দেবীর বোধনের ঠিক পরেই হয় আমন্ত্রণ ও অধিবাস। দুর্গাপূজা পদ্ধতিতে বোধনের মতো গুরুত্বপূর্ণ হলো আমন্ত্রণ। দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয় যেন তিনি ভক্তের পূজা গ্রহণ করেন।
ভক্তের পুজো গ্রহণ করবার জন্য দেবীকে বিল্ব শাখার মধ্যে আমন্ত্রণ জানান পুরোহিত। এরপরই দেবীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত সকল দ্রব্য দেবী গ্রহণ করেন। এরপর লাল সুতো দিয়ে চারটে কঞ্চির মাথা বেঁধে একটি গন্ডি কেটে দেওয়া হয়। শাস্ত্রীয় মত অনুসারে বলা হয়, এই গণ্ডির ভেতর কোন অশুভ শক্তি প্রবেশ করতে পারে না। একে বলা হয় সুতো বেষ্টনী। এরপর পুরোহিত মাকে বরণ করেন, একে বলা হয় মান্ত্রিক অধিবাস, অর্থাৎ মন্ত্রের সাহায্যে দেবীর অধিবাস হয়।
এইভাবে দুর্গা ষষ্ঠীতে বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস সম্পন্ন হয়। দেবীর বোধনের পর দেবী দুর্গার সামনে প্রার্থনা করা হয় যে দেবী যে কটা দিন মর্তভূমিতে থাকবেন অর্থাৎ ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত যেন দেবীর পূজোতে কোনরকম বিঘ্ন না ঘটে। পৌরাণিক মত অনুসারে, বোধনের দিন দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে মর্ত্যভূমিতে প্রথম পদার্পণ করেন সপরিবারে। এই দিন দেবীর সাথে থাকে তার চার সন্তান লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক ও সরস্বতী।
এই বোধন সম্পর্কে আরো একটি ধারণা প্রচলিত আছে শাস্ত্রে। সনাতন শাস্ত্রে বলা হয়, দেবতাদের সকাল হলো সূর্যের উত্তরায়নের ৬ মাস। আর সূর্যের দক্ষিণায়নের ৬ মাস হলো দেবতাদের রাত্রি নিদ্রা যাপনের সময়। অন্যদিকে শরৎকালে যখন দেবী দুর্গার পুজো অনুষ্ঠিত হয় তখন দক্ষিণায়ন চলে। তাই সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী সেই সময় দেবী দুর্গা সহ সকল দেব-দেবীরা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই তাঁদেরকে জাগ্রত করা হয় বোধনের মাধ্যমে।
রামায়ণ বর্ণিত আছে, প্রবল পরাক্রমশালী, অত্যাচারী, অপারেজেয় রাবন কে বধের নিমিত্ত সমগ্র দেবাদিদেব অকালে দেবী দুর্গার ঘুম ভাঙিয়ে বোধন করেছিলেন। এই বোধনকে অকালবোধন বলা হয়। এই বোধনের মাধ্যমে সমাজে আরো একটি বার্তা দেওয়া হয়, আমাদের অন্তরে থাকা সমস্ত অশুভ শক্তি অর্থাৎ লোভ, হিংসা, পাপকে ঘুম পাড়িয়ে শুভ শক্তিকে জাগিয়ে তোলার আহবান করা হয়। উল্লেখ্য, এইবছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১ লা অক্টোবর, বাংলার ১৪ আশ্বিন শনিবার সেই শুভক্ষণ – মহাষষ্ঠী।
তথ্য সংগৃহীত – ইন্টারনেট