ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: গত সোমবার বর্ধমান শহরে দুপুরবেলায় সোনার বিস্কুট সন্দেহে হলুদ রঙের একটি ধাতু উদ্ধার কে কেন্দ্র করে পুরসভার সামনে হৈ চৈ পড়ে গিয়েছিল। পরে সেই বস্তুটি বর্ধমান থানার পুলিশ বাজেয়াপ্ত করে। পাশপাশি বস্তুটি আদপে কোন ধাতু তা জানার জন্য শহরের মিঠাপুকুরের জহুরীপট্টি এলাকার একটি সোনার দোকানে সেটিকে পরখ করিয়ে পুলিশ জানিয়ে দেয় ধাতুটি আসলে পিতল। এই বিষয়ে ওই সোনার দোকানের পক্ষ থেকেই দোকানের নাম লেখা একটি প্যাডের কাগজে লিখিতভাবে পুলিশ কে জানিয়ে দেওয়া হয় হলুদ রঙের ধাতুটি সোনা নয়, পিতল।
আর এরপরেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে কোনো ধাতুর মধ্যে কোন পদার্থ কতটা আছে সেটা জানানোর জন্য কি বর্ধমানে কোনো স্বর্ণ ব্যবসায়ীর পর্যাপ্ত পরিকাঠামো রয়েছে? বিশেষ করে সোনার ক্ষেত্রে সেটি নকল, নাকি আসল বা হলুদ রঙের বস্তু হলেও তার মধ্যে অন্যান্য ধাতুর পরিমান কত – তা কি আদৌ একটি স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নির্দিষ্ট পরীক্ষা ছাড়া বলে দেওয়া সম্ভব? এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে। যদিও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ধাতুটি সোনা নাকি সোনা নয় তা জানার জন্য শহরের এক রেজিস্টার্ড সোনার দোকানে ধাতুটিকে যাচাই করানো হয়েছে মাত্র। তবে ধাতুটির আসল চরিত্র জানার জন্য অনুমোদিত গোল্ড টেস্টিং সেন্টারে পাঠানো হবে। তারপরই বলা যাবে ধাতুটি আসলে কি।
শোনা গেছে, সোনার বিস্কুটের মতো দেখতে হলুদ রঙের এই জাতীয় বস্তু নাকি কিছুদিন আগেও বর্ধমান শহরের রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিলেন এক অজ্ঞাত পরিচয় মহিলা। যদিও তারপর সেই বস্তুটির কোথায় গেল তা জানা যায়নি। তবে বর্ধমানের একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সোনারই হোক বা পিতলের, কেন এই ধরণের বস্তু বর্ধমানের রাস্তায় পাওয়া যাচ্ছে সেটাই তো রহস্য। তাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, এর পিছনে কোনো প্রতারণা চক্র কাজ করছে কিনা তাও ভেবে দেখা দরকার। তাঁরা এও জানিয়েছেন, বর্ধমানেই একাধিক সোনা পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে, সেক্ষেত্রে তাদের কাজে লাগানো হলো না কেন।
শহরের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বর্ধমানে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদিত দুটি হলমার্কিং সেন্টার রয়েছে। যেখানে সোনার গুণগত মান যাচাই করে শংসাপত্র পাওয়া যায়। এছাড়াও সোনা যাচাই করার জন্য একাধিক টঞ্চ সেন্টার রয়েছে। তারাও সোনার মধ্যে উপস্থিত অন্যান্য পদার্থের পরিমান নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দিতে পারে। এমনকি বস্তুটি সোনা না হলে তাও রিপোর্ট আকারে দেবার ক্ষমতা রয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ কে শংসাপত্র প্রদানকারী সোনার দোকানের কর্ণধার জানিয়েছেন, কোনটা সোনা আর কোনটা সোনা নয় সেটা যেকোনো অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ সোনার কারবারি সহজেই বলে দিতে পারেন। তার জন্য আলাদা করে পরীক্ষার প্রয়োজন হয়না। তিনি জানিয়েছেন, হলমার্কিং সেন্টারের কাজ গহনা প্রস্তুত হওয়ার পর তা কতটা খাঁটি অর্থাৎ সেই গহনায় সোনার পরিমান কতো এবং খাদের ( তামা ও রুপোর) পরিমান কতো তা জানানো। সোনা নাহলে তাদের কোনো ভূমিকা নেই।
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হলুদ রঙের সোনার মতো দেখতে কোনো বস্তু উদ্ধার হলে প্রথমে কোনো সোনা ব্যবসায়ীর কাছেই সেটা যাচাই করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এক্ষেত্রে অনেক নিবন্ধিকৃত ব্যবসায়ী আইনি ঝামেলা পোয়াতে চায়না বলে স্বর্ণ ব্যবসায়ী একটি সংগঠনের পদাধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি এব্যাপারে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়ায় তাঁর কাছেই এই ধাতুটির পরীক্ষা করানো হয়েছে। পরে এই বস্তুটির আসল চরিত্র জানার জন্য বিশেষ পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে।
এদিকে বর্ধমান পৌরসভার সামনে কুড়িয়ে পাওয়া সোনার মতো দেখতে হলুদ রঙের ধাতুটি যে কাগজে মোড়ানো অবস্থায় ছিল সেখানে শ্রী জুয়েলার্স নামে একটি অলঙ্কারের দোকানের নাম থাকলেও তাতে কোনো ঠিকানা লেখা ছিল না। এমনকি এই ধাতুটি থেকে কি কি ধরণের গহনা তৈরি করতে হবে সে ব্যাপারেও নীল কালিতে সেই কাগজে লিখে রাখা ছিল। স্বাভাবিকভাবেই বর্ধমান শহরের একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী সামগ্রিক বিষয় নিয়েই ঘোর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
তাদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, কোথায় এই শ্রী জুয়েলার্স? সোনা বলে গহনা তৈরি করার জন্য কোথায় এই ধাতুটিকে পাঠানো হচ্ছিল? কার বা কাদের মাধ্যমে এই কাজ করা হচ্ছিল? যদি এই ধাতুটি সোনা না হয়ে থাকে তাহলে কি কেউ বা কারা শহরে সোনার কারবারের আড়ালে প্রতারণার ছক কষছে? এমনি একাধিক প্রশ্নের মধ্যেই বর্ধমান শহরের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। যদিও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।