ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারি: কোন নোটিশ না দিয়েই পূর্ব বর্ধমানের পাল্লা ১ নম্বর ক্যাম্পের বাসিন্দা তপন তরফদার নামে এক বাদাম ব্যবসায়ীর স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার পাল্লা শাখার একাউন্ট বন্ধ ( ফ্রিজ) করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। আর এই ঘটনায় চরম আর্থিক সংকটে পরে তপন বাবু ইতিমধ্যেই জেলাশাসক, জেলার পুলিশ সুপার থেকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে এই ঘটনার বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও কোন সদুত্তর না মেলায় শেষমেষ মঙ্গলবার ব্যাঙ্কের সামনেই প্ল্যাকার্ড নিয়ে এই সমস্যার বিহিত চেয়ে ধর্নায় বসে পড়েন। আর এই ঘটনায় কার্যত হৈ চৈ পরে যায় এলাকায়।
ধর্নারত তপন তরফদার জানিয়েছেন, তিনি সামান্য বাদাম বিক্রি করে রোজগার করেন। বিভিন্ন মেলায় স্টল করে বাদাম বিক্রি করেন। পুজোর আগে থেকেই পাল্লারোড এসবিআই শাখায় তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোন লেনদেন করতে পারছিলেন না তিনি। ফলে পুজোর সময় থেকেই চরম আর্থিক সংকটে ভুগছেন। কিছুদিন আগেও তিনি এই ব্যাঙ্কে ২১হজার টাকা জমা করেছেন। তারপরেও এটিএম থেকে টাকা তুলতে পারেননি তিনি। এই সমস্যার কথা ব্যাঙ্কে জানিয়েছিলেন তপন বাবু। কিন্তু সদুত্তর কিছু পাননি।
তপন তরফদার বলেন, ‘ব্যাঙ্কে অভিযোগ জানানোর পরে আমাকে বলা হয়েছিল নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্য হচ্ছে না। পরে চেষ্টা করতে। সাতদিন পরেও চেষ্টা করে হয়নি। সোমবার টাকার প্রয়োজনে আবারও গেলে তখনও টাকা ওঠেনি। ব্যাঙ্কে ১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা রয়েছে। আজ স্থানীয় একজনের সাহায্য ম্যানেজারের কাছে গেলে তিনি তখন বলেন আমেদাবাদের পুলিশ আমার ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে বলেই বন্ধ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু কেন তার কোন সদুত্তর তারা দেয়নি।’ ব্যাঙ্কের শাখায় কথা বলে জানা গিয়েছে আমেদাবাদ সাইবার ক্রাইম শাখা থেকেই স্টেট ব্যাঙ্কের হেড অফিসে তপন তরফদারের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে সেটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আমাদেবাদ সাইবার ক্রাইম শাখায় এই বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে সেখান থেকে জানানো হয়, ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে সাইবার প্রতরণার ঘটনার হদিস পাওয়া গেছে। অবৈধভাবে টাকা জমা পড়েছে। তাদের অনুসন্ধানে এমন তথ্য হাতে আসার পরেই ওই অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করা হয়েছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সাইবার ক্রাইমের কোন ঘটনা ঘটে থাকলে পুলিশের তদন্তের স্বার্থে এক্তিয়ার আছে ব্যবস্থা নেওয়ার। তবে সেক্ষেত্রে যে ব্যক্তিকে সন্দেহ করা হচ্ছে তাকে নোটিশ দিয়ে জানাতে হয় সেই বিষয়ে। পরবর্তীতে সেই ব্যক্তিকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করতে পারে পুলিশ। প্রয়োজনে গ্রেপ্তারও করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে নিয়ম মেনে সব কিছু করা হয়েছে কিনা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।
জেলা সাইবার ক্রাইম দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কোনো আর্থিক প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত বা জড়িত সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আগাম নোটিশ দিয়ে জানাতে হয়। ঘটনার বিষয়েও পরিষ্কার করে দিতে হয়। পরে সেই ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেপ্তারও করতে পারে পুলিশ। কিন্তু এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম না মেনেই ওই ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সেক্ষেত্রে আমেদাবাদ পুলিশ কেও এই ঘটনার কারণ দর্শাতে হবে। এদিকে তপন বাবু ব্যাংকের সামনে ধর্নায় বসে পড়ায় বিকেলের পর থেকে বেকাদায় পরে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এদিন সন্ধ্যায় ব্যাংকের আধিকারিকরা তপন বাবুর সঙ্গে কথা বলেন বলে জানা গেছে। পরে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিলে ধর্ণা তুলে নেন তাপস তরফদার।
তপন বাবু বলেন, ‘ বুধবার সকাল ১০ টা ১০ এর মধ্যে অ্যাকাউন্ট থেকে ফ্রিজ তোলার ব্যবস্থা করবে ব্যাংক ।’ এদিকে পুলিশি আদেশে অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার পর কিভাবে ব্যাংক সেই অ্যাকাউন্ট ঠিক করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে তাপস বাবুর মনে। এখন যেভাবেই হোক তার অ্যাকাউন্ট কখন চালু হবে সেই আশায় রয়েছেন তিনি।