দুর্নীতির পরিমাণ প্রায় ১৩২কোটি! এবার বীরভূম থেকে খন্ডঘোষ পুলিশের জালে বালির নকল চালান চক্রের কিংপিন

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বালি পাচারে সরকারি চালান কে জাল করে দীর্ঘদিন ধরে আন্তঃজেলা একটা চক্র লক্ষ লক্ষ টাকার বালি পাচার করে আসছিল। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষ থানার পুলিশ সেই চক্রের সঙ্গে যুক্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করে। অভিযুক্তদের আদালতের নির্দেশে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর এবার এই চক্রের অন্যতম কিংপিন বীরভূমের আল্লারাখা খান ওরফে রাকু কে গ্রেপ্তার করল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে টানা দুদিন বীরভূমের বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি চালানোর পর বোলপুর থানার কাশীপুরের বাসিন্দা রাকু কে লোহার বাঁধমুড়া এলাকা থেকে  রবিবার রাতে গ্রেপ্তার করে খন্ডঘোষ থানার পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগেই সরকারি চালান নকল করে অবৈধ বালির কারবার চালানোর অভিযোগে বর্ধমান শহরের লস্করদীঘি এলাকার বাসিন্দা শেখ মনোজ ওরফে সরাফউদ্দিন সহ লায়েক আজাহারউদ্দিন, মীর আবু সিদ্দিক ও শেখ মনিরুল হোসেন এই চারজন কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারে পুলিশ। আর তারপরেই এই নকল চালান চক্রের মাস্টারমাইন্ড আল্লারাখা ওরফে রাকু কে  রবিবার গ্রেপ্তার করা হয়। এই চক্রের সঙ্গে অন্যান্য জেলায় আরো কারা জড়িত সেব্যাপারে ইতিমধ্যেই জোরদার তদন্ত শুরু করেছে পূর্ব বর্ধমান পুলিশ।

জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বলেন, ‘ বালির সরকারি চালান নকল করে যে চক্র সক্রিয় ভাবে কাজ করছিল তাদের কাউকেই ছেড়ে দেওয়া হবে না। ইতিমধ্যেই আমরা এই চক্রের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছি। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের সঙ্গে কোথায় কারা জড়িত আছে তার হদিস পাওয়ার চেষ্টা চলছে। খুব শীঘ্রই বাকিদের গ্রেপ্তার করা হবে।’ এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বোলপুর থেকে ধৃত আল্লারাখার কাছ থেকেই বর্ধমানের শেখ মনোজ জানতে পেরেছিল কিভাবে সরকারি ওয়েবসাইট কে নকল করে চালানের কিউআর কোড বদলে দিয়ে চালানে গাড়ির নম্বর, তারিখ, সময় পাল্টে ফেলা যায়। শেখ মনোজ তার বাকি শাকরেদদের সেই পদ্ধতি শিখিয়ে রীতিমত রমরমিয়ে চালাচ্ছিল নকল চালানে বালির অবৈধ ব্যবসা।

পুলিশ জানতে পেরেছে, গাড়ি প্রতি নুন্যতম ৫ হাজার টাকা সরকারের রাজস্ব খাতে লোকসান হচ্ছিল এর ফলে। এখনও অবধি পাওয়া নকল চালানের হিসেব অনুযায়ী যার পরিমান প্রায় একশো বত্রিশ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমান  রাজস্ব ফাঁকির টাকা কোথায় গেল তারও হদিশ খুঁজতে চাইছে পুলিশ। পাশাপাশি এই চক্রের সঙ্গে আরো কে বা কারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত ছিল, তারও শিকড়ে পৌঁছতে চাইছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ।

এদিকে সূত্রের খবর, আল্লারাখার গ্রেপ্তারের পরেই তাকে পুলিশের জাল থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা বহু চেষ্টা করেছে। পুলিশের কাছে একাধিক ফরমায়েশি ফোন এসেছে! আর এতেই পুলিশ একপ্রকার নিশ্চিত হয়েছে এই চক্রের শিকড় অনেক গভীরে। সূত্রের খবর, শাসক দলের এক নেতা লালু খানের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এই আল্লারাখা। তারই সাহায্যেই বালির ব্যবসায় এসেছে এই আল্লারাখা। পুলিশ জানতে পেরেছে, পূর্ব বর্ধমান সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলার কয়েকটি থানার পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গেও নাকি এই নকল চালান চক্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা রীতিমতন যোগাযোগ রেখেই কাজ করত। এই চক্রের সঙ্গে বর্ধমান ছাড়াও আউশগ্রাম, বীরভুম ও পশ্চিম বর্ধমানের কয়েকজনের যোগ রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তাদেরও সন্ধান শুরু হয়েছে তল্লাশি বলে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিস সূত্রে জানতে পারা গেছে। 

আরো পড়ুন