ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান শহরে বলাইবাহুল্য কোভিডের তৃতীয় ঢেউ একপ্রকার আছড়ে পড়েছে। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলেছে সংক্রমিতের সংখ্যা। শনিবার ধরে গত আটদিনে শুধু বর্ধমান পুর এলাকায় করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৬৫৫জন। আর এই বেলাগাম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় জেলা প্রশাসন বৈঠক করে শনিবার থেকে শহরের দোকান,বাজার খোলা ও বন্ধের নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। লক্ষ্য বেলাগাম করোনা সংক্রমণের শিকল কে ভেঙে ফেলা। পাশপাশি রাস্তাঘাটে মানুষের ভিড় কমিয়ে আনা।
কিন্তু শহরের দোকান, বাজারের উপর নির্দেশিকা জারি হলেও বর্ধমান শহরের উল্লাস থেকে নবাবহাট পর্যন্ত টাউন সার্ভিস বাসের ভিড় নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন একাধিক বাস যাত্রী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানিয়েছেন, সরকারি নির্দেশ অমান্য করেই বহু বাসে যাত্রী তোলা হচ্ছে। এমনকি বাসের ভিতর মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব বিধি। নির্দিষ্ট আসন সংখ্যার বাইরেও যাত্রী পরিবহন করছে টাউন সার্ভিস বাসগুলি। ভিড়ের কারণে অনেককেই বাসের ভিতর গন্তব্য পর্যন্ত দাঁড়িয়েই যেতে হচ্ছে। এরই মধ্যে মাস্ক ছাড়াই এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাতায়াত করছেন যাত্রীরা অবাধে।
সেজায়গায় শনিবারই শহরের রাস্তায় দেখা গেছে মাস্ক পরে না বেরোনোর অপরাধে পুলিশ পথচারীকে কান ধরে ওঠবোস করাচ্ছে। যাত্রীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি পুলিশ প্রশাসনের শহরের ভিতর যাতায়াতকারী টাউন সার্ভিস বাসগুলির এই সমস্ত অনিয়ম নজরে আসছে না। তাঁরা জানিয়েছেন, অবিলম্বে কোভিড বিধি মেনে বাসগুলি যাতে যাত্রী পরিবহন করে সেব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ করুক পুলিশ প্রশাসন। অথচ সরকারীভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পরিবহণের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করতে পারবে বাস সহ অন্যান্য পরিবহণের গাড়ি। কিন্তু সেই নির্দেশও বর্ধমানে না মেনেই চলছে টাউন সার্ভিস বাস।
ফলে সংক্রমণ আরও ছড়ানোর আশংকা করছেন যাত্রীরাই। শুধু তাইই নয়, এমনও দেখা গেছে শিশুদের নিয়ে মা, বাবারা বাসে যাতায়াত করছেন কোনো মাস্ক ছাড়াই। ফলে আতংক বাড়ছে। অথচ করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন আছড়ে পড়েছিল তখন এই সমস্ত বাসগুলিতেই পলিথিনের সিট দিয়ে আড়াল করে সামাজিক দূরত্ববিধিকে মানার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু করোনার এই তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর সংক্রমণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও সেই সচেতনতার চুড়ান্ত অভাব দেখা যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে পুলিশ মাস্ক না পড়ার জন্য জরিমানা করছে,কিংবা কান ধরে ওঠবোস করিয়ে নাগরিকদের সবক শেখাচ্ছে সেখানে কিভাবে উল্লাস থেকে নবাবহাট, কিংবা পূর্ত ভবন থেকে নবাবহাট পর্যন্ত টাউন সার্ভিস বাসগুলিতে এইভাবে করোনাবিধিকে তোয়াক্কা না করে চলছে যাত্রী পরিবহণ? পুলিশের নজরদারী কোথায় – এই প্রশ্নও উঠেছে।
যদিও এব্যাপারে মিনি বাস ওনার্স সমিতির সম্পাদক বাবলু শর্মা জানিয়েছেন, বর্তমানে বর্ধমান শহরে বৈধভাবে ৬০টি মিনিবাস চলছে। অবৈধভাবে চলছে আরও প্রায় ২০টি বাস। পরিবহন দপ্তরের নিয়ম ভেঙেই বাইরের গ্রাম থেকে বাস চলছে শহর দিয়ে। তিনি জানিয়েছেন, সমিতিগতভাবে তাঁরা সমস্ত বাসকর্মীদের মাস্ক পরাকে বাধ্যতামূলক করেছেন। স্যানিটাইজার ব্যবহার করার নির্দেশও দিয়েছেন। দিনের শেষে প্রতিটি বাসকে তাঁরা স্যানিটাইজও করছেন।
কিন্তু ৫০ শতাংশ যাত্রী পরিবহণের বিষয়টি তাঁরা কিছুতেই মানতে পারছেন না। কারণ এই ৫০ শতাংশ যাত্রীর বিষয়টি কিভাবে মানা হবে তা পরিষ্কার নয়। গোটা বিষয়টিকেই তিনি যাত্রীদের ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়ে বলেছেন, বর্ধমান শহরে বর্তমানে সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত টাউন সার্ভিস বাস চলছে। ফলে গড়ে প্রতি ৩মিনিট অন্তর বাস রয়েছে। যাত্রীরা যদি সচেতন হন তাহলেই এটা মানা সম্ভব। তাঁরা ইচ্ছা করলে ভিড় বাসে না চেপে পরের বাসে চাপতে পারেন।