ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারি: তৃণমূলের মেমারি শহর কমিটি নিয়ে দলের অন্তর্কলহ প্রকাশ্যে চলে এল। ‘যে ভাবে শহর কমিটি তৈরি হয়েছে, তা দলের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়’ এইইভাবেই অপমানিত ও মর্মাহত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিধায়কের মাধ্যমে দলের জেলা সভাপতি কে নতুন কমিটি থেকে পদত্যাগ করতে চেয়ে চিঠি পাঠালেন বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা তথা মেমারি শহর কমিটির প্রাক্তন সভাপতি অচিন্ত্য চ্যাটার্জী।তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসেই এই ঘটনায় আলোড়ন পড়েছে। মেমারি শহর তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্নের অভিজ্ঞ নেতা দক্ষ সংগঠক ও প্রাক্তন শহর সভাপতির এই চিঠি ঘিরেই ফের শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানতোর।
গত ২৯ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার কাটোয়ায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলের পূর্ব বর্ধমান জেলার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় অন্যান্য ব্লক ও শহরের সাথে সাথে মেমারি শহর তৃণমূল কংগ্রেসের কমিটি ঘোষণা করেন। পূর্ব ঘোষিত শহর সভাপতি স্বপন ঘোষাল ও সহ সভাপতি আশীষ দোস্তিদার ছাড়াও এই কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের পদে জায়গা দিয়েছিলেন প্রাক্তণ শহর সভাপতি ও বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা অচিন্ত্য চট্টোপাধ্যায় কে। আর এরপরই বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
অচিন্ত্য চ্যাটার্জী এই ঘটনায় বলেন, ‘ তিনি অপমানিত ও মর্মাহত। আমি মেমারি বিধানসভার বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্যের মাধ্যমে পূর্ব বর্ধমান জেলার সভাপতিকে চিঠি পাঠিয়েছি। কোন আলোচনা না করেই চারজন সাধারণ সম্পাদকের সাথে তার নামটি কেন রাখা হয়েছে জানতে চেয়ে। আমি ১৯৯৮ সাল থেকে ব্লক যুব প্রদেশ কমিটির সদস্য, জেলা সম্পাদক, ব্লক ও মেমারি শহর তৃণমূলের সভাপতি, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট হিসাবে দলের দায়িত্ব পালন করেছি। এরপরেও শহরের সাধারণ সম্পাদক তাও আবার চার জনের সাথে আমার নাম রাখা হয়েছে কমিটিতে। আমি অত্যন্ত অপমানিত ও মর্মাহত। এই কমিটি যে ভাবে তৈরি হয়েছে, তা দলের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়। তাই আমি ওই পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে জেলা সভাপতির কাছে আবেদন রেখেছি।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, পা ভাঙার কারণে সরাসরি জেলা সভাপতির কাছে তিনি যেতে পারলেন না, তাই বিধায়কের মাধ্যমে চিঠিতে পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন। এছাড়াও তিনি বিধায়কের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সুপারিশ সম্বলিত শহর কমিটির প্যাডে বিধায়কের সাক্ষর আছে দেখলাম, বিধায়কও এ ব্যপারে আমার সাথে কোন আলোচনা করেননি।
মেমারি বিধানসভার বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, ‘সুপারিশ পত্রে আমার সাক্ষর আছে এটা ঠিকই কিন্তু আমি বর্তমান শহর সভাপতিকে বলেছিলাম যে উনাকে যথাযোগ্য মর্যাদায় উপেদষ্টা কমিটিতে রেখে উনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তার পরামর্শ মতো সংগঠনকে আরও মজবুত করার জন্য। উনার ক্ষোভ স্বাভাবিক, তিনি এব্যপারে জেলা সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করবেন।’
মেমারি শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি স্বপন ঘোষাল জানান, সাধারণ সম্পাদকের পরে আর কোন পদ আছে কিনা আমার জানা নেই, যথাযোগ্য সম্মান দিয়েই বিধায়কের সাথে আলোচনার পরই উনাকে এই পদ দেওয়া হয়েছে। আর দলীয় নির্দেশে শহর কমিটিতে ৪জন কে সাধারণ সম্পাদক রাখতে বলা হয়েছে। এব্যপারে আমার কিছু বলার নেই, দল যা সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই শিরোধার্য।
অন্যদিকে “কমিটি যে ভাবে তৈরি হয়েছে, তা দলের পক্ষে মঙ্গলজনক নয়” অচিন্ত্য চ্যাটার্জীর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মেমারি শহরের আর এক প্রাক্তণ শহর সভাপতি ও মেমারি পৌরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান স্বপন বিষয়ী জানান, তৃণমূলের জন্মলগ্নের সময় অচিন্ত্যবাবুর সাথে এক মোটরসাইকেলে চেপে রাজনীতি করেছেন মেমারির বুকে। তিনি দীর্ঘদিনের লড়াকু নেতা ও দক্ষ সংগঠক তিনি নিশ্চয়ই কিছু ভালো বুঝেছেন তাই এই মন্তব্য করেছেন। তবে পদত্যাগের ব্যপারটা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত ব্যপার।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে আরও একবার প্রকাশ্যে চলে এলো মেমারি শহরে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তর্কলহের কথা। স্বপন ঘোষাল ও স্বপন বিষয়ীর অনুগামীরা প্রায়ই একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে, বিধানসভা নির্বাচনের সময় তারা পাঁচিলের উপর বসে রাজনীতি করেছেন, দলকে হারানোর জন্য বিরোধী দলের হয়ে কাজ করেছেন। আবার অন্যদিকে গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় দক্ষ সংগঠক ও বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে যেভাবে অচিন্ত্য চ্যাটার্জী সমস্ত নেতাদের মনোমালিন্য দূর করে একসাথে কাজ করে দলের প্রার্থী মধুসূদন ভট্টাচার্যকে জিতিয়েছিলেন তা কোন তৃণমূল নেতা কর্মীরা অস্বীকার করতে পারবেন না।
শুধু তাই নয়, শহর সভাপতি থাকাকালীন মেমারি পৌরসভায় নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি নিয়েও সরব হয়েছিলেন অচিন্ত্য বাবু। আর তারপরই তাকে শহর সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এবং নতুন সভাপতি হিসেবে স্বপন ঘোষালকে নিযুক্ত করা হয়। স্বাভাবিকভাবেই অপমানিত ও মর্মাহত হয়ে তিনি আজ তার দীর্ঘদিনের ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বলেই ধারনা দলেরই একাংশের।