ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, কলকাতা: স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা বাবদ রাজ্য সরকারের কাছে বকেয়া পাওনা সঠিকভাবে ও সময়ে পাচ্ছে না বহু নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতাল বলে কিছুদিন আগেও অভিযোগ উঠে আসছিল। বর্তমানে সেই সমস্যার অনেকটাই সমাধান করে প্রতি মাসে দুবার বিল পেমেন্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। আর এরই মাঝে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এবার স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী ভর্তির বিষয়ে একগুচ্ছ নির্দেশাবলী জারি করে ফের নতুন করে সতর্ক করে দিলো এই সমস্ত নার্সিংহোম থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষকে। কার্যত স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে অনিয়ম বন্ধ করতেই এই কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর(West Bengal State Health Department) বলে জানা গেছে। এই বিষয়ে নির্দেশাবলী প্রতিটি জেলা প্রশাসনের কাছেও ইতিমধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
এবার থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে যারা বেসরকারি হাসপাতালে বা নার্সিংহোমে(Private Hospitals and Nurshing Homes) ভর্তি হবেন এবং Operation করাবেন তাঁদের ক্ষেত্রে Operation শুরু এবং শেষের সময় নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। কোন চিকিত্সক Operation করেছেন তাঁর নাম নথিভুক্ত করতে হবে। চিকিত্সকদের চেকিং সময়ও রেজিস্টারে উল্লেখ থাকতে হবে। রোগীদের মোবাইল নম্বর নথিতে দিতে হবে। প্রয়োজনে একাধিক নম্বর দিতে হবে। বিল নিয়ে কোনও সন্দেহ হলে স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা সরাসরি রোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন। এই সব না করলে ওই Operation’র জন্য সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের বিল আটকে দেওয়া হবে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের চিকিত্সা সংক্রান্ত বিষয়টি দেখার জন্য রাজ্যের পাশাপাশি এবার থেকে জেলাতেও টিম থাকবে। নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া হাসপাতাল বা নার্সিংহোম রোগীদের ফিরিয়ে দিলে মোটা টাকা জরিমানা করা হবে ওই সব হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে। এই নিয়ম আগেও চালু ছিল। কিন্তু এতদিন কড়াকড়ি করা হতো না। কিন্তু এবার থেকে অভিযোগ পাওয়া গেলে তা তদন্ত করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশিকায় আরো জানানো হয়েছে এবার থেকে চিকিত্সকদের ‘ব্লকিং’ এবং ‘ডিসচার্জ’ সার্টিফিকেটে সই থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রোগীদের কী কী ইনজেকশন দেওয়া হচ্ছে সেটাও নথিতে উল্লেখ করতে হবে। চিকিত্সা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে রোগীদের এসএমএস পাঠিয়ে সতর্ক করতে হবে। কোনও কোনও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ অপরেশন না করেই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থেকে টাকা হাতিয়েছে। এমনকি স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা না করেই মানুষ কে ভুল বুঝিয়ে অবৈধভাবে সেই কার্ড ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কিছু নার্সিংহোম। বর্ধমানের একটি নার্সিং হোমের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগের বিষয় সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা পড়েছে। এসব কারণেই কড়া পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য বলেই স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের দাবি, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে রোগীদের ভর্তি না নিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া অপরাধ। এই ধরনের ঘটনা কখনই বরদাস্ত করা হবে না। প্যাকেজের বাইরে অতিরিক্ত বিল পাঠানো যাবে না বলেও স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে রাজ্য সরকারের নয়া নির্দেশিকা কে স্বাগত জানিয়েই পূর্ব বর্ধমানের একাধিক নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, খোদ রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তরের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তাদের একাংশের খামখেয়ালী সিদ্ধান্তের ফলে অনেক নার্সিংহোম ও হসপিটাল কর্তৃপক্ষ বিনা কারণে আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে এমন তথ্য উঠে এসেছে যে খোদ স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে পর্যবেক্ষণ করে যে নার্সিংহোম কে ‘B’ ক্যাটাগরির তকমা দিয়েছে, কয়েকবছর পর সেই স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফ থেকে সেই অনুমোদন বাতিল করার পাশাপাশি লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, যে দপ্তর একটি নার্সিংহোম পর্যবেক্ষণ করে অনুমোদন দিলো, সেই দপ্তরেরই আবার কয়েকবছর পর অনুমোদন বাতিল করে দিলো – এটা কিভাবে সম্ভব!
এমন অভিযোগও উঠে এসেছে, বহু এমন দক্ষ চিকিৎসক আছেন যারা খুব কম সময়ে একাধিক রোগীর অপারেশন সফল ভাবে শেষ করে অন্য নার্সিংহোমে চলে যান। সেখানেও একাধিক অস্ত্রোপচারের কাজ তুলনামূলক কম সময়ে প্রতিপন্ন করেন। যেখানে অনেক চিকিৎসক সেই একই অস্ত্রোপচারের জন্য অনেক বেশি সময় ব্যয় করেন। অভিযোগ, এক্ষেত্রেও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ভর্তি রোগীর বিল দপ্তরে পাঠানোর পর সংশ্লিষ্ট নার্সিংহোম বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নানান প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। শেষমেষ অনেক সময়ই এই বিষয়টি স্বাস্থ্যসাথী দপ্তরের কর্তব্যরত আধিকারিকরা বুঝতে না পারার কারণে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিলে কাটছাঁট করে দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন কারণে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে রোগী পরিষেবা দিয়েও দপ্তরের এক শ্রেণীর আধিকারিকদের সঠিক পর্যবেক্ষণের অভাবে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে বহু নার্সিংহোম বা বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কে বলেই জানা গেছে।