সরকারী নির্দেশ না মেনে জেলাজুড়ে জমিতে নাড়া পোড়ানোর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের

Souris  Dey

Souris Dey

বিজ্ঞাপন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: একদিকে চলছে গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়েই আমন ধান কাটার কাজ। পাশাপাশি জমি থেকে ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সেই জমিতে আলু চাষেরও কাজ শুরু হয়েছে। আর এরই মাঝে গোটা জেলা জুড়েই জমিতে নাড়া পোড়ানো নিয়ে শুরু হয়ে গেল হৈ চৈ। বহু চাষীই সরকারী নির্দেশ না মেনে পুরনো ধ্যান ধারণার বশবর্তী হয়ে জমিতে নাড়া পোড়াচ্ছেন। আর তাই গত কয়েকবছর ধরে জেলা কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে লাগাতার এই প্রচারের পাশাপাশি চলতি সময়ে সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকেও কড়া হাতে এই নাড়া পোড়ানো আটকানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর সেই নির্দেশ পেয়েই এবার পঞ্চায়েতের কর্তারাও নেমে পড়েছেন মাঠে। ইতিমধ্যেই মাঠে মাঠে ঘুরতে শুরু করে দিয়েছেন তাঁরা। কোথাও কোনো নাড়া পোড়ানোর খবর পেলেই তাঁরা গিয়ে চাষীদের নাড়া পোড়াতে নিষেধ করছেন।

কার্যত জোড়হাত করেই তাঁরা চাষীদের পাশাপাশি জমির শ্রমিকদের কাছেও নাড়া না পোড়ানোর জন্য আবেদন করছেন। সম্প্রতি বর্ধমান ২নং ব্লকের নান্দড়া এলাকায় এই ধরণের নাড়া পোড়ানোর খবর পেয়েই জমিতে ছুটে যান বৈকুণ্ঠপুর ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জয়দেব ব্যানার্জ্জী। হাত জোড় করেই তিনি চাষী ও শ্রমিকদের কাছে নাড়া পোড়ানো বন্ধ করার আবেদন জানান। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল জানিয়েছেন, গত কয়েকবছর ধরেই লাগাতার জমিতে নাড়া পোড়ানোর কুফল চাষীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। তাঁদের বোঝানো হচ্ছে জমিতে আগুন দেওয়া মানে নিজের গায়েই আগুন দেওয়ার সমান কাজ। এটা একটা সামাজিক অপরাধও। কারণ নাড়া পোড়ানোর জন্য বায়ুমণ্ডলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও বাড়ছে।

 বিগত কয়েকবছরে এই নাড়া পোড়ানোর ঘটনা বাড়তে থাকায় তাঁরা সমস্ত জনপ্রতিনিধিদের এব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বলেছেন। উল্লেখ্য, জেলা কৃষি দপ্তর থেকে জানানো হচ্ছে, জমিতে নাড়া পোড়ানোর ফলে জমির উর্বরতা শক্তি ক্রমশ নষ্ট হয়ে যায়। জমিতে থাকা বন্ধু পোকাও বিনষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে জমির উপরিভাগ থেকে প্রায় ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গতবছর থেকেই দপ্তরের আধিকারিকরা যন্ত্র নিয়ে গিয়ে মাঠেই হাতে কলমে চাষিদের দেখাতেও শুরু করেছেন ধান কাটার পর অবশিষ্টাংশ পড়ে থাকলে সেটা না পুড়িয়ে কিভাবে পরিষ্কার করা যায়। দপ্তর সূত্রেই জানা গেছে, এই পদ্ধতিটির নাম প্যাডি স্ট্র ম্যানেজমেন্ট। এর জন্য প্যাডি মালচার যন্ত্রের ব্যবহার করে কাটা ধানের অবশিষ্টাংশ যে সহজেই মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া যায়। এর ফলে যেমন একদিকে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে এবং পরিবেশ দূষণও কমবে। কৃষি দপ্তরের উদ্যোগে এই ধরণের হাতে কলমে চাষীদের শিক্ষা দেওয়ায় নাড়া পোড়ানোর প্রবণতা কমবে বলেই মনে করা হচ্ছে। 

মহম্মদ ইসমাইল জানিয়েছেন, তাঁরা চাষীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন, নাড়া না পুড়িয়ে বিশেষ ধরণের মালচার মেশিনের সাহায্যে ওই নাড়াগুলিকে টুকরো করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া যেতে পারে। অথবা বিশেষ ধরণের একটি ওষুধ প্রয়োগ করে ওই নাড়াগুলিকে দ্রুত পচিয়ে দিয়ে তা জমিতেই সার হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই জেলার সমস্ত বিডিও, কৃষি কর্মাধ্যক্ষদের নিয়ে এব্যাপার বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিভাবে এই নাড়া পোড়ানোকে ঠেকানো যাবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। একইসঙ্গে সরকারী এই নির্দেশ না মানলে তাঁদের বিরুদ্ধে কি ধরণের ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে ব্যাপারেও বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

আরো পড়ুন