জীবনকে বাজি রেখেই প্রতিদিন বিষধরের মুখোমুখি হয় অরণ্যসাথী বাপন

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর হাতছানি কে উপেক্ষা করে কার্যত জীবনের ঝুঁকি নিয়েই নিজের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন বর্ধমান বনবিভাগের অরণ্যসাথী কর্মী হারাধন বৈরাগী। বর্ধমান শহর কিম্বা সংলগ্ন এলাকায় বিষধরের দেখা পাওয়া গেলেই ডাক পড়ে হারাধন ওরফে বাপনের। গত প্রায় এক বছর ধরে গড়ে প্রতি মাসে কমবেশী ২৫-৩০টি বিষধর সাপ ধরেছেন বনদপ্তরের এই কর্মী। সেই তালিকায় যেমন রয়েছে গোখরো, চন্দ্রবোড়া তেমনি কেউটে শাখামুটির মতো সাপও ধরতে হয়েছে। বাপন জানিয়েছেন, ১৯৯৪ সালে প্রথম অস্থায়ী কর্মী হিসাবে বর্ধমান বনদপ্তরে কাজে ঢোকেন তিনি। ২০১৪ সালে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে তিনি অরণ্যসাথী পদে যুক্ত হন। বর্তমানে বর্ধমান বন দপ্তরের হেডকোয়ার্টারে কার্যত তিনিই একমাত্র দক্ষ সাপ ধরার লোক। 

বিজ্ঞাপন

হারাধনবাবু জানিয়েছেন, গড়ে প্রতি মাসে ২৫-৩০টি বিষধর সাপ ধরতে হয় তাঁকে। বর্ষাকালে এই সংখ্যাটা আরও বাড়ে। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে যেকোনো বন্যপ্রাণী হত্যা করাই অপরাধ এই প্রচার সাধারণ মানুষের কাছে ভাল সাড়া দিয়েছে। তাই আগে যেমন সাপ দেখলেই মেরে ফেলার প্রবণতা দেখা দিত। এখন তা হয় না। এখন তাঁদের খবর দেওয়া হয়। আর খবর দিলেই তিনি তাঁর দুজন সঙ্গীকে নিয়ে ছোটেন সাপ ধরতে। এই সাপ ধরতে যাওয়ার পর ভয়ংকর সব অভিজ্ঞতার কোথাও জানিয়েছেন বাপনবাবু। 

সম্প্রতি বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার পোলেমপুরের একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সাপ ঢোকে। বিষধর গোখরো। খবর পেয়ে তিনি দুজন সঙ্গীকে নিয়ে সেখানে পৌঁছান। হারাধনবাবু জানান, তিনি যখন সাপ ধরতে ব্যস্ত সেই সময় ওই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ছাদে ভিড় করে থাকা এলাকার লোকেদের মধ্যে দুজন আচমকাই লাফ মারে তাঁদের দুই সঙ্গীর ঘাড়ে। ওই দুজন সঙ্গী মারাত্মক জখম হন। বাপন জানিয়েছেন, সেই সময় তিনি দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন। সঙ্গীদের বাঁচাবেন নাকি সাপ ধরবেন নাকি নিজেকে বাঁচাবেন – কি করবেন বুঝে উঠতে সময় লেগেছে। সে এক মারাত্মক অভিজ্ঞতা। 

আরও একটি ঘটনার কথা জানিয়েছেন বাপন বৈরাগী, সেটিও খণ্ডঘোষেরই একটি রাইসমিলে। সেখানে গিয়ে দেখেন প্রকাণ্ড একটি কেউটে সাপ ডিম পেড়ে বসে আছে। তাকে ধরতে গিয়ে সত্যিই তাঁর ভয়ংকর ভয় হয়েছিল। কারণ একে তো কেউটে। এক ছোবলেই ছবি, তার উপর আবার ডিম পাহারা দিচ্ছে। এই সময় এরা আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত সেটিকে উদ্ধার করার অভিজ্ঞতাও ছিল সত্যি রোমাঞ্চকর। তিনি জানিয়েছেন, বনদপ্তরের নিয়মানুযায়ী সাপ ধরার পর সেগুলিকে আউশগ্রাম সহ বনদপ্তরের অধীন ঘন জঙ্গলে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসেন তিনি। 

বাপনবাবু জানিয়েছেন, এই সাপ ধরতে যাবার বিষয়টি তাঁর চাকরী হলেও বাড়ির লোকজন সত্যিই উৎকণ্ঠায় থাকে, ভয়ে থাকে। অনেক সময়ই তাই বাড়িতে জানিয়েই কাজে ছুটে যেতে হয়। তিনি জানিয়েছেন, সরকারীভাবে তাঁদের সাপ ধরার জন্য ক্যাচার, হুক, সার্চ লাইট, গামবুট দেওয়া হয়। অনেক পরিবেশপ্রেমীই ক্যাচার দিয়ে সাপ ধরার সমালোচনা করেন, কিন্তু দপ্তর থেকে তাঁদের যে নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁরা সেটাই পালন করেন। সর্বোপরি দপ্তর থেকে তাঁদের এও জানিয়ে রাখা হয়েছে, পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝেই কাজ করার জন্য। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নয়। 

তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে তাঁদের খণ্ডঘোষ ছাড়াও বর্ধমান শহরের আশপাশের অনেক গ্রামেই যেতে হয় এই সাপ ধরতে। উল্লেখ্য, বর্তমানে বর্ধমান ডিভিশনে অরণ্যসাথী কর্মী রয়েছেন প্রায় ১১০ জন এবং বর্ধমান হেডকোয়ার্টারে রয়েছেন ১৫জন। কিন্তু সাপ ধরতে ডাক পড়ে দক্ষ হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলা হারাধন বৈরাগীর। সাপের পাশাপাশি তিনি হনুমান, বাঘরোল, শিয়ালও ধরেছেন। কিন্তু গত কয়েকবছরে সাপের উপদ্রব যেভাবে বেড়েছে তা নিয়ে বনদপ্তরের পাশাপাশি তিনিও চিন্তিত বলেই জানিয়েছেন।

আরো পড়ুন