প্রশাসনের নির্দেশের পরেও খোলা হয়নি নদী গর্ভের অস্থায়ী কাঠের সেতু, চলছে দেদার বালি উত্তোলন, বেপরোয়া বালি মাফিয়ারা

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বর্ষা ইতিমধ্যেই রাজ্যে প্রবেশ করেছে। যদিও পূর্ব বর্ধমান জেলায় নদ নদী থেকে বর্ষাকালে বালি উত্তোলন বন্ধের নির্দেশিকা এখনও জারি হয়নি। গত বছর এই নির্দেশিকা জারি হয়েছিল ১৭জুন। তবে দামোদর ক্যানেল ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এর দপ্তর থেকে ১৩জুন একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সমস্ত বৈধ বালি ঘাট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নদী থেকে বালি বহনের জন্য তৈরি করা অস্থায়ী কাঠের সেতু গুলোকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য। পাশাপাশি নদী বাঁধ দিয়ে কোনো বালি বোঝাই গাড়ি যাতায়াত করবে না। নির্দেশে বলা হয়েছে, এই সমস্ত নির্দেশ লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এমনকি নির্দেশ না মানা হলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, ভারত সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের বালি মাইনিং ম্যানেজমেন্ট গাইডলাইনস, ২০১৬ অনুসারে এবং ইসির শর্ত অনুযায়ী বর্ষাকালে নদী থেকে বালি উত্তোলন সম্পুর্ন নিষিদ্ধ। সাধারণত এই নির্দেশ জুন মাসের ১৫তারিখ থেকে কার্যকর হয়ে থাকে। তবে বর্ষার গতি প্রকৃতি, নদীর জলস্তর ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করে প্রতি বছর জেলা প্রশাসন নদী থেকে বালি উত্তোলন সংক্রান্ত বন্ধের এবং খোলা রাখার নির্দেশ কার্যকর করে। জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা বলেন,” আগামী সপ্তাহের মধ্যেই আমরা সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বর্ষাকালীন নদ নদী থেকে বালি উত্তোলন বন্ধের নির্দেশিকা জারি করতে পারি।”

বর্ষার আগে প্রতিবছরের মতন এবারেও দামোদর সহ অনান্য নদীগর্ভ থেকে কোন অবস্থাতেই বালি তুলে গাড়ি যাতায়াত করতে পারবে না বলে ইতিমধ্যেই নির্দেশিকা জারি করেছে সেচ দপ্তর। অভিযোগ ১৩ তারিখে সেচ দপ্তর নির্দেশ দেবার পরেও অবাধেই চলছে জেলা জুড়ে নদী থেকে বালি তোলার কাজ। অস্থায়ীভাবে তৈরী করা কাঠের সেতু গুলিও এখনও খুলে ফেলা হয়নি। আগের অবস্থায় রয়েছে। বালির কারবারিদের সাফ কথা, যতক্ষন না নদীতে জল বাড়ছে, গাড়ি নামানোর মতো অবস্থা থাকবে ততদিন বালি তুলব। দামোদরের বড়শুল বালি ঘাটের এক কর্মী সনাতন সাহা বলেন, ‘গাড়ি যখন নদীতে নামতে পারছে তখন আমাদের কাছে বর্ষা আসেনি। তাই এসব লিখেও আপনারা কিছু করতে পারবেন না। যেমনভাবে বালি তুলছি সেভাবেই তোলার জন্য ঘাট মালিক আমাদের বলে দিয়েছে। পুলিশ থেকে সরকারি দপ্তর সব সেটিং করাই আছে।’ 

জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে জেলায় বৈধ বালি খাদানের সংখ্যা প্রায় ২০৮ টি। যদিও এর বাইরে তিনশোর বেশী অবৈধ খাদান রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ছ’চাকার লরিতে সরকারি নিয়মে ২৪০ থেকে তিনশো  সিএফটি বালি নিয়ে যেতে পারে। বর্তমানে বালি খাদানেই এই বালির দাম পড়ছে সাড়ে বারো হাজার টাকা। এই বালি কলকাতা পৌঁছানোর সময়ে দাম হয় ২৯ হাজার পাঁচশো। এদিকে বর্ষার আগে থেকে শুরু হয়েছে দেদার বালি স্টক করার কাজ। কোনো কোনো এলাকায় রীতিমত বালির পাহাড় তৈরী হয়েছে। ঘাট বন্ধের নির্দেশ জারি হলেই সেই স্টক বালি এরপরে সরবরাহ হবে। 

প্রসঙ্গত এখনই বালির দামে রীতিমত নাজেহাল অবস্থা। কিছুদিন আগেও এক ট্রাক্টর ফিলিং বালি ১১০০ থেকে ১২০০টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল। সেই বালির দাম এখনই বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। অন্যদিকে মোটা বালি এক ট্রাক্টর পাওয়া যাচ্ছিল ১৫০০ থেকে ২০০০টাকায়। সেই দাম বর্তমানে ৩০০০হাজার ছাড়িয়েছে। এরপর ফিলিং ও মোটা বালির দাম আকাশ ছোঁয়া হবে বলেই একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন। উল্লেখ্য গত বছর মোটা বালি এক ট্রাক্টর খোলা বাজারে বিক্রি হয়েছিল ৪হাজার থেকে সাড়ে ৪হাজার টাকায়।

ইদিলপুরের এক বালি ব্যবসায়ী বাবলু বিশ্বাস বলেন, ‘এত টাকা খরচ করে আমরা বালি মজুত করেছি। এর দাম তো আর সরকার ঠিক করবে না। ধরে রাখুন তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো সিফটি বালির দাম পড়বে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। কলকাতায় এই বালি বিক্রী হবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়।’ দাম এত বাড়ার কারণ হিসেবে বাবলু বিশ্বাসের কথায়, ‘স্ট্যাগ করে রাখা বালি প্রথমত শুকনো থাকে। নদী থেকে তোলার পর জল ঝড়ে যায়। ফলে ৫০০ সিএফটি বালির পরিমান একই থাকে। ফলে খদ্দের ভিজে বালির থেকে পরিমাণে বেশি ডেলিভারি পায়। স্বাভাবিকভাবেই দামও বাড়ে বালির। এছাড়াও বালি স্টক করার জন্য জায়গার ভাড়া, মেশিন, লোকজন সহ অন্যান্য খাতে অনেক খরচ বেশি। বছরের এই সময় আমাদের এই টাকা তুলতে হয়। সেচ দপ্তর থেকে ভূমি রাজস্ব দপ্তর এ বিষয়ে কিছু করতে চাইলেও পারবে না। অনেক টাকা আমাদের দিতে হয় সারা বছর। এই সময়ে সেই লাভটা আমরা করি।’ 

সেচ দপ্তরের ইদিলপুর সাব ডিভিশনের এসডিও চিররঞ্জন দত্ত বলেন, ‘দেখুন আমরা নদীতে অস্থায়ী সেতু বা কাঠামো ভেঙে দেবার নির্দেশ দিয়েছি। নদীর প্রবাহ কোনভাবেই অবরুদ্ধ করা যাবে না বলে সেই নির্দেশ ১৫ তারিখ থেকে কার্যকর করা হয়েছে। এরপরেও যদি সে নির্দেশ কেউ না মানে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। সোমবারই এ বিষয়ে আমরা অভিযান চালাবো।’ অন্যদিকে জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক অতিরিক্ত জেলাশাসক ইউনিস রিসিন ইসমাইল বলেন, ‘সেচ দপ্তর নদী থেকে অস্থায়ী সেতু ভেঙে দেবার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি নদীতে কোন ধরণের যানবাহন যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। সেই বিষয়টি আমরা দেখছি। এখনও বালি তোলার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আমরা জারি করিনি। আবহাওয়া দপ্তর থেকে রিপোর্ট নেবার পরে সেই নির্দেশ জারি করা হবে।’

আরো পড়ুন