ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,জামালপুর: পঞ্চায়েত ভোটের আগে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে সিপিএম প্রার্থীর বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছিল শাসকদলের বিরুদ্ধে। এবার সেই ঘটনায় গ্রেফতার হল খোদ অভিযোগকারী সিপিএম প্রার্থী। রবিবার এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় সিপিএম কর্মী রাম সরকার। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তৃণমূলকে ফাঁসাতেই নিজেদের পার্টি কর্মীকে দিয়েই বাড়িতে বোমাবাজি করিয়ে ছিলেন সিপিএমের প্রার্থী দম্পতি। বোমা মারার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর সিপিএম কর্মী রাম সরকার নিজেই পুলিশের কাছে সিপিএম প্রার্থী দম্পতির এই গোটা পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দিয়েছে বলে দাবী পুলিশের। স্বাভাবিকভাবেই সিপিএমের এই ষড়যন্ত্রের কথা প্রকাশ্যে আসতেই জেলা জুড়ে জোর আলোড়ন ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
এদিকে নিজেদের ন্যক্করজনক এই পরিকল্পনার কথা জানাজানি হয়ে গেছে জানতে পেরেই ঘরবাড়ি ছেড়ে বেপাত্তা হয়ে যায় সিপিএমের প্রার্থী দম্পতি সুশান্ত মণ্ডল ও দেবিকা দেবনাথ। তবে সোমবার রাতে সিপিএমের প্রার্থী সুশান্ত মণ্ডল কে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। মঙ্গলবার তাকে পেশ করা হয় বর্ধমান আদালতে। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েতের উত্তর মোহনপুর গ্রামে ১৪১ নম্বর বুথে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন সুশান্ত মণ্ডল।তাঁর স্ত্রী দেবিকা দেবনাথ একই পঞ্চায়েতের ১৩৯ নম্বর বুথে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন। দুজনেরই বাড়ি উত্তর মোহনপুর গ্রামে। অন্যদিকে গ্রেপ্তার হওয়া সিপিএম কর্মী ফুচকা বিক্রেতা রাম সরকারের বাড়িও একই গ্রামে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
গত ২৫ শে জুন এই সিপিএম দম্পতি প্রার্থী অভিযোগ করেন, তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুস্কৃতিরা রাতের অন্ধকারে তাঁদের বাড়িতে বোমা মেরেছে। ঘটনার দিন সিপিআইএমের জামালপুর ১ নম্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র জামালপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগে তিনি দাবি করেন,’রাতের অন্ধকারে তাঁদের দলের প্রার্থী দম্পতির বাড়িতে বোমা ছুঁড়ে মেরেছে তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত স্থানীয় দুস্কৃতিরা।’
জামালপুর থানার পুলিশ তদন্তে নেমে উত্তর মোহনপুর গ্রামের বাসিন্দা রাম সরকারের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করে বেশ কিছু তথ্য পায়। পঞ্চায়েত ভোটের গণনা মিটলে ১৬ জুলাই রাতে পুলিশ রাম সরকারকে পাকড়াও করে থানায় নিয়ে গিয়ে জেরা করে।
জেরায় সিপিএম কর্মী রাম সরকার তাঁর এবং সিপিএম প্রার্থী দম্পতির করা গেমপ্ল্যান ফাঁস করে দেয়। পরিকল্পনা মাফিক ২৪ জুন রাতে বাড়ির উঠানের দু’জায়গায় দুটি বোম ফেলে রাখে। এরপর সে সিপিএম প্রার্থী দম্পতির বাড়ির বাইরে বেরিয়ে গিয়ে একটি বোম তাদের বাড়িতে ছুঁড়ে মারে বলে পুলিশি জেরায় কবুল করেছে বলে পুলিশের দাবী। পুলিশ এক্সপ্লোসিভ এ্যাক্টে মামলা রুজু করে তাকে গ্রেপ্তার করে। সোমবার ধৃতকে পেশ করা হয় বর্ধমান আদালতে। ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ও বোমা সরবরাহকারীদের নাগাল পেতে তদন্তকারী অফিসার ধৃতকে ১০ দিন নিজেদের হেপাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায়। বিচারক ৭ দিনের পুলিশ হেপাজত মঞ্জুর করেন।
এরপর সোমবার রাতে পুলিশ প্রার্থী সুশান্ত মণ্ডলকে গ্রেপ্তার করে। সিপিএম নেতা সুকুমার মিত্র বলেন, ‘আমরা অভিযোগ করেছিলাম। সঠিক তদন্তের দাবী জানিয়েছিলাম। পুলিশ তদন্ত করে আসল জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করুক। যদি ধৃতরা অন্যায় করে থাকে তাহলে আমরাও তাদের পাশে থাকবো না।’
ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মেহমুদ খান বলেন, ‘রাম ও বাম জোট বেঁধে আমাদের হেয় করতে এই সব করছে।এলাকার শান্তি শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার জন্যই চক্রান্ত করেছে সিপিএম।’