ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: অবশেষে বর্ধমান শহরের ভিতর দিয়ে যাত্রীবাহী সরকারি ও বেসরকারি বাস চলাচলের উপর সম্পূর্ন নিষেধাজ্ঞা জারি করল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। শহরের ভিতর দিয়ে যাতে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকে সেই নিয়ে হাইকোর্টে দায়ের করা প্রায় ৮ বছর ধরে চলা মামলার রায়ে ২০১৪ সালের তৎকালীন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের জারি করা সিদ্ধান্তেই শিলমোহর দিলো উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত শহর কে যানজট মুক্ত করতে ২০১৪ সালে তৎকালীন বর্ধমান জেলার জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন শহরের মধ্যে দিয়ে বাসের যাতায়াত বন্ধের নির্দেশ জারি করেছিলেন। টাউন সার্ভিস ছাড়া কোনো বাস চালানো যাবেনা, এমনই নির্দেশিকা জারি করেছিল জেলা প্রশাসন। তারপরেই বাস মালিক সংগঠন সহ ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়। একদিন সমস্ত বাস চলাচল বন্ধ রেখে প্রতিবাদও জানিয়েছিল বাস মালিক সংগঠন গুলো। এরপরেও জেলা প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় তারা কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয় সেই সময়।
দীর্ঘ ৮ বছর ধরে মামলা চলার পরে ২০২২ সালে হাইকোর্ট জেলা প্রশাসনের নির্দেশেই শিলমোহর দেয়। এরপরে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের সেই সিদ্ধান্ত কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিসন বেঞ্চে মামলা গড়ায়। এরই মধ্যে ডিভিশন বেঞ্চ অন্তবর্তী একটি রায়ে নির্দেশ দেয়, আপাতত শহরের মধ্যে দিয়ে যাত্রীবাহি বাসই শুধু যেতে পারবে, পরবর্তী নির্দেশিকা না দেওয়া অবধি। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার রায়ে সিঙ্গেল বেঞ্চর রায়ই বহাল রাখে। ফলে শহরের ভিতর দিয়ে আর কোন যাত্রীবাহি বাস বা অন্য কোনধরণের বড় যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। কেবলমাত্র শহরের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্বের টাউন সার্ভিস বাস চলাচল করতে পারবে।
ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ের কপি বুধবার জেলা প্রশাসনের হাতে আসার পরেই শহরের বেশ কয়েটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে এদিন বাস ঢোকার ক্ষেত্রে বাধা দেয় পুলিশ। আপাতত প্রথমদিন সবাইকে বিষয়টি বলে চলাচলের অনুমতি দিলেও আগামী দুদিনের মধ্যে শহরের মধ্যে দিয়ে পুরোপুরি বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেই জানিয়েছে প্রশাসন।
জেলা আঞ্চলিক পরিবহন আধিকারিক অনুপম চক্রবর্তী বলেন, ‘হাইকোর্টের সিঙ্গেল ও ডিভিশন বেঞ্চের বিচারকরা জেলা প্রশাসনের ২০১৪ সালে জারি করা নির্দেশিকায় কোন ভুল ছিল না সেটা স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে এবার আর কারোর কোন সংশয় থাকলো না। শুধুমাত্র শহরের মধ্যে দিয়ে নবাবহাট থেকে উল্লাস ও উল্লাস থেকে নবাবহাট অবধি টাউন সার্ভিস বাস যাতায়াত করতে পারবে। এছাড়া অন্য কোন বড় গাড়ি এমনকি সরকারি বাসও যেতে পারবে না। তবে স্কুল বাসের ক্ষেত্রে তখনও যেমন ছাড় দেওয়া ছিল এখনও তেমনই ছাড় দেওয়া থাকবে।’
বর্ধমান ডিস্ট্রিক্ট বাস ওনার্স অ্যাসোশিয়েসনের যুগ্ম সম্পাদক তুষার ঘোষ বলেন, ‘আমরা আইনের পথে লড়াই করেছি। আদালতে আমরা রায় পাইনি। এখনতো আর কিছু করার নেই। ২০১৪ সালের সেই জারি করা নির্দেশিকা মেনেই বাস চলবে। এরথেকে বেশী কিছু এখন বলার নেই।’ দক্ষিণ দামোদর বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বেনু গুপ্ত বলেন,’ আদালতের রায় নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা এই রায় মেনেই চলবো। তবে তেলিপুকুরে যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার কোনো পরিকাঠামো তৈরি না থাকায় প্রতিদিন যাত্রীদের হয়রানির মুখে পড়তে হবে। প্রশাসনের উচিত এই দিকটা অবিলম্বে ভেবে দেখা।’