বর্ধমানের আকাশে সূর্য কে ঘিরে সিরাস মেঘের বলয়

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: সোমবার সকাল থেকে পূর্ব বর্ধমানের আকাশে দেখা গেল সূর্য কে ঘিরে মেঘের বিশাল রঙিন বৃত্ত। বিরল ঘটনা না হলেও মহাজাগতিক সুদৃশ্য এই ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা এলাকার বহু মানুষ। যদিও প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই এই মহাজাগতিক দৃশ্য উপভোগ করলেও, কি কারণে সূর্যের চার দিকে এই বলয় – তার সঠিক কারণ ব্যক্ত করতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

 

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক বিপ্লব বিশ্বাস সূর্যের চারপাশের এই বলয় প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, এই ঘটনার সম্পূর্ন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে সূর্যের চারদিকে এই ধরনের বলয় সাধারণত বর্ষাকালেই লক্ষ্য করা যায়। যেমন বছরের অনেক সময় আকাশে রামধনু দেখতে পাওয়া যায়, তার যেমন বৈজ্ঞানিক কারণ আছে। তেমনই এই সময় এই ধরনের বলয় তৈরি হওয়ার পরিষ্কার কারণ রয়েছে। বৃষ্টির কণা বা জলীয় বাষ্প-মিশ্রিত বাতাসের মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো যাবার সময় আলোর প্রতিসরণের কারণে বর্ণালীর সৃষ্টি হয়। এই বর্ণালীতে আলো সাতটি রঙে ভাগ হয়ে যায়। এই সাতটি রঙ হচ্ছে বেগুনী, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। এই রংগুলোকে তাদের আদ্যক্ষর নিয়ে সংক্ষেপে বলা হয়: বেনীআসহকলা।

এই বলয় মুলত পৃথিবীর বায়ুমন্ডল এর উপরস্থ অংশে থাকা বরফ স্ফটিকে সূর্য বা চাঁদের আলোর প্রতিসরণের কারনেই সৃষ্টি হয়ে থাকে। এর নাম 22° halo। চাঁদ এর চারপাশে যখন একে দেখা যায় তখন বলা হয় Moon Halo বা Lunar Halo. আর সূর্যের চারপাশে দেখা গেলে বলে Sun Halo। এটি একটি অপটিক্যাল ইল্যুশন। 22° halo বলার কারণ হলো, আমরা সূর্য বা চাঁদের চারপাশে যে বলয়টি দেখি তার ব্যাসার্ধ থাকে গড়ে ২২°। উল্লেখ্য, কৌণিক ব্যাসার্ধ এটি। উদাহরণ স্বরুপ, আমরা সূর্যকে বা চাঁদকে আকাশে কতোটুকু বড়ো দেখি তা সচরাচর সবারই ধারণা আছেই। সূর্যের গড় কৌনিক ব্যাসার্ধ ০.২৬৭° ও চাঁদের ক্ষেত্রে তা ০.২৫৯°। এবার তাহলে নিশ্চয় ধারণা করতে পারছেন ২২° ব্যাসার্ধ কতো বড়ো হবে?

★বলয়টি সৃষ্টির কারণ কি?

এই বলয়ের সৃষ্টি হয় কিভাবে সেদিকটা দেখা যাক৷ আকাশের দিকে তাকালে আমরা ভিন্ন ধরণের ও রুপের মেঘ দেখতে পাই। মেঘগুলোকে একই উচ্চতায় আছে মনে হলেও তারা মোটেই কিন্তু একই উচ্চতায় থাকে না। সাধারণত গড়ে সর্বনিম্ন স্তরের মেঘও ৬৫০০ ফুট উচ্চতায় থাকে। আবার সর্বোচ্চ প্রায় ১৮ কি.মি উচ্চতা পর্যন্ত মেঘের আনাগোনা দেখা যায়। এরমধ্যে ৬-১০ কি.উচ্চতায় যে মেঘ থাকে তাদের বলা হয় সিরাস মেঘ বা cirrus cloud। কিন্তু আমরা এদের দেখতে পাই না। এ মেঘের বৈশিষ্ট্য হলো এতে মিলিয়ন মিলিয়ন সংখ্যক ক্ষুদ্র বরফ স্ফটিক থাকে, এরা খুবই হালকা ও সাদা বর্ণের। তবে এ স্ফটিকগুলো সম্পূর্ণ গোলাকৃতির হয় না।

অনেক ভিন্ন আকৃতিরও থাকে। কলাম, বুলেট, প্লেট ইত্যাদি। অর্থ্যাৎ হেক্সাগোনাল বা ষড়ভুজাকৃতির৷ এরা খুবই ক্ষুদ্র আকারের হওয়ায় দেখতে পাই না আমরা। আমরা জানি, চাঁদের আলো তার নিজস্ব আলো না, বরং সুর্য থেকে প্রতিফলিত হওয়া আলো। এ আলো প্রতিফলিত হয়ে যখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ভেতর দিয়ে আসতে থাকে তখন কিছু ঘটনা ঘটে। ধরুন, আপনি এখন যে জায়গায় দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছেন সে জায়গায় আপনার উপর সিরাস মেঘের অবস্থান নেই৷ তাহলে আপনি সে বলয় দেখতে পাবেন না। কিন্তু যদি এ অবস্থায় সিরাস মেঘ থাকে তবে চাঁদ থেকে আসা আলো সিরাস মেঘে থাকা সে হেক্সাগোনাল আকৃতির স্ফটিকে যখন প্রবেশ করে তখন একবার প্রতিসরিত হয় এবং নির্গত হওয়ার সময় আরেকবার প্রতিসরিত হয়। এই দুইবার প্রতিসরণে আলো তার সোজা গতিপথ থেকে মোট ২২° কোণে বেঁকে যায়।

আরও খেয়াল করলে দেখবেন, বলয় সংলগ্ন আকাশ অন্যান্যদিকের তুলনায় বেশি কালো দেখায়। বলয়টির ভেতরের কিনারা সংলগ্ন অংশ বেশ সুস্পষ্ট এবং বাইরের দিকটা ক্রমেই বিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছে৷ এমন বলয় কতোবার ও কখন সৃষ্টি হয় তার কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। পুর্বেই বলেছি এর জন্যে দায়ী সিরাস মেঘ। সুতরাং, আপনি যে জায়গা থেকে চাঁদ বা সুর্যকে দেখছেন সে স্থানের উপর সিরাস মেঘ কেমন পরিমাণে ও কেমনভাবে বিন্যস্ত আছে তার উপর নির্ভর করবে বলয়টি সৃষ্টি হবে নাকি হবে না এবং এতে আপনি বলয়টি দেখবেন, নাকি দেখবেন না৷ তবে সচরাচর গড়ে প্রতিবছরে ১০০ দিনে এমন বলয়ের দেখা মেলে।

তথ্য: মহাকাশ বিজ্ঞান

আরো পড়ুন