রিক্সা চালিয়ে কলকাতা থেকে সিয়াচিনে পথে কলকাতার রিকশাওয়ালা সত্যেন, উদ্দেশ্য প্রকৃতি নিয়ে মানুষকে সচেতন করা

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান:  চন্দ্রবিন্দু ব্যাণ্ডের সেই গান আমি যে রিক্সাওয়ালা দিন কি এমন যাবে/ বলি কি ও মাধবী তুমি কি আমার হবে… এখনও অনেকের গলায় শোনা যায়। কিন্তু সেই রিক্সাওয়ালাই যা কিনা একদিন ছিল উপহাসের পাত্র, আজ তাকে কুর্নিশ জানাতে রাস্তার পাশে মানুষ দাঁড়িয়ে থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। ২৪ পরগনার বাড়ুইপুর থানার সাউথ গড়িয়ার বাসিন্দা সত্যেন দাস, পেশায় তিনি রিক্সাচালক। কেউ কেউ তাঁকে বলতে শুরু করেছেন আজব রিক্সাওয়ালা। 

বিজ্ঞাপন
শুক্রবার রাতে বর্ধমান ছুঁয়ে গেল সত্যেন দাসের তিন চাকার রিক্সা। রিক্সার বাইরে রয়েছে প্রকৃতিকে বাঁচানোর আবেদন। আর রিক্সার হ্যাণ্ডেলে ঝুলছে এবার গ্লোবাল ওয়ার্মিং -এর সতর্কতা। শুক্রবার রাতে বর্ধমানের উল্লাস মোড়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানালেন বর্ধমান শহরের বেশ কিছু মানুষ। কি বললেন সত্যেন দাস ? জানিয়েছেন, এবারে তাঁর লক্ষ্য সিয়াচিন। এই রিক্সা চালিয়েই কলকাতা থেকে তিনি ১ আগষ্ট শুরু করেছেন যাত্রা। কলকাতার নিউটাউনের বাবলাতলার বাইকার ব্রাদার্স গ্রুপের পক্ষ থেকে তিনি রওনা হন। তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে হাজির ছিলেন দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, বিধায়ক তাপস চ্যাটার্জি সহ অন্যান্যরা।

 সত্যেনবাবু জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে তিনি প্রথম ঠিক করেন তাঁর সাইকেল রিক্সা নিয়ে লাদাখ যাবার। তার ইচ্ছার কথা শুনে বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন, সহকর্মীদের অনেকেই প্রকাশ্যে উপহাস করেছিলেন। কেউ কেউ আবার আড়ালেও হেসেছিলেন। কিন্তু তাদের কটাক্ষে কর্ণপাত করেন নি তিনি। প্রচন্ড জেদ আর কিছু করে দেখানোর অদম্য ইচ্ছার উপর নির্ভর করে সেদিন তিনি বেড়িয়ে পড়েছিলেন। সেবার তিনি রিক্সাচালিয়ে কলকাতা থেকে বিশ্বশান্তির বার্তা নিয়ে শ্রীনগর হয়ে লাদাখের খারটুংলা পাস অবধি গিয়েছিলেন। সে সময় খারটুংলা পাস বিশ্বের সব থেকে উচ্চ গাড়ি চলাচলের রাস্তা ছিল। উচ্চতা প্রায় ১৮,৩৮০ফিট। দ্বিতীয়বার, মানালি হয়ে লাদাখ গিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। আর এবার হ্যাটট্রিক করতে চান সিয়াচিন গিয়ে। 

তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সম্বল ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল। শুধু তাইই নয়, তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সফরের আরও একটি উদ্দেশ্য রয়েছে যে, আজকের যুব সমাজ যাঁরা কার্যত চারদেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ছে। তাঁদের শেখানো, দেখানো যে ইচ্ছাশক্তি ও মনোবল থাকলে অনেক অসাধ্য কাজ করা সম্ভব। সত্যেনবাবু জানিয়েছেন, ২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত রিক্সা চালিয়ে লাদাখ যাওয়ার তার রেকর্ড ভাঙতে পারে নি কেউ। প্রথম প্রথম কিছুটা অসুবিধা হলেও এখন অনেকটাই সচ্ছন্দ তিনি। জানিয়েছেন, এখন অনেকেই এগিয়ে আসেন তাঁকে সাহায্য করতে। যদি সাহায্য না পান, তাহলে তাঁর রিক্সাতেই মজুদ রয়েছে রান্নার সরঞ্জাম। নিজেই রান্নার ব্যবস্থা করে নেন তিনি। লক্ষ্য সিয়াচিন জয় – তিন চাকার প্যাডেল করা রিক্সা নিয়েই নিজের রেকর্ড ভাঙতে চলেছেন সত্যেন।

আরো পড়ুন