ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: ১০০ দিনের প্রকল্পে তপশীলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সম্পূর্ণ পৃথক তালিকা তৈরী, তাঁদের পৃথক ব্যাঙ্ক একাউণ্ট এবং প্রত্যেকের জাতিগত শংসাপত্র না থাকলে আগামীদিনে ১০০ দিনের কাজ তাঁরা পাবেন না বলে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার যে নির্দেশ জারী করেছে তা নিয়ে এবার শুরু হয়ে গেল হৈ চৈ। কেন্দ্রীয় সরকারের এই নির্দেশ রীতিমত অভিসন্ধিমূলক বলে অভিযোগ তুলেছে সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি।
বিজ্ঞাপন
সোমবার সমিতির বর্ধমান জেলা কমিটির পক্ষ থেকে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের কাছে এব্যাপারে স্মারকলিপিও দেওয়া হল। একইসঙ্গে এব্যাপারে খোদ রাষ্ট্রপতির কাছেও নালিশ জানিয়েছেন এই সমিতি। এদিন সমিতির জেলা সম্পাদক আনসারুল আমান মণ্ডল জানিয়েছেন, গত মে মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ দিনের প্রকল্পের এ্যাডভাইসরি কমিটি নির্দেশ দিয়েছে, এখন থেকে এস সি ও এস টি জবকার্ড হোল্ডারদের আলাদা করে তালিকা তৈরী করতে হবে। একইসঙ্গে প্রত্যেক জবকার্ড হোল্ডারকে দিতে হবে জাতিগত শংসাপত্র এবং থাকতে হবে তাঁদের পৃথক ব্যাঙ্ক একাউণ্ট – নাহলে তাঁরা আর পাবেন না ১০০ দিনের কাজ।
আনসারুল আমান মণ্ডল জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত রীতিমত গভীর অভিসন্ধিমূলক। কারণ এর মাধ্যমে ফের তাঁরা হিন্দু তাস খেলতে চাইছে বলে তাঁরা মনে করছেন। এসসি, এসটিদের আলাদা করে তালিকা তৈরী হলে তা হবে পুরোপুরি হিন্দু তালিকা। ফলে আগামী দিনে এই তালিকা অনুসারেই বাকিদের পৃথক দৃষ্টিতে দেখা শুরু করবে তাঁরা। শুধু তাই নয়, তিনি জানিয়েছেন, এমজিএনআরইজিএস এই প্রকল্পটি একটি সার্বজনীন ও চাহিদা নির্ভর প্রকল্প। এখানে জবকার্ড হোল্ডারদের কি জাতি তা দেখা হয়নি এতকাল। কিন্তু এবার কেন্দ্রীয় সরকার সেই পথেই হাঁটতে চলেছে।
আনসারুল আমান মণ্ডল জানিয়েছেন, পার্লামেণ্টে কোনো আলোচনাই হয়নি এই সার্বজনীন চরিত্র বদলের বিষয়ে। তিনি এই নিয়ম লাগু হলে এসসি, এসটি জবকার্ড হোল্ডাররা সময়ে মজুরি পেতে সমস্যার মুখে পড়বেন। কারণ জাতিগত শংসাপত্র পেতে অনেক হয়রানিও পোহাতে হয় মানুষকে। ফলে বহু মানুষই কাজ হারাবেন বলে তাঁরা আশংকা করছেন। তিনি জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার এসসি, এসটি মানুষদের জন্য বাজেটে আলাদা করে অর্থ বরাদ্দের কথা বলেছে। অথচ ১০০ দিনের প্রকল্পের আইনেই ৪.২২ ধারা অনুযায়ী অরণ্য আইন ২০০৬ অনুসারে কেবল জমি নির্ভর আদিবাসীরা ১০০দিনের কাজে অতিরিক্ত আরো ৫০ দিন কাজ পাওয়ার অধিকারী। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তা এখনও কার্যকর করেনি।
আনসারুল জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই নির্দেশের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই তাঁরা রাজ্য সরকারকেও প্রতিবাদে সামিল হওয়া এবং এব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দেবার অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিন সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির এই স্মারকলিপি কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী অধিকার মঞ্চের সদস্যরাও। উপস্থিত ছিলেন সজল পাল, সত্যনারায়ণ বিশ্বাস, সুবীর মল্লিক, সমীর বসাক, বাপি দাস সহ প্রায় ৫০জন সমর্থক।
১০০ দিনের প্রকল্পে নতুন এই নির্দেশিকার প্রতিবাদ সহ এদিন স্মারকলিপিতে রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার সংযুক্তির নির্দেশও বাতিল করার দাবী জানানো হয়েছে। কারণ খোদ কেন্দ্রীয় সরকারই জানিয়েছে আধার বাধ্যতামূলক নয়। এমনকি অনেক মানুষের এখনও আধার কার্ড করা হয়নি। ফলে এই নির্দেশ মানলে সেই মানুষেরা রেশন থেকে বঞ্চিত হবেন। এব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে দুয়ারে রেশন প্রকল্প দ্রুত চালুর দাবী জানানো হয়েছে। দাবী জানানো হয়েছে দুয়ারে সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে সকলের সহায়তা পাওয়া এবং কোভিড ভ্যাকসিন দ্রুত সকল মানুষকে দেবারও।