ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বর্ধমানে কার্যকারিণী বৈঠকে যোগ দিতে এসে দলেরই এক পদাধিকারীর ক্ষোভের মুখে পড়লেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সাংবাদিক বৈঠকের সময়ই বিজেপির জেলা যুব মোর্চার সহ সভাপতি ইন্দ্রনীল গোস্বামী ভেতরে ঢুকতে গেলে তাঁকে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আর তারপরই তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়েন। ক্ষোভের মুখে বক্তব্য থামাতে বাধ্য হন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। ক্ষুব্ধ রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবকের সদস্য এবং দীর্ঘদিনের পুরনো কর্মী ইন্দ্রনীল গোস্বামী জানিয়েছেন, দিনের পর দিন দিলীপবাবু তাঁর বাড়িতে এসেছেন। তাঁর স্ত্রীর হাতের রান্না খেয়েছেন। কিন্তু এখন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তাঁকে চিনতে পারছেন না।
তিনি সংবাদ মাধ্যমের সামনে তাঁর ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, পুরনো দিনের কর্মীদের বদলে দলে এখন তোলাবাজ, চামচাবাজদের কদর বেশি। বিস্ফোরক ইন্দ্রনীল গোস্বামী জানিয়েছেন, বারবার তিনি আবেদন করেছেন দলে যে সমস্ত পুরোনো কর্মী আছে তাঁদের মর্যাদা দিয়ে আন্দোলনমুখী করে তুলতে। কিন্তু বর্তমান জেলা সভাপতি অভিজিত তা কিছু তোলাবাজ, চামচাবাজ নতুনদের নিয়ে সংগঠন করছেন। এর ফলে দল আদর্শচ্যুত হয়েছে। অবিলম্বে এর পরিবর্তন দরকার।
এদিন রীতিমত দুঃখ আর হতাশায় কেঁদে ফেলেন ইন্দ্রনীল। তিনি জানিয়েছেন, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দল ছেড়ে দেবেন। বিজেপি করার জন্য বহুবার তাঁর ওপর তৃণমূলের অত্যাচার নেমে এসেছে। বাড়ি ঘর ভাঙচুর হয়েছে। কিন্তু তাঁদের কোনো কদর নেই, নতুনরা তাঁদের অপমানিত করছেন। এমনকি এদিন জেলা অফিসে এক কর্মী তাঁকে খুন করারও হুমকি দিয়েছেন। এরপরই ইন্দ্রনীলবাবু জানিয়েছেন, তিনি পৃথক মঞ্চ করে এর প্রতিবাদ জানাবেন। শুধু ইন্দ্রনীল গোস্বামীই নয়, তাঁর সমর্থনে এদিন একাধিক বিজেপি নেতা কর্মীরাও সরব হন। এদিকে, এদিন ইন্দ্রনীল গোস্বামীর এই ক্ষোভ সম্পর্কে দিলীপবাবু জানিয়েছেন, বিজেপিতে কোনো ক্ষোভ নেই, ওসব তৃণমূলে হয়।
মঙ্গলবার সকালে দিলীপবাবু বর্ধমানে বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে আসেন বৈঠকে যোগ দিতে। কার্যকারিতাদের নিয়ে বৈঠক হয় প্রতি ৩ মাস অন্তর। করোনার জেরে বৈঠক সেভাবে হয়নি। ভার্চুয়াল বৈঠক হয়েছে। বর্ধমানের পর এদিন আসানসোলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যান দিলীপবাবু। অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে দফায় দফায় জঙ্গী ধরা পড়ার ঘটনায় দিলীপ ঘোষ এদিন বলেন, এই জঙ্গীরাই এখন মমতা ব্যানার্জ্জীর ভোট ব্যাঙ্ক। পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গীরা আশ্রয় নেওয়া নতুন কিছু নয়। বারবার ধরা পড়ছে। পশ্চিমবঙ্গ নিরাপদ আশ্রয়। পুলিশকে রাজনীতিতে নামানোয় এই ঘটনা ঘটছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এটা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। অন্যদিকে, সোমবার রাতে মঙ্গলকোটে তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি অসীম দাসের খুন প্রসঙ্গে দিলীপবাবু বলেন, বিজেপি খুনোখুনির সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করে না। বরং ৫-৬ বছরে এই রাজ্যেই বিজেপির ১৭৫ জন কর্মী খুন হয়েছেন। বিজেপিই হিংসার স্বীকার। যারা হিংসার রাজনীতি করছে, নিজেদের মধ্যে কাটমানির সিণ্ডিকেট নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে, তারই ফল এটা। নিজেদের গুণ্ডা বদমাসদের সামলালে বাংলায় হিংসা কমে যাবে। এরই পাশাপাশি স্ট্যাণ্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে বিজেপি বিধায়কদের পদত্যাগ করতে চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার যদি রীতিনীতি না মেনে চালাকি করে তাহলে তাঁরা সাহায্য করবেন না। পিএসসি কমিটির চেয়ারম্যান পদ্ধতিগতভাবে বিরোধীদের থেকে নেওয়া হয়। এবারে তা হয় নি।তাই তাঁরা ঠিক করেছেন, কোনো স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানের পদে থাকবেন না।
এদিন বর্ধমানের এই বৈঠকে সাংসদ সুনীল মণ্ডল ও সুরেন্দ্রজিত সিংহ অহলুবালিয়া না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন সাংসদদের আমন্ত্রণ করা হয়। থাকতেই হবে এর কোনো মানে নেই। গোটা রাজ্য জুড়ে ভুয়ো ভ্যাকসিন, আইপিএস, ভুয়ো সিবিআই প্রসঙ্গে দিলীপবাবু বলেন, ভুয়ো আইইপিএস, ভ্যাকসিন ভুয়ো, এমনকি ভূয়ো মুখ্যমন্ত্রী – এইসব বাংলায় চলে। বাংলা ধোকাবাজি, চালাকিতে ছেয়ে গেছে। মানুষ কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সরকার মিথ্যা বলতে বলতে পুরো সিস্টেমটাই ভেঙে পড়েছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে সরকার কাজ করুন। দলত্যাগ বিরোধী আইন সম্পর্কে তিনি বলেন, স্পীকারের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। না হলে কোর্ট আছে।
এদিকে এদিন মিটিং সেরে বিজেপি পার্টি অফিস থেকে বেরোনোর সময় দিলীপ ঘোষ বিক্ষুদ্ধ নেতাকে রীতিমত ধমক দিয়ে বলেন, চিৎকার চেঁচামেচি করে সিনক্রিয়েট করছেন কেন। আপনার কাজ আপনি করবেন, দলের কাজ দল করবে। চিৎকার করলেই সমস্যা মিটে যাবে ভাবলে ভুল করবেন। আর এরপরেই বিতর্ক আরো তীব্র হল। তাহলে কি পূর্ব বর্ধমানে বিজেপির আদি নব্যের মধ্যে দ্বন্দ্ব ফের জিইয়ে রইল নাকি দলের উচ্চ নেতৃত্ব এই দ্বন্দ্ব মেটাতে সচেষ্ট নয়। এই নিয়েই চর্চা শুরু হয়েছে দলের একাংশের মধ্যে