ভোটের আগে দর কষাকষির জের! তৈরি হচ্ছে বর্ধমান শহর তৃণমূল কংগ্রেস ব্যবসায়ী সমিতি, আলোড়ন

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: সম্ভাবনা আগেই তৈরি হয়েছিল, এবার সেটা বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। এবার বর্ধমান শহরে ব্যবসায়ীদের নিয়ে তৈরী হতে চলেছে বর্ধমান শহর তৃণমূল কংগ্রেস ব্যবসায়ী সমিতি। খোদ শাসকদলের নামে ব্যবসায়ী সংগঠন তৈরি হতে চলায় শহর তথা জেলার ব্যবসায়ী মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্ধমান শহরে ব্যবসায়ীদের জন্য ইতিমধ্যেই রয়েছে দুটি সংগঠন। একটি ব্যবসায়ী সুরক্ষা সমিতি এবং অন্যটি বর্ধমান চেম্বার অব ট্রেডার্স। এদের মধ্যে সুরক্ষা সমিতি বেশ পুরোনো। এছাড়াও রয়েছে তৃণমূল প্রভাবিত হকার্স ইউনিয়ন। রয়েছে এসইউসিআই এবং বামপন্থী সংগঠনও। কিন্তু একেবারেই সরাসরি রাজনৈতিক দলের ব্যানারে কোনো ব্যবসায়ীক সংগঠন এই প্রথম তৈরী হতে চলেছে বর্ধমান শহরে। আর তাকে ঘিরেই এখন শুরু হয়েছে জোর জল্পনা।

বিজ্ঞাপন

 জানা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই এই সংগঠনের সদস্যপদ  গ্রহণের কাজও শুরু হয়ে গেছে। এও জানা গেছে বর্ধমান দক্ষিণের নব নির্বাচিত তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাসের মস্তিষ্কপ্রসূত এই নতুন সংগঠনটি তৈরী হতে চলেছে। খোদ খোকন দাস বলেন, ‘সারা বছর ব্যবসায়ীরা আমাদের কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা নেবে আর ভোটের সময় বিজেপির সঙ্গে মিটিং করবে। এটা হবে না। যারা তৃণমূল কংগ্রেসকে চায়, ভালবাসে তারাই এই সংগঠনে থাকবে। এখন এই নয়া সংগঠনের সদস্যপদ সংগ্রহ অভিযান চলছে। সদস্য সংখ্যা দেখেই পরবর্তী কমিটি ঠিক করা হবে।’ অন্যদিকে, অত্যন্ত সুকৌশলে বর্ধমানের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুটি ব্যবসায়ীক সংগঠনকে ভাঙা হচ্ছে বলেই মনে করছেন অন্যান্য সংগঠনের সদস্যরা।

উল্লেখ্য, প্রতিবার নির্বাচন আসলেই বর্ধমানের ব্যবসায়ীরা মিলিতভাবে বিভিন্ন দাবী দাওয়াকে সামনে এনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে শুরু করেন। ২০২১ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে ব্যবসায়ীদের যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে রীতিমত সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে হুঁশিয়ারীও দেওয়া হয় – যদি তাঁদের দাবী মানা না হয় তাহলে তাঁরা ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকেই আলাদাভাবে প্রার্থী খাড়া করবেন। এমনকি ব্যবসায়ীরা এটাও জানান, বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রে ব্যবসায়ীরাই ভোটের নিয়ন্ত্রক শক্তি। বলা বাহুল্য, ব্যবসায়ীদের এই হুঁশিয়ারীতে রীতিমত চিন্তায় পড়েন রাজনৈতিক দলগুলি। শুরু হয় দড়িটানাটানি, আলোচনাও। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ব‌্যবসায়ীরা কোনো প্রার্থী দাঁড় করাননি। কিন্তু প্রতিবারই নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ীদের এই ” খেলা ” এবার ভাঙতে চলেছেন বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক খোকন দাস। 

 যদিও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এখনই এব্যাপার প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি। ব্যবসায়ী সুরক্ষা সমিতির সম্পাদক বিশ্বেশ্বর চৌধুরী জানিয়েছেন, তিনি শুনেছেন বর্ধমান শহর তৃণমূল কংগ্রেস ব্যবসায়ী সমিতি নামে একটি সংগঠন হচ্ছে, তবে এখনও পর্যন্ত তিনি বিস্তারিত কিছু জানেন না। অপরদিকে, চেম্বার অব ট্রেডার্সের সম্পাদক চন্দ্রবিজয় যাদব জানিয়েছেন, তৃণমূলের নামে একটি ব‌্যবসায়ী সংগঠন হচ্ছে। কিন্তু তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। তিনি লিফলেট দেখেছেন। কয়েকজনের উদ্যোগে এটা হচ্ছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে ব্যবসায়ীরা এতদিন সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থনে সংগঠন করেননি। এখন হয়তো সেটা হবে। 

এরই পাশাপাশি নয়া এই সংগঠনের জন্য যাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন তাঁদের মধ্যে বর্ধমানের বিসি রোডের রেডিমেড বস্ত্র ব্যবসায়ী মণিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, যে দুটি ব্যবসায়িক সংগঠন রয়েছে তারা ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। এছাড়াও যাঁরা তৃণমূলকে চান তাঁরা ঐক্যবদ্ধ হবার জন্যই এই সংগঠন করা হচ্ছে। এরফলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। 

অপরদিকে, এব্যাপারে বর্ধমান হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি তথা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিত দাস জানিয়েছেন, তাঁরা ট্রেড ইউনিয়ন করেন। ট্রেড ইউনিয়নে মালিকপক্ষকে নেওয়া হয়নি এখনও পর্যন্ত। শ্রমিকের স্বার্থ দেখাই ট্রেড ইউনিয়নের কাজ। তৃণমূলের নামে ব্যবসায়ীক সংগঠন তৈরীর বিষয়টি নিশ্চয়ই দলের উর্দ্ধতন নেতৃত্বরা দেখবেন। উল্লেখ্য, এর আগেও বর্ধমানের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের নিয়ে তৃণমূলের ব্যানারে একটি সংগঠন গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন খোকন দাস। তখন তিনি অবশ্য বিধায়ক ছিলেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই সংগঠন টেকেনি দলের ওপরতলার অনুমোদন না মেলায়। এখন দেখার বিষয় নতুন এই তৃণমূল ব্যবসায়ী সমিতির ভবিষ্যত কোন জায়গায় দাঁড়ায়।

আরো পড়ুন