ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হল বিজেপির দাপুটে নেতা বিশ্বজিত সেন ওরফে খোকন সেনকে। খোকন সেনের গ্রেপ্তারীর খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা শহর জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিজেপির জেলা সদর সাংগঠনিক সাধারণ সম্পাদক ডা. সৌম্যরাজ ব্যানার্জ্জী জানিয়েছেন, কি কারণে তাঁদের দলের অত্যন্ত গুরুপ্তপূর্ণ নেতা খোকন সেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বিষয়ে তাঁরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে। তিনি জানিয়েছেন, খোকন সেন বিজেপির বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের কো কনভেনার। রীতিমত বিজেপির সংগঠনকে ভাঙতেই প্রতিশোধ স্পৃহায় খোকন সেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেছেন।
বিজ্ঞাপন
পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে দলের বৈঠক সেরে বিজেপির জেলা অফিস থেকে যখন খোকন সেন বাড়ি ফিরছিলেন সেই সময় ৩নং ইছলাবাদ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে বর্ধমান থানার পুলিশ। শুক্রবার তাঁকে বর্ধমান আদালতে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খোকন সেনের বিরুদ্ধে গত ১৮ এপ্রিল একটি অভিযোগ দায়ের হয় বর্ধমান থানায়। তাঁর বিরুদ্ধে ৩৪১, ৩২৩, ৩০৭, ৩২৫, ৫০৬ এবং ৩৪ আইপিসি ধারা মোতাবেক কেস দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, একদা বর্ধমান ষ্টেশন এলাকায় সিপিএমের দাপুটে জঙ্গী নেতা হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে জেলা পুলিশের এই হোমগার্ডের। সিপিএম আমলে বর্ধমান ষ্টেশন এলাকায় প্রায় শেষ কথা বলার অধিকারী ছিলেন এই নেতা। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বর্ধমান ষ্টেশন এলাকায় গঠন করেছিলেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। শহরের বহু মানুষ এই সংগঠনের মাধ্যমে নানান সুবিধাও পেয়েছেন বলে জানা গেছে। ২০১১ সালে সিপিএমের হাত থেকে রাজ্যের ক্ষমতা তৃণমূলে আসার পর ২০১৩ সালে বর্ধমান পুরসভার ভোটের সময়কালে কালনা গেটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি করার অভিযোগ ওঠায় তাঁকে চাকরি থেকে সাসপেণ্ড করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়।
বর্ধমান শহরে একদা সিপিএম নেতা তথা বর্ধমান পুরসভার প্রাক্তন পুরপিতা আইনুল হকের অত্যন্ত ঘনিষ্ট বলে তিনি পরিচিত ছিলেন। পরে সিপিএম থেকে নির্বাসিত হন আইনুল হক। পট পরিবর্তনের পর আইনুল হক দীর্ঘ টালবাহানার পর বিজেপিতে যোগ দেন। প্রায় ২বছর আগে খোকন সেনও যোগ দেন বিজেপিতে। কিন্তু কিছুদিন পরই বিজেপি ছেড়ে বেড়িয়ে আসেন আইনুল হক। এরপরই তিনি যোগ দেন তৃণমূলে। বর্তমানে আইনুল হক তৃণমূলের জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও। কিন্তু বিজেপিতেই রয়ে যান খোকন সেন। জানা গেছে, গত বিধানসভা ভোটের আগে এবং ভোটের পরের দিনই তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক উস্কানিমূলক কাজ করা, মারপিট করা, সংঘর্ষ সৃষ্টি করার অভিযোগ ওঠে। আর তারপরেই তাঁকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
আদালত এদিন তাঁকে ৪দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। অন্যদিকে, খোদ খোকন সেন জানিয়েছেন, কিজন্য এবং কেন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এমনকি যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তাঁদের তিনি চেনেনও না। তিনি জানিয়েছেন, তাঁকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। যদিও এদিন সৌম্যরাজ বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁদের আইনের প্রতি আস্থা আছে, এব্যাপারে তাঁরা আইনী লড়াই লড়বেন। অন্যদিকে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা মুখপাত্র প্রসেনজিত দাস।
তিনি জানিয়েছেন, কেউ অপরাধ করলে পুলিশ আইন মোতাবেক তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। খোকন সেনের বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আছে, বা কেন তাকে গ্রেপ্তার করা হল তা পুলিশই বলতে পারবে। আসলে বিজেপির কাজই হল তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা, ওরা তাই করছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনো প্রতিহিংসার সম্পর্ক নেই।