ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, গলসি: সদ্য তিন মাস তৈরি হয়েছে গ্রামের পিচ রাস্তা। আর এরমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে পিচ। গ্রামাসীদের অভিযোগ ছিলো, প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা তৈরির তিন মাসের মধ্যেই যদি এই হাল হয়, তাহলে কদিন পর কি অবস্থা দাঁড়াবে এই রাস্তার? বেহাল রাস্তার হাল কিছুদিন আগেই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর তারপরই মঙ্গলবার গ্রামবাসীদের অভিযোগ খোদ নিজে সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে অকুস্থলে হাজির হয়ে গেলেন নব নির্বাচিত সাংসদ। ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসি মনহর সুজাপুর গ্রামের।
এদিন পথশ্রী প্রকল্পে কাজের হতশ্রী অবস্থা নিজের চোখে দেখে পিচমাখা রাস্তার পাথর তুলে উপস্থিত সকলের সামনেই জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার এর দুই পকেটে ঢুকিয়ে দিলের বর্ধমান দূর্গাপুর লোকসভার সাংসদ কীর্তি আজাদ। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের দুর্দশার কথা শুনে একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনতার সামনেই এইভাবে রাস্তার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের পকেটে পাথর ভরে দেওয়ায় উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা। যদিও সাংসদ নিজেই এলাকাবাসীদের হাততালি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন। তবে রাস্তার এই অবস্থার প্রমাণ স্বরুপ কিছু পাথর এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের পকেটে ঢুকিয়ে সেগুলো ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ারকে দেখানোর কথা মনে করিয়ে দেন সাংসদ। পাশাপাশি জেলা শাসককেও এই রাস্তার কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাবেন বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
আর এদিনের সাংসদের রণংদেহী মেজাজ থেকেই গ্রামবাসীদের করা আন্দোলন যে সঠিক তার প্রমান প্রকাশ্যে চলে এলো। রীতিমত পকেটে পাথর ঢুকিয়ে কড়া ভাষায় সাংসাদ এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে বলেন, ‘জেলার ইঞ্জিনিয়ার ও সুপারিন্টেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারকে গিয়ে এগুলো দেখাবেন রাস্তার কি অবস্থা।’ যদিও গ্রামবাসীদের আন্দোলনের খবর দেখে লোকসভার সাংসদের টনক নড়লেও জেলার সরকারি ইঞ্জিনিয়ারদের এই রাস্তা নিয়ে কোন হেলদোল এখনও দেখা যায়নি। এমনকি পুনরায় কিভাবে রাস্তাটি ঠিক করা যায় তারও কোন উদ্দ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। সাংসদ আরও জানান, ‘জেলার এক্সিকিউটিভ ও সুপারিনটেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার রা আমি এখানে আসা সত্ত্বেও আসেনানি, তার মানে নিশ্চই কাজের গরমিল আছে। আমি বিষয়টি নিয়ে জেলা শাসককে চিঠি লিখবো এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলবো।’
প্রসঙ্গত পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসি ১ নং ব্লকের মনহর সুজাপুর গ্রামের প্রাইমারী স্কুল থেকে গলিগ্রাম লকগেট প্রযন্ত ২.৯০০ কিমি পিচরাস্তা তৈরী হয়েছিল। প্রকল্পে জেলা পরিষদ তহবিল থেকে ৯৭,৪১,৬২৩ টাকা ব্যায় করা হয়েছিল। সেই রাস্তায় তিনমাসের মধ্যে পিচ উঠতে শুরু করায় গ্রামবাসীরা অভিযোগ তুলেছিলেন। এদিন রাস্তা পরিদর্শন করে গাফিলতির অভিযোগ তুললেন খোদ সাংসদ। এদিকে সাংসদ গ্রামবাসীদের কাছে আসায় খুশি আন্দোলনকারী গ্রামবাসীরা।
পরিদর্শনে এসে সাংসদ কীর্তি আজাদ এদিন জানিয়েছেন, আমি টিভির খবর দেখে ও পেপার পরে এসেছি। এসে যা দেখলাম বলার ভাষা নেই, বলতে লজ্জা লাগছে। অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের পকেটে রাস্তা থেকে পাথর কুড়িয়ে ঢুকিয়ে দিলাম। আর বললাম এগুলো পকেট থেকে বের করে এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ও সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারকে দেখাবেন। সবথেকে বড় কথা সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার ও এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের এখানে থাকা দরকার ছিল যখন সাংসাদ এই জায়গায় এসেছেন। তাদের না থাকা এটাই বলে যে বিষয়টিতে বড় কিছু গোলমাল আছে। আর এই কাজে যে ধরনের গন্ডগোল হয়েছে তা নিয়ে আমি জেলা শাসককে একটি শক্ত চিঠি লিখব। আর তাতে এদের সাসপেন্ড বা টারমিনেশনের দাবী রাখবো।’