ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: কলকাতায় সাপুরজি আবাসনের ঘটনায় এবার আতংক সৃষ্টি হল বর্ধমান শহর সংলগ্ন আবাসনগুলিতেও। বর্ধমান শহরের দুই প্রান্তে রয়েছে দুটি বড় টাউনসিপ। এছাড়াও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে একাধিক আবাসন প্রকল্প। আর কলকাতার সাপুরজি কাণ্ডের পর এই সমস্ত আবাসনগুলিতেও সন্দেহের দৃষ্টি তীব্র আকার নিল। একদিকে রয়েছে বর্ধমান শহরের উল্লাস উপনগরী অন্যদিকে রয়েছে শ্রাচী গ্রুপের রেনেসাঁ টাউনসিপ।
বিজ্ঞাপন
উল্লাস উপনগরী আবাসন কমিটির সভাপতি লক্ষ্মীনারায়ণ চ্যাটার্জী এদিন জানিয়েছেন, কলকাতার ঘটনার পর তাঁদের আরও সতর্ক হওয়ার দিন এসে গেছে। তিনি জানিয়েছেন, এই টাউনসিপে রয়েছে ৯৪৮টি প্লট। তারমধ্যে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০টি আবাসন তৈরী হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এই ৫০০টি আবাসনের মধ্যে কমবেশী ৫০টি আবাসনেই রয়েছে ভাড়াটিয়া। তিনি জানিয়েছেন, সবথেকে ক্ষতিকারক বিষয় হল আবাসনের মালিকরা বিভিন্ন কোম্পানীকে ভাড়া দিচ্ছেন। ফলে কোম্পানীর প্রয়োজনে কারা আসছেন, কারা যাচ্ছেন তার কোনো নির্দিষ্ট হিসাব থাকছে না।
সাপুরজি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি জানিয়েছেন, সাধারণত, আবাসনের মালিকরা কাউকে ভাড়া দিতে চাইলে সেই ভাড়াটিয়ার বিস্তারিত তথ্য তাঁদের কাছে জমা দেবার নির্দেশ দেওয়া রয়েছে। কিন্তু সবসময়ই তা যে নিয়ন্ত্রিত করা যাচ্ছে এমনটা নয়। তিনি জানিয়েছেন, এই ঘটনার পর তাঁরা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে চাইছেন। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিদিনই রাতে শক্তিগড় ও বর্ধমান থানার পুলিশ রাতে টহলদারী চালান। উল্লাস উপনগরীর কয়েকটি গেট থাকলেও রাতে একটি গেটই খোলা থাকে। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের সমস্ত গেটেই নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে। এই ঘটনার পর নিরাপত্তাকর্মীদের আরও সজাগ করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই তাঁরা আবাসনের মালিকদের জন্য কার লোগো চালু করার তাঁরা উদ্যোগ নিয়েছেন।
অপরদিকে, রেনেসাঁ টাউনসিপের আবাসন মালিকদের সংগঠন বর্ধমান রেনেসাঁ টাউনসিপ এলোটিস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ জ্যোর্তিময় ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, রেনেসাঁ টাউনসিপে প্রায় ৭৫০জন বাসিন্দা রয়েছেন। কিন্তু তার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ভাড়াটিয়া। তিনি জানিয়েছেন, কলকাতার ঘটনার পর তাঁরাও এই আবাসন এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে রীতিমত চিন্তিত। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা একটি এডভাইসরি কমিটি গঠন করেছেন। খুব শীঘ্রই সেই কমিটি কাজ শুরু করবে। আর তারপরেই এই আবাসনের সমস্ত নিরাপত্তার বিষয়টি তাঁরা দেখভাল করতে পারবেন। তিনি জানিয়েছেন, এখানে যে নিরাপত্তা কর্মীরা রয়েছেন তাঁরা শ্রাচী গ্রুপের সম্পদ রক্ষায় নিয়োজিত থাকেন। আবাসনের বাসিন্দাদের জন্য নয়। ফলে এই আবাসন এলাকায় ক্রমশই বাড়ছে চুরির ঘটনা। বাড়ছে নানান অপরাধের ঘটনাও। কিছুদিন আগে শিশু চুরি চক্রের এক চাঁইকে এই এলাকা থেকেই পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
তিনি জানিয়েছেন, পুলিশের টহলদারী ভ্যান ২নং জাতীয় সড়কের সামনে থাকলেও আবাসনের ভেতরে তাঁরা আসেন না। তিনি জানিয়েছেন, স্বাভাবিকভাবেই এই আবাসন এলাকায় কোনো অপরাধী যদি আত্মগোপন করে থাকে তাহলে তাকে চিহ্নিত করার এখনই কোনো ব্যবস্থা নেই। যদিও তাঁরা যাঁরা ভাড়া দেন, তাঁদের কাছ থেকে ভাড়াটিয়ার যাবতীয় তথ্য নেওয়ার কথা বলেন। কিন্তু কলকাতার এই ঘটনার পর এব্যাপারে সত্যিই তাঁদের আতংক আরও বাড়ল। অন্যদিকে, কলকাতার এই ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সমস্ত আবাসনের সোসাইটিগুলি সহ সাধারণ বাড়ির ভাড়াটিয়া সংক্রান্ত বিশদ তথ্য জানার বিষয়টি তাঁরা পর্যালোচনায় নামছেন বলে জানিয়েছেন বর্ধমান সদর উত্তরের মহকুমাশাসক দীপ্তার্ক বসু।
তিনি জানিয়েছেন, এব্যাপারে তাঁরা শীঘ্রই আলোচনায় বসবেন। অন্যদিকে, এব্যাপারে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সিংহ রায় জানিয়েছেন, সাধারণত আবাসনগুলি একটি সংগঠিত সোসাইটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ফলে সেখানকার বাসিন্দাদের তথ্যগুলি পাওয়া সহজে গেলেও অসংগঠিত ক্ষেত্রে যাঁরা বাড়ি, ঘর ভাড়া দেন তাঁদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি আরও কঠোর করা হবে। উল্লেখ্য, জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দিষ্টভাবেই নির্দেশ রয়েছে কেউ কোনো ভাড়া দিতে গেলে তাঁদের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় জানাতে হবে। তিনি জানিয়েছেন, এব্যাপারে তাঁরা সচেতনতামূলক প্রচারে নামছেন। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে এভাবেই বাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গীরা ডেরা বানিয়েছিল। ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরই তা জানা গেছিল। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা যাতে আর না ঘটে তারজন্য ফের কঠোর ব্যবস্থা নিতে চলেছে জেলা পুলিশ ও প্রশাসন।