ইয়াসের মোকাবিলায় কাঁচাবাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে নির্দেশ, চূড়ান্ত ভাবে প্রস্তুত সব পক্ষই

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: ইয়াসের প্রভাবে মঙ্গলবার গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গেল বৃষ্টির দাপট। হাল্কা থেকে ভারী বৃষ্টিতে জায়গায় জায়গায় রীতিমত আতংক বাড়তে শুরু করেছে জেলা জুড়ে। এদিনও খোদ বর্ধমান পুর এলাকার জায়গায় জায়গায় জল জমে বন্যার চেহারা নিয়েছে। যদিও প্রশাসনিকভাবে সবরকমের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এমনকি খোদ দলনেত্রীর নির্দেশে পাড়ায় পাড়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা কোমড় বেঁধে মাঠে নেমে পড়েছেন। সরকারীভাবে ছাড়াও বেসরকারীভাবেও একাধিক সংস্থা, ক্লাব ইয়াসের মোকাবিলায় প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হয়ে রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

 এদিন বর্ধমান পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার অমিত গুহ জানিয়েছেন, যশের মোকাবিলায় বর্ধমান পুর এলাকায় বেশ কিছু ত্রাণশিবির তথা ফ্লাড সেণ্টার তৈরী করা হয়েছে। বর্ধমান শহরের বাবুরবাগ প্রাথমিক স্কুল, হরিভজন প্রাইমারী স্কুল, দুবরাজদিঘী এমএফপি, বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস হাইস্কুল, ইছলাবাদ হাইস্কুল, বালিডাঙা প্রাথমিক স্কুল, সুভাষ বিদ্যামন্দির, শাঁখারীপুকুর প্রাথমিক স্কুল, ইন্দুগুণমনি প্রাথমিক স্কুল, রথতলা মনোহরদাস বিদ্যানিকেতন, বেলপুকুর প্রাথমিক স্কুল, মনোহরদাস বিদ্যায়তন প্রাথমিক স্কুল, বাণীপীঠ হাইস্কুল এবং বিদ্যার্থীভবন গার্লস হাইস্কুলকে ত্রাণশিবির হিসাবে তৈরী রাখা হয়েছে। 

এদিন জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা জানিয়েছেন, বিপর্যয় মোকাবিলায় জামালপুর ব্লক এবং কালনা মহকুমার জন্য এনডিআরএফ-এর একটি দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি জেলার কাটোয়ায় এসডিআরএফ-এর একটি দলকে মোতায়েন রাখা হচ্ছে যে কোনো পরিস্থিতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য। অন্যদিকে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক কুশল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এদিন সকাল ৬টায় ভাগীরথী নদীতে জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে। এদিন সকালে ভাগীরথীর জলস্তর ছিল ৩.৬১, যা বিপদসীমার নিচে রয়েছে। দামোদরের ইদিলপুরে এদিন রেকর্ড করা দামোদরের জলস্তর ছিল ২৭.৪৬ যা বিপদসীমার নিচে থাকলেও জল বাড়ছে দামোদরে। অন্যদিকে, তিনি জানিয়েছেন, কানাইনাটশালে এদিন বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ২৫.৪০ মিলিমিটার এবং সাঁকোতে রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৬৫ মিমি। এদিকে, যশের প্রভাবে বিশেষ করে কাঁচা বাড়ি গুলির ব্যাপক ক্ষতির আশংকা দেখা দেওয়ায় ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ব্লকে ব্লকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। কাঁচাবাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদে সংশ্লিষ্ট এলাকার ত্রাণশিবিরগুলিতে আশ্রয় নেবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

সোমবার রাত থেকেই জেলা জুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টির প্রকোপ বাড়তে থাকায় পাড়ায় পাড়ায় তৃণমূলের নেতারাও নিজ নিজ এলাকার কাঁচাবাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে উঠে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের কাছে আবেদন করেছেন। এব্যাপারে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা তাঁদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন। ইয়াসের মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও। মঙ্গলবার সকালে বর্ধমানের বড়শুল কিশোর সংঘের সম্পাদক পার্থ ঘোষ জানিয়েছেন, তাঁদের ক্লাব ঘরে একতলা ও দ্বিতলে দুটি ঘর রয়েছে। তাঁরা বড়শুল ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম সংসদ এলাকায় যে কোনো দুটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে আশ্রয় দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মঙ্গলবার বড়শুল ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুস্মিতা সোরেন, পঞ্চায়েত সদস্যা লক্ষ্মী সাধুখাঁ, ক্লাবের সভাপতি অমিত সিংহ, সম্পাদক পার্থ ঘোষ, যুগ্ম সহ সম্পাদক শুভব্রত দাস ও কৌশিক মণ্ডল সকলে মিলে এলাকা পরিদর্শন করেন। পার্থবাবু জানিয়েছেন, যে দুটি পরিবারকে প্রয়োজনে তাঁরা আশ্রয় দেবেন তাঁদের খাওয়া সহ সবরকমের সহায়তা দেবেন ক্লাবের পক্ষ থেকে। 

অপরদিকে, যশের মোকাবিলায় প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছে মেমারীর পাল্লারোড পল্লীমঙ্গল সমিতিও। তাঁরাও ইতিমধ্যে ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে একটি রেসকিউ টিম গঠন করেছেন। দুর্গতদের দ্রুত উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁরাও প্রস্তুত। ইতিমধ্যে এই ক্লাব কর্তৃপক্ষ এক অভিনব উদ্যোগ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। ক্লাব সম্পাদক সন্দীপন সরকার জানিয়েছেন, ইয়াস এর তান্ডবে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হতে পারে। তাই তাঁদের এলাকায় গর্ভবতী যে কোনো মহিলার বিশেষ প্রয়োজনে 
আগামী তিনদিন তাঁরা সর্বতভাবে প্রস্তুত থাকছেন। সেক্ষেত্রে তাঁরা একটি হেল্প লাইন নম্বরও – ৭৯০৮৫২৯১৮২ চালু করেছেন। এই নম্বরে ফোন করলেই আসন্ন সন্তান সম্ভবার পরিবারের সদস্যরা সাহায্য পেয়ে যাবেন।

আরো পড়ুন