ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমানে দোলের দিন শহরের রামকৃষ্ণ রোড এলাকায় বর্ধমান জেলা আদালতের এক জুনিয়র মহিলা আইনজীবী কে মদ্যপ অবস্থায় পুলিশ পরিচয় দিয়ে এক যুবক বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে থানায়। এই ঘটনায় আক্রান্ত ওই মহিলা আইনজীবী তার পেটের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন পুলিশ কে। এই ঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শহর জুড়ে। কিন্তু ঘটনার পর বেশ কয়েকদিন কেটে গেলেও অভিযুক্ত যুবককে এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। লোমহর্ষক, নারকীয় এই ঘটনার বিষয়ে জানার পরেও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ইতিমধ্যেই নিন্দার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

এই বিষয়ে আক্রান্ত মহিলা জুনিয়র আইনজীবী বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের কাছে ইতিমধ্যে সুরাহা ও নিরাপত্তা চেয়ে লিখিত আবেদন করেছেন। আর এরপরই বর্ধমান বারের পদাধিকাদের পক্ষ থেকে ঘটনার বিষয়ে জেলা জজ, এসপি সহ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, চিফ সেক্রেটারি ও সংশ্লিষ্ট সমস্ত জায়গায় অভিযুক্তকে আগামী ৭২ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। যদি অভিযুক্তকে এই সময় সীমার মধ্যে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা না হয় তাহলে এই ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
এমনকি আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পেন ডাউন কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও ঘোষণা করেছেন বর্ধমান বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সদন তা। স্বাভাবিকভাবেই শহরের মধ্যে একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলার ওপর পুলিশ পরিচয়ে এক যুবকের এহেন অত্যাচারের প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন শহরবাসী। তারাও দাবি জানিয়েছেন অবিলম্বে কালপ্রিট কে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হোক।
ঘটনার দিন কি হয়েছিল জানাতে গিয়ে আক্রান্ত ওই মহিলা আইনজীবী জানিয়েছেন, ’দোলের দিন সকালে স্বামীর মোটরসাইকেলে চেপে শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছিলেন। সঙ্গে তাঁর দিদি জামাইবাবুও ছিলেন। জেলখানা মোড় এলাকায় রামকৃষ্ণ রোডে দু তিনজন বাইক আরোহী তাদের মোটরসাইকেলে এসে ধাক্কা মারে। তাদের সাবধানে গাড়ি চালানোর কথা বলেন ওই আইনজীবী। তখনই পুলিশ লেখা একটি মোটরসাইকেলে চেপে এক যুবক ঘটনাস্থলে এসে ওই মহিলা আইনজীবীকে ঘাড় ধরে রাস্তায় ফেলে পেটে লাথি মারে ও বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ।
এরপর কোনক্রমে বর্ধমান থানায় এসে আক্রান্ত ওই মহিলা ঘটনার বিষয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে কর্তব্যরত অফিসার তাদের জানায় ওইদিন থানায় হোলি চলছে, পড়ে এসে অভিযোগ জানাবেন। এরই মধ্যে থানাতেই আক্রান্ত মহিলার রক্তস্রাব শুরু হয়। তড়িঘড়ি বর্ধমান মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয় ওই মহিলা আইনজীবীকে। সেখানে প্রথমে ভর্তি নেওয়া হয় না। পরে বাইরে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানতে পারেন তাঁর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে গেছে। অভিযোগ, আবার বর্ধমান থানায় এসে লিখিত অভিযোগ জানাতে গেলে কর্তব্যরত অফিসার গড়িমসি করেন, এবং তাদের জানান যে সরকারি হাসপাতালের কাগজ ছাড়া অভিযোগ নেওয়া হয় না। শেষমেষ অভিযোগ জমা করতে পারলেও ঘটনার পর চারদিন অতিক্রান্ত হয়ে যাবার পরেও এখনো অভিযুক্ত কে গ্রেপ্তার করতে না পারায় পলিশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভের পরিবেশ তৈরি হয়েছে শহর জুড়ে।