ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে ও রোগীদের উন্নত পরিষেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে শনিবার রোগী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করা হল। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, হাসপাতাল সুপার তাপস ঘোষ, ডঃ দেবাশীষ বিশ্বাস, জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিশ সেন, বর্ধমান থানার আইসি সুখময় চক্রবর্তী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধারা, বর্ধমান পৌরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার, বিডিএর চেয়ারপার্সন কাকলি গুপ্ত তা, বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস, জেলা পরিষদের মেন্টর উজ্জল প্রামাণিক, রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা বর্ধমান পৌরসভার এমসিআইসি সুশান্ত প্রামানিক সহ হাসপাতালের উচ্চ আধিকারিকরা।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, মূলত রোগীদের সুবিধার্থে আজকের এই বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেমন, বর্ধমান হাসপাতালে রাধারানী ব্লক কে ভেঙে নতুন আট তলা বিল্ডিং করা হবে। সেখানে নির্মাণ করা হবে মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার হোম। এর ফলে একই ছাদের তলায় মা ও শিশুদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যাবে, চিকিৎসা পরিষেবা পেতে পরিবারের লোকেদের হয়রানি ও ছোটাছুটি বন্ধ করতেই এই উদ্যোগ বলে জানা গেছে।এছাড়াও ইমারজেন্সি মেডিসিন এর উপর এ এম ডি (AMD) করার জন্য চারটি আসন স্বাস্থ্য ভবন থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ফলে জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য এই সিদ্ধান্ত আরো কার্যকরী হবে বলেই বৈঠকে আলোচনা হয়।
সম্প্রতি বিচারাধীন আসামি কে নিয়ে চিকিৎসা করাতে এসে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায় আসামি , কয়েকমাস আগেই রাধারাণী ওয়ার্ডের ভিতর অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন এক বৃদ্ধা। কিছুদিন আগেই জরুরি বিভাগের দোতলা থেকে নিচে নেমে এসে গলায় গামছা জড়িয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন এক রোগী। একের পর এক এই ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল চত্বরে এই ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি আটকাতে বর্ধমান থানার ও হাসপাতালের সুপারের সহযোগিতায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো উন্নত করা হবে বলেও এদিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এরই পাশাপাশি অসুস্থ আসামিদের যাতে জেলখানার মধ্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যায় সেই ব্যাপারে নির্দিষ্ট চিকিৎসককে নিয়ে জেলখানায় পুলিশি প্রহরার মাধ্যমে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। হাসপাতাল চত্বরের ভিতর এখনও যে সমস্ত রাস্তা খারাপ অবস্থায় আছে সেগুলো দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় রোগী নিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ট্রলির ব্যবস্থা করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এদিন।
এদিন যেসমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হল, যে সমস্ত রোগীদের অবস্থা খুবই সংকটজনক এবং রেফার করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে তার জন্য জেলা পুলিশ সুপারের উদ্যোগে সম্পূর্ণ পুলিশি নিরাপত্তায় গ্রিন করিডোর করে রোগীকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং কলকাতার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানকার হাসপাতালের বেডেরও ব্যবস্থা করা হবে। এরই পাশাপাশি যে সমস্ত মৃত ব্যক্তির পরিবারের লোকেরা অঙ্গ দান করতে চান সে সমস্ত মৃত ব্যক্তির মৃতদেহকেও গ্রিন করিডোর করে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলেও এদিন বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল সুপার জানিয়েছেন, ১ জুন থেকে অনাময়ে ২৪ ঘন্টার জন্য কার্ডিয়লজিস্ট এর ব্যবস্থা করা হবে। হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়াতে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস তাঁর বিধায়ক কোটার তহবিল থেকে সিসিটিভি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এর ফলে হাসপাতালের নিরাপত্তা আরো উন্নত হবে। সুবিধা পাবেন রোগী ও রোগীর আত্মীয়রা। সুপার জানিয়েছেন, এছাড়াও হাসপাতাল সংলগ্ন পুকুর কে নব রূপে সাজিয়ে তুলতে বিডিএ এবং জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সর্বোপরি মাদার এন্ড চাইল্ড কেয়ার হোম তৈরিতে খোদ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন সুপার তাপস ঘোষ।