‘আমাকে খুন করার প্ল্যান করা হয়েছে, তবুও আমি দমবো না, কি ভেবেছে ওরা’ – মমতা

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: “আমাকে খুন করার প্ল্যান করা হয়েছে। নন্দীগ্রামে আমার পায়ে চোট দেওয়া হয়েছে। তবুও আমি দমবো না। যতদিন বাঁচব, বাঘের বাচ্চার মতই বাঁচব।” পঞ্চম দফার ভোটের প্রচারে শুক্রবার বর্ধমানের তিনটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে এসে মেমারীর জনসভা থেকে এই হুংকারই দিলেন আহত বাঘিনীর মত তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দোপাধ্যায়। শুক্রবার আবহাওয়া দপ্তরের ঘোষণা মত ঝড়বৃষ্টির শংকা থাকায় এদিন কার্যত নির্দিষ্ট সময়ের কিছুটা আগে আগেই মমতা বন্দোপাধ্যায় পৌঁছে যান নির্বাচনী জনসভাগুলিতে। এদিন সকাল ১১টায় তিনি পৌঁছান জামালপুরের সেলিমাবাদে। সেখানে জামালপুরের তৃণমূল প্রার্থী অলোক মাঝি এবং রায়নার তৃণমূল প্রার্থী শম্পা ধাড়ার সমর্থনে নির্বাচনী জনসভা করেন। 

বিজ্ঞাপন

এদিন জামালপুরের সভায় এসে মমতা বন্দোপাধ্যায় আক্ষেপ করেন বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনটি বিজেপি জয়ী হওয়ায়। তিনি বলেন, জেতার কথা ছিল মমতাজ সংঘমিতার। কিন্তু দিল্লীর এক বাবু এসে জিতে গেল। কিন্তু এবার নির্বাচন বাংলার, কেন্দ্রের নয়। প্রত্যাশার বেশি এদিন মাঠে লোক ছিল কানায় কানায়। মমতা বন্দোপাধ্যায় এদিন বলেন, যদি বাংলাকে গুজরাট বানাতে দিতে না চান তাহলে ভোটটা তৃণমূলকেই দিতে হবে। জন্ম থেকে মৃত্যু রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পগুলি একে একে তুলে ধরে মমতা বলেন,  শিক্ষা, স্বাস্থ্য,খাদ্য সব ফ্রিতে। আর সেটা আগামী দিনেও এই ব্যবস্থা চালু রাখতে চাইলে তৃণমূলকেই জিতিয়ে সরকার গড়ে দিতে হবে। 
এদিন মমতা বন্দোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গড়লে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য ১০ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড করে দেবেন। যার গ্যারাণ্টার থাকবে খোদ রাজ্য সরকার – অন্য কেউ নয়। সরকারী একাধিক উন্নয়নমূলক পরিকল্পনাগুলি তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলায় তৃণমূল না থাকলে সব বন্ধ হয়ে যাবে। এরপরই তিনি রীতিমত আক্রমণ শানান, বিজেপির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, বিজেপি গায়ের জোরে অশান্তি করছে। কিছু তাঁবেদার, উমেদার রয়েছে। মমতা বলেন, জিতবি যখন তখন আমাদের তৃণমূল প্রার্থীকে মারছিস কেন ? নির্বাচন কমিশনকেও একহাত নিয়ে মমতা বলেন, বিজেপি যা বলছে তাই করছে। আমাদের একটা কথা শুনছে না। বিজেপি একটা আসনেও জিততে পারবে না। মনে হচ্ছে যেন বাংলায় ৩৬৫ করে দিয়েছে। 

মমতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী এত বাজে কথা বলছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এত বাজে কথা বলছেন – কই তাদের জন্য তো নির্বাচন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ হচ্ছেনা। আর মমতা বন্দোপাধ্যায় বললেই নির্বাচন বিধি লঙ্ঘন। নির্বাচন কমিশনের পরপর দুটি নোটিশের প্রেক্ষিতে মমতা বলেন, তিনি মানুষের পাশে আছেন, পাশে থাকবেন – এটাই তিনি জবাব দেবেন নির্বাচন কমিশনকে। তিনি বলেন, তাঁকে নোটিশ দিয়ে স্তব্ধ করা যাবে না। নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন,বিজেপি আপনাদের কে? তিনটে লোক নিয়ে ভেবেছেন কি আপনারা ? তিনি বলেন, সিআরপিএফ নিয়ে ততদিন বলবেন, যতদিন তারা বিজেপির হয়ে কাজ করবেন। তিনি বলেন, তিনি সেনাবাহিনী, পুলিশকে স্যালুট করেন। তাদের চালাচ্ছে অমিত শাহ। অমিত শাহের নির্দেশে তারা এই কাজ করছে।

 মমতা এদিন বলেন, হাতা খুন্তি দিয়ে রান্না হয়। কেউ মারতে আসলে হাতা খুন্তি নিয়ে তাড়া করবেন। বিজেপি ভয় দেখালে শিলনোড়া দেখিয়ে বলবেন, এটা দিয়ে মশলা বাঁটাও হয় আবার দাঁতের গোঁড়াও ভাঙা হয়। তিনি বলেন, ওরা গুণ্ডামি করবে একদিন, আমরা থাকব ৩৬৫ দিন। তিনি বলেন বিহার থেকে বন্দুক আর উত্তরপ্রদেশ থেকে গুণ্ডা নিয়ে এসেছে ওরা। মেমারীর জনসভাতেও একইভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে হুংকার দেন তিনি। মেমারীর তৃণমূল প্রার্থী মধুসূদন ভট্টাচার্য এবং মন্তেশ্বরের প্রার্থী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর সমর্থনে তিনি জনসভায় বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, এই নির্বাচন বাংলার ইজ্জত বাঁচানোর লড়াই। তিনি বলেন, তোলাবাজিতে ওরা ঠাকুরদাদা। আর তৃণমূলকে বলছে তোলাবাজ। 

মমতা এদিন বলেন,অনেক পুলিশকে কেনা হয়েছে। নিচের তলার পুলিশ ঠিক আছে। অমিত শাহ তাদের কাজে লাগাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনার হোম মিনিষ্টারকে সামলান। এরপরই তিনি বলেন, ” আমাকে খুন করার প্ল্যান করা হয়েছে। কত টাকা আছে অমিত শাহের। এতটাকা পাচ্ছে কোথায়? এজেন্সি নিয়োগ করছে। পুলিশের বিরুদ্ধে তিনি বলেন, উপরতলার কিছু পুলিশ মনে রাখবেন ওরা দুদিনের, চমকানি দুদিনের – আমরা ৩৬৫ দিন থাকব। এদিন জোতরামের সভা থেকেও বিজেপিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, হাতপাখার বাঁট নিয়ে তাড়া করবেন। প্রয়োজনে হাওয়াও করবেন আবার দরকার পড়লে পাখার ডাঁট দিয়ে মারবেন, খুব লাগে। জোতরামে বর্ধমান উত্তরের প্রার্থী নিশীথ কুমার মালিক এবং বর্ধমান দক্ষিণের প্রার্থী খোকন দাসের সমর্থনে সভা করেই তিনি হেলিকপ্টারে ফিরে যান কলকাতায়।

আরো পড়ুন