জেলা

বিপুল পরিমাণে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ডের জেরক্স সহ বস্তাবন্দী নথি উদ্ধার মেমারিতে, আলোড়ন

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারি: বেহুলা নদীর ধার থেকে বিপুল পরিমাণে আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, রেশন কার্ডের জেরক্স সহ বস্তাবন্দী নথি উদ্ধার মেমারিতে, ঘটনায় আলোড়ন ছড়িয়েছে এলাকাজুড়ে। ইতিমধ্যেই বিরোধীরা অভিযোগ করেছে, আবাস যোজনার আবেদনপত্র ও নথি নষ্ট করার প্রচেষ্টা করছে শাসক দলের লোকেরা।শনিবার সকালে মেমারি ১ ব্লকের অন্তর্গত আমাদপুর অঞ্চলে কেজা গ্রামে পূর্ব পাড়ার বেহুলা নদীর ধারে বিপুল পরিমাণে সরকারী পরিচয়পত্র সহ আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ব্যাঙ্কের পাশবুকের জেরক্স, পাসপোর্ট ফটো, বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পের আবেদনপত্র উদ্ধার করে গ্রামবাসীরা। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায় শুক্রবার সকাল থেকেই নদীর ধারে বস্তা ভর্তি কিছু কাগজ গ্রামের মানুষ দেখতে পায় কিন্তু শনিবার সকালে বাচ্চারা সেই সব কাগজ নিয়ে খেলা করছিল।

বিষয়টি নজরে আসতেই গ্রামের মানুষ নথিপত্রগুলি দেখতে এলে জানতে পারেন যে এই সব কাগজ গুলো সরকারী আবেদনপত্রের জন্য প্রয়োজনীয় নথির জেরক্স কপি। এমনি মেমারি পৌরসভা, বাগিলা পঞ্চায়েত, আমাদপুর পঞ্চায়েতের ইস্যু করা স্থায়ী শংসাপত্রের জেরক্স, ভোটার লিষ্ট, স্ট্যাম্প পেপারের জেরক্স, ব্যাঙ্কের স্টেটমেন্ট, পাশবুকের জেরক্স, পাসপোর্ট ফটো বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পের আবেদনপত্রও দেখা যায়।

এব্যপারে গ্রামবাসী ফজল মল্লিক, মকবলু মল্লিক বলেন, অনেক গরীব মানুষ আবাস যোজনার ঘর পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন, তাদেরও কিছু আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ও রেশন কার্ডের জেরক্স পাওয়া গেছে। তাদের ধারনা আবাস যোজনার ঘর যাতে না পায় তার জন্য নথি নষ্ট করার জন্য নদীর ধারে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে, সিপিআইএম মেমারি ১ ব্লক কৃষক সভার সম্পাদক জয়দেব ঘোষ জানান, এই ধরনের সরকারী নথি বস্তা বন্দীকরে নদীর ধারে ফেলে যাওয়া বেআইনি কাজ। এর সাথে পঞ্চায়েত যুক্ত আছে। অনেক মানুষ এই এলাকায় আবাস য়োজনায় ঘরের আবেদন করা সত্বেও পায়নি। তাদেরও ভোটার কার্ড, আধার কার্ডের জেরক্স দেখা গেছে। আবাস যোজনার ঘর পাওয়ার জন্য যারা স্থানীয় তৃণমূল নেতারদের টাকা দিতে পারেনি তাদেরই নথি ফেলে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের সমগ্র বিষয়টি তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন।

এ বিষয়ে মেমারি ১ ব্লকের বিডিও ড. আলি মহম্মদ ওয়ালিউল্লাহ জানান বিষয়টি সম্পর্কে তিনি শুনেছেন, খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে আধারকার্ডের মতো সরকারী নথির জেরক্স এই ভাবে যারা ফেলে দিয়ে গেছে তারা ঠিক কাজ করেনি। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করেছেন, যেখানে সেখানে কনসেন্ট লেটার ছাড়া কোথাও আধারের জেরক্স জমা না দেওয়ার জন্য।

মেমারি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সেখ মোয়াজ্জেম জানান, সরকারী পরিচয়পত্র নথি এভাবে ফেলে দেওয়া অবশ্যই বেআইনি। কে বা কারা যুক্ত খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে সিপিআইএম কৃষক সভার সম্পাদকের অভিযোগ ভিত্তিহীন। সরকারী নিয়ম মেনে আবাস যোজনা প্রকল্পের জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয় যা প্রশাসনিক স্তরেই থাকে। এগুলো বিরোধীদের চক্রান্ত মা মাটি মানুষের সরকারকে কালিমালিপ্ত করার জন্য।

মেমারি ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নিত্যানন্দ ব্যানার্জী বলেন, প্রাথমিকভাবে তার অনুমান কোন ব্যক্তি বা সাইবার ক্যাফে সরকারী সুবিধা যাতে মানুষ পায় তার জন্য ডকুমেন্ট জমা নিয়েছিল। কিন্তু এভাবে ফেলে দেওয়া ঠিক নয়। আর সিপিআইএমে র নিজস্ব আর কোন ভোটব্যাঙ্ক নেই তাই গ্রামে অশান্তি ও নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য এই ধরনের অভিযোগ করছে।

শাসক-বিরোধীদের বক্তব্য যাই হোক না কেন উভয়ই রাজনৈতিক লাভ ও ক্ষমতা দখলের কথাই বলবেন, কিন্তু এভাবে সাধানরণ মানুষের সরকারী পরিচয় পত্র আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ডের জেরক্স যে কারণেই নেওয়া হোক না কেন এভাবে বস্তাবন্দী করে ফেলে দেওয়া বেআইনি একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন দেখার প্রশাসন কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এব্যপারে।

Recent Posts