ক্রাইম

বর্ধমানে বেপরোয়া বালির লরির চাকায় পিষ্ঠ এক ব্যক্তি, গ্রেপ্তার চালক, আটক লরি, উত্তেজনা

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: নিয়ম ভেঙে মদ্যপ অবস্থায় চালক ১২চাকা বালির গাড়ি নিয়ে পাড়ার ভিতর দিয়ে যাবার সময় পিষে দিল এক পথচারী কে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পর ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হল সদরঘাট এলাকার সুকান্ত পল্লী এলাকায়। মৃত ব্যক্তির নাম পিকু সরকার ( বয়স আনুমানিক ৩০), বাড়ি  নিলপুর এলাকায়। তিনি বালিঘাটে কর্মরত ছিল। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এদিন সন্ধ্যা ৫.৪০ নাগাদ কাজ থেকে বাড়ি যাচ্ছিলেন পিকু। ঘাট থেকে উঠে এক হাতে সাইকেল নিয়ে রাস্তার এক পাশ ধরে তেলিপুকুরের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন তিনি। এই রাস্তা দিয়ে বালি বোঝাই ভারী গাড়ি যাতায়াত নিষিদ্ধ। তবুও আচমকাই পিছন থেকে আসা একটি ১২ চাকার বালি বোঝাই লরি তাকে পিষে দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পিকু সরকারের। 

স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ, চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিল। এরপর এলাকার কিছু মানুষ ছুটে গিয়ে গাড়িটিকে আটকায়। চালককেও মারধর করে। ঘটনার পরই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় বর্ধমান থানার পুলিশ। মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় তারা। ঘাতক বালির গাড়িটিকে আটক করেছে পুলিশ। চালক কেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় গৃহবধূ কাজল নন্দী বলেন, আমার চোখের সামনেই ঘটনাটা ঘটে গেল। প্রথমে বুঝতে পারিনি। ঘটনার সময় রাস্তায় অন্য কোন যানবাহন বা মানুষ ছিল না। ফাঁকাই ছিল। বালির গাড়িটি সোজা আসছিল, আচমকা রাস্তার একপাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া ওই ব্যক্তির উপর দিয়ে চালিয়ে দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়িটি সামনের দিকে চলে যায়। তখনই নজরে আসে সাইকেল নিয়ে হেঁটে যাওয়া ব্যক্তিকে ধাক্কা মেরে চলে গেছে ওই গাড়িটি। গোটা রাস্তা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। এরপর এলাকার কিছু মানুষ ছুটে গিয়ে কিছুটা দূরে গাড়িটিকে আটকায়। চালককেও মারধর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।

এদিকে দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল ও যে বালিঘাট থেকে লরিটি বালি নিয়ে আসছিল সেই সমস্ত জায়গায় তদন্তে আসেন ডি এস পি ট্রাফিক ২ রাকেশ চৌধুরী, বর্ধমান থানার মেজবাবু পুস্পেন্দু জানা, অফিসার সঞ্জয় মন্ডল সহ বিরাট পুলিশ বাহিনী। যদিও ঘটনার পরই সদরঘাট বালি ঘাটের সমস্ত অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায় কর্মীরা। ফলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েও কাউকেই পায়নি। তবে কিভাবে যে রাস্তা দিয়ে বালির গাড়ি যাতায়াত নিষিদ্ধ, সেই রাস্তা দিয়ে লরিটি কে চালক নিয়ে চলে এলো, তা নিয়ে খোদ এলাকাবাসী থেকে পুলিশ প্রশ্ন তুলেছে।

স্থানীয় এলাকাবাসী দের অনেকেই ক্ষোভের সঙ্গে জানিয়েছেন, বালিঘাট মালিক দের উদাসীনতার কারণে মাঝেমধ্যেই এই ধরনের প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। তবুও এদের হুঁশ ফিরছে না। এদিকে দুর্ঘটনার পর নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে যে রাস্তা দিয়ে ঘাতক লরিটি উঠেছিল সেই রাস্তার মুখে বড় বড় বোল্ডার লাগিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ এই ব্যবস্থা আগে থেকে থাকলে আজ একজনকে বেঘোরে প্রাণে মরতে হতো না। গোটা ঘটনার জোরদার তদন্ত শুরু করেছে বর্ধমান থানার পুলিশ।