পরিবেশ

বর্ধমানে প্রতিমা নিরঞ্জনে পরিবেশ সচেতনতার অভিনব বার্তা

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, বর্ধমান: নদী, পুকুর বা বড় জলাশয়ে প্রতিমা নিরঞ্জনের প্রথা সেই আদিকাল থেকেই চলে আসছে। কিন্তু এর ফলে প্রতিবছরই এই সমস্ত জলাশয়ের জল দূষিত হয়ে পড়ছে। একদিকে যেমন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে জলজ প্রাণীরা, তেমনই পুকুর, জলাশয়ের জল ব্যবহারকারীদেরও সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আর এই প্রথা বদলের ভাবনা ও পরিবেশ ও সচেতনতার বার্তা দিতে এবার প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য আস্ত একটি পুকুর খনন করে ফেললো বর্ধমান শহরের হ্যাচারি মাঠ সৃজন ভূমি সংঘ দুর্গা পুজো কর্তৃপক্ষ। বর্ধমান শহরে এই প্রথম পরিবেশ সচেতনতায় এই ক্লাব এক অন্যন্য নজির সৃষ্টি করলো।

শহর বর্ধমান সন্নিকটে একদম প্রান্তিক এলাকায় গড়ে উঠেছে এই জনবসতি। বছর বারো এই এলাকা গড়ে উঠলেও কোনো দুর্গা পুজো ছিলো না এই এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে এখানে একটি মন্দির তৈরি করে তিন বছর দুর্গাপুজোর আয়োজন করা হচ্ছে। সারা বছর ধরে এই পাড়ার বাসিন্দারা বিভিন্ন ধরনের পরিবেশ সচেতনতার লক্ষ্যে কাজ করে থাকে।এবার তারা দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনেও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে এক অভিনব পন্থা বেছে নিয়েছে। মন্দির সন্নিকটেই একটি ছোট্ট জলাশয় খনন করে সেখানেই এবার তারা প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা করলো।

তাদের উদ্দ্যেশ্য, পুকুর,নদী, জলাশয় যাতে দুষিত না হয়। সংঘের সভাপতি দেবদাস বালা জানান, ‘আমরা সবাই মিলে ঠিক করি প্রতিমা কোনো জলাশয় বা নদীতে ফেলবো না। প্রতিমাতে যে ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় সেগুলি জলাশয়ের অনেক ক্ষতি করে। তাই আমরা এবছর প্রথম এই সিদ্ধান্ত নিলাম।’ দুর্গা পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য সুশান্ত মুখার্জী বলেন, ‘ আমরা মন্দিরের পাশেই একটি খাল কেটেছি। পরে সাবমার্শিবেল চালিয়ে জল ভর্তি করেছিলাম। এমন ভাবে খালটি করা হয়েছে যাতে দুর্গা প্রতিমা সম্পূর্ণভাবে জলে ডুবে যায়। এটিকে একটি ছোট পুকুরও বলা যেতেই পারে। পাশেই আর একটি খাল করেছিলাম যেখানে মূর্তির এবং পুজোর অবশিষ্টাংশ মাটিতে পুঁতে দিয়েছি। আমরা এই বার্তাটাই সকলের কাছে দিতে চাই, পরিবেশ রক্ষা করতে নিজেদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা পুজো মণ্ডপে ফেস্টুন লাগাচ্ছি, ‘জল ধরো, জল ভরো’। আবার সেই জলই দুষিত করছি আমরা। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।’ পুজো কমিটির এই উদ্যোগে পাড়ার সকলেই খুব খুশি ও আনন্দিত। তারা সকলে এদিন মন্দির থেকে প্রতিমা বের করে নাচতে নাচতে পাড়া পরিক্রমা করে এসে এই ছোট খনন করা জলাশয়েই মায়ের নিরঞ্জন সম্পন্ন করলেন।