কাটোয়ায় বাস দুর্ঘটনার জের, জেলা জুড়ে পরিবহন দপ্তরের অভিযান, আটক প্রায় ৩০টি বাস, জরিমানা

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: রবিবার কাটোয়ায় বাস দুর্ঘটনার পরই রীতিমত নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। সোমবার সকাল থেকেই জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে অভিযান। এদিকে দুর্ঘটনায় গতকাল ঘটনাস্থলেই একজন যাত্রী মারা যাবার পর রাতে আরো এক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম তরুণ দাস(৩৭)। তার বাড়ি কেতুগ্রামের কোপা গ্রামে। রবিবার কোপা থেকে কাটোয়া যাওয়ার সময় বাস দূর্ঘটনায় তিনি আহত হন। রেফার হয়ে রবিবার রাতে তাকে বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে সেখানেই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরো দুজন।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত গতকাল দধিয়া – কাটোয়া ভায়া পাঁচুন্দি রুটের একটি যাত্রীবাহী বাসের কেতুগ্রাম – কাটোয়া রোডের ন’নগর মোড়ের কাছে স্প্রিং পাতি ভেঙ্গে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চলন্ত অবস্থায় উল্টে যায়। অভিযোগ ওই বসের ছাদে অনেক যাত্রী চেপে ছিল। বাসটি উল্টে যাবার পর ছাদের যাত্রীদের অনেকেই বাসের নিচে চাপা পড়ে যায়। স্থানীয়দের তৎপরতায় বেশিরভাগ কেই উদ্ধার করা গেলেও একজন যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় কমবেশি প্রায় ৪০জন যাত্রী আহত হয়। আর এই ঘটনার পরই যাত্রীবাহী বাসের ছাদে ওঠার সিঁড়ি ও ক্যারিয়ার খোলার হিড়িক পড়ে যায় বাসের কর্মচারীদের মধ্যে।

প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও অবৈধভাবে বাসের ছাদে রুফ ক্যারিয়ার রেখে যাত্রী তোলার ব্যবস্থা রাখার কারণে ও বাসের স্পিড মিটার (SLD) খুলে রাখা, হেড লাইট, ব্যাক লাইট, উইন্ড স্ক্রিন এবং বাসের চাকার বিপজ্জনক অবস্থার অভিযোগে এবং একাধিক বাসের কাগজপত্র সময় উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় সোমবার পূর্ব বর্ধমানের নবাবহাট বাসস্ট্যান্ড, আলিশা বাসস্ট্যান্ড, দেওয়ানদিঘি মোড়, সগড়াই মোড় সহ কালনা ও কাটোয়া বাস স্ট্যান্ডে অভিযান চালিয়ে পরিবহন দপ্তরের আধিকারিকরা প্রায় ৩০টির উপর বাস আটক করেছে। এদের মধ্যে এদিন নবাবহাট বাসস্ট্যান্ড ও সংলগ্ন রাস্তায় মোটর ভেহিক্যাল ইন্সপেক্টর সুব্রত গোস্বামীর নেতৃত্বে ট্রাফিক পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১০টি বিভিন্ন রুটের বাস কে আটক করে। এরই পাশাপাশি বর্ধমান শহরের মধ্যে দিয়ে যাতায়াতকারী বেশ কিছু বাসের ছাদ থেকে যাত্রীদের নামিয়ে বাস চালকদের সতর্ক করেছে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর চিন্ময় ব্যানার্জী।

সোমবার সকাল থেকেই নবাবহাট, আলিশা সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক বাসের কর্মীদের ছাদের ক্যারিয়ার খুলে ফেলতে দেখা যায়। এরই পাশপাশি অনেক বাসকে আবার রাস্তায় দাঁড় করিয়েই রুফ ক্যারিয়ার খুলে ফেলার উদ্যোগ নেয়। আঞ্চলিক পরিবহন আধিকারিক অনুপম চক্রবর্তী বলেন,’ সারা বছরই আমরা পরিবহন দপ্তরের নিয়ম লঙ্ঘন করে যে সমস্ত বাস বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। গতকাল কাটোয়ায় একটি দুর্ঘটনার পর জেলা শাসকের নির্দেশে আজ স্পেশাল অভিযান চালানো হচ্ছে।

মূলত যে সব বাসের রুফ ক্যারিয়ার আছে তাদের খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করা হয়েছে জরিমানা। অভিযানে ধরা পড়েছে অনেক বাসের এসএলডি (স্পিড লিমিট ডিভাইস) খুলে রাখা আছে। যেটা পরিবহন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এছাড়াও অনেক বাস রিসোল করা টায়ার দিয়ে চলছে বলে লক্ষ্য করা গেছে, যেটা যাত্রীবাহী বাসের ক্ষেত্রে আইনবিরুদ্ধ কাজ। ফলে এদিনের অভিযানে একাধিক বাস কে আটক করা হয়েছে। কিছু বাসের সমস্ত কাগজ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও রাস্তায় চলছিল। তাদের কেও আটক করা হয়েছে। এইসব বাসগুলোর বিরুদ্ধে আইনমাফিক ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জরিমানা করা হচ্ছে। এই ধরনের অভিযান আগামীদিনেও চলবে।’

এদিকে পরিবহন দপ্তরের লাগাতার অভিযান চলার পরেও এবং বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহী বাস এই দপ্তর থেকেই ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়ার পরেও কিভাবে দিনের পর দিন অনিয়ম করেই বাস চালিয়ে যাচ্ছে মালিকপক্ষ, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে খোদ জেলা পরিবহন দপ্তরের বিরুদ্ধেই। যাত্রীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়ার সময় বাস মালিকরা বাসে নতুন টায়ার লাগিয়ে, এস এল ডি লাগিয়ে, কাগজপত্র আপ টু ডেট করে পেশ করে দপ্তরে। কিন্তু সার্টিফিকেট পেয়ে যাওয়ার পরই বাসের ইঞ্জিন থেকে এস এল ডি ( স্পিড লিমিট ডিভাইস) খুলে দেন অনেক চালকই। এমনকি নতুন টায়ার ভাড়া করে বাসে লাগিয়ে আধিকারিকদের দেখিয়ে নেওয়ার পর ফের পুরনো অর্থাৎ রিসোল টায়ার লাগিয়ে বাস চালানো হয়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর ফের টনক নড়ে দপ্তরের।

যাত্রীদের অভিযোগে কার্যত শিলমোহর দিয়েছে পুলিশও। জেলার পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন বাসের ফিটনেশ সার্টিফিকেটের বিষয়ে জেলাশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ সুপার বলেন, ‘পুলিশি নজরদারি শুরু হয়েছে। এরপর থেকে বাসের ছাদে লোক উঠলে সেই বাস আটক করা হবে। পরবর্তী ব্যবস্থা পরিবহন দপ্তর নেবে। কাটোয়া, কেতুগ্রামে মঙ্গলবার আমি নিজে অভিযান চালাবো।’

আরো পড়ুন