বাসস্থান ও খাবার দখলের লড়াই, সন্ধ্যা নামতেই শুরু হচ্ছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, ঘোর বিপাকে এলাকাবাসী দ্বারস্থ প্রশাসনের

Souris  Dey

Souris Dey

সৌরীশ দে,পূর্ব বর্ধমান: একদিকে বসবাসের জায়গা দখল, অন্যদিকে খাদ্যের সংকট – এই দুইয়ের লড়াইয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে রীতিমত রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের দামোদর তীরবর্তী মেমারী ১ব্লকের অধীনে পাল্লা (পূর্ব, মধ্য, পশ্চিম), পাল্লা ক্যাম্প, পাল্লা মোড়, মামুদপুর, সরমপুর, হাসপাতাল পাড়া, কলানবগ্রাম, দাদপুর, বেলুট, নগরকোনা সহ জামালপুর ব্লকের কিছু অংশ যেমন দাদপুর, সালানপুর, বর্ধমান ২ ব্লকের বড়শুল, বাজেশালেপুর এলাকাজুড়ে। গত মাস খানেক ধরেই রাতের অন্ধকারে চলছে অতর্কিত হামলা। আর দলবদ্ধভাবে শক্তিশালী সেই দলের আক্রমণের মুখে পরে কার্যত রক্তাক্ত, জখম হচ্ছে আরেক পক্ষ। মঙ্গলবার এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের বিষয়ে জানিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়েছে পাল্লারোড পল্লীমঙ্গল সমিতির পক্ষ থেকে। বন দপ্তর, জেলাশাসক ও সভাধিপতি কে এই দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে। উপদ্রুত এলাকায় পদক্ষেপ বলতে জখমদের খুঁজে বের করে স্থানীয় কিছু মানুষ শুশ্রূষা চালাচ্ছে। এর বাইরে নাকি তাদেরও কিছু করার নেই আপাতত।

বিজ্ঞাপন

কি এমন ঘটছে? কারাই বা এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়েছে! কেন এমন ঘটনা দামোদর সংলগ্ন এলাকাগুলিতে প্রায়ই রাতে ঘটে চলেছে? মামুদপুরের বাসিন্দা শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় পেশায় পালশিট টোল প্লাজার কর্মী এই ঘটনার প্রসঙ্গে বলেন, “মারাত্মক সমস্যার মধ্যে আমাদের পরতে হচ্ছে প্রতিদিন। প্রায়ই সন্ধ্যার পর থেকে একদল শিয়াল এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এলাকার যত কুকুর আছে তারা শিয়াল গুলোকে বুঝতে না পেরে তাদের দিকে তেড়ে যাচ্ছে। শিয়ালের দলে থাকছে প্রায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৫ থেকে ১৮ টা শিয়াল। ফলে কুকুর গুলো রিতিমত আক্রমণের মুখে পড়ছে। বেশ কিছু কুকুরের শরীরের বিভিন্ন অংশের মাংস কামড়ে তুলে দিয়েছে শিয়ালেরা। অনেক কুকুরের মাথায় আবার কামড়ের ক্ষত লক্ষ্য করা গেছে।

শিয়ালগুলো যখন এলাকায় ঢুকছে তখন কুকুরগুলো ত্রাহি চিৎকার শুরু করছে। এলাকার মানুষ রীতিমত আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আমার বাড়ির পাশেই একটি খামার রয়েছে। আতঙ্কে সন্ধ্যার পর আর সেখানে যেতে পারছি না। এলাকার অনেকেই প্রথম দিকে বুঝতে পড়ছিলেন না যে তাদের বাড়ির হাঁস, মুরগি, ছাগল বাচ্ছা কিভাবে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। এলাকায় শিয়ালের উৎপাতের বিষয় নজরে আসার পরই তারা নিশ্চিত হয় এই কাজ শিয়ালেরই। আমরা এই সমস্যার বিষয়ে খুব শীঘ্রই বন দপ্তর থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে প্রতিকারের জন্য জানাবো।”

এদিকে বড়শুল, পাল্লা, মামুদপুর সহ বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পিছনে বালি মাফিয়াদের দৌরত্মকেই দায়ী করেছেন। তাদের অনেকেই জানিয়েছেন, দামোদর নদের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে দীর্ঘদিন ধরেই প্রচুর শিয়াল রয়েছে। এরআগে শিয়ালের ডাক শোনা যেতো অনেক দূর থেকে। ইদানিং নদী থেকে যত্রতত্র বালি তোলার কাজ করছে একশ্রেণীর অসাধু বালি কারবারিরা। এই বালি তোলার কাজ প্রধানত চলে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত। আর এর ফলে কার্যত বাসস্থানের সংকট দেখা দিয়েছে শিয়ালদের। একই সাথে তৈরি হয়েছে খাদ্যের অভাব। ফলে শিয়ালরা সদলবলে এবার খাদ্যের সন্ধানে ঢুকে পড়ছে জনবসতি পূর্ণ এলাকায়। এমনকি এলাকার অব্যবহৃত জায়গা, অপেক্ষাকৃত নির্জন জঙ্গল এলাকাকেই এখন বেছে নিচ্ছে নিজেদের আস্তানা হিসেবে। আর সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই যখন মানুষের চলাচল কমে আসে তখনই খাবারের সন্ধানে গর্ত থেকে বেরিয়ে আসছে শিয়ালের দল।

একই সমস্যার কথা জানিয়েছেন, পাল্লা রোডের বাসিন্দা সন্দীপন সরকারও। তিনি বলেন, “একদিকে শিয়ালরা বিপন্ন, তারা বাসস্থানচ্যুত হচ্ছে। অন্যদিকে এলাকায় নিজেদের কর্তৃত্ব কায়েম রাখতে অনাহুত এই শিয়ালের দলের সঙ্গে লড়াই করে প্রতিদিন ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে এলাকার কুকুরেরা। দামোদর নদ সংলগ্ন বিস্তীর্ণ অঞ্চলের একাধিক গ্রামের এখন এটাই সমস্যা। সন্ধ্যার পর ঘরের বাইরে বেরোতেই ভয় পাচ্ছেন অনেকে। কিভাবে এই সমস্যার মোকাবিলা করা যাবে তার জন্য আমরা বন দপ্তর ও জেলাশাসক কে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। একইসাথে জখম কুকুরদের চিকিৎসার জন্য পশুপ্রেমী সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি।”

জেলা বিভাগীয় বনাধিকারিক নিশা গোস্বামী কে এই সমস্যার প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ আপনার কাছ থেকেই এই ঘটনার কথা প্রথম শুনলাম। এখনও উপদ্রুত এলাকাগুলো থেকে কোনো অভিযোগ আমি পাইনি। তবে ঘটনার বিষয় খতিয়ে দেখার জন্য বন দপ্তরের একটি টিম কে ঘটনাস্থলে পাঠানো হবে। রিপোর্ট পাওয়ার পরই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

আরো পড়ুন