বর্ধমানে সরকারি অনুমোদন ছাড়াই বেআইনি বালি মজুদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের অভিযান, হদিস প্রায় ৩০লক্ষ সিএফটি বালির

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের অগোচরে দামোদর নদ থেকে লক্ষ লক্ষ সিএফটি (CFT কিউবিক ফিট) বালি বেআইনি ভাবে তুলে মজুদ করা হয়েছে ইদিলপুর এলাকায়। জেলা ভূমি রাজস্ব দপ্তরের প্রাথমিক অনুমান যার পরিমাণ প্রায় ২৫ থেকে ৩০লক্ষ সিএফটি। যদিও কে বা কারা এই বিপুল পরিমাণ বালি ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই মজুদ করেছে সে ব্যাপারে কার্যত কোন তথ্যই নেই জেলা ভূমি দপ্তরের কাছে। মঙ্গলবার বর্ধমান ১ ব্লক ভূমি আধিকারিক, বিডিও ও পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের আধিকারিকরা যৌথভাবে এই অবৈধ বালি মজুদের প্রকৃত অবস্থা খতিয়ে দেখতে পরিদর্শনে আসেন দামোদরের ধারে ইদিলপুর এলাকায়।

বিজ্ঞাপন

বর্ধমান ১ব্লক ভূমি আধিকারিক বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘ এদিন ইদিলপুর এলাকায় একটি অবৈধ মজুদ বালির ইন্সপেকশনে  যাওয়া হয়েছিল। কে বা কারা এই বালি প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়া নদী থেকে তুলে মজুদ করেছে সে ব্যাপারে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই বেআইনি মজুদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে। এরপর সরকারি ভাবে নিয়ম মেনে এই বালির নিলাম করা হবে। প্রাথমিকভাবে এখানে ২৫থেকে ৩০লক্ষ ঘন ফুট বালি থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। যে সমস্ত সরকারি বালি ঘাট ব্যবসায়ী আছেন তাদের কে এই নিলাম প্রক্রিয়ায় আহ্বান জানানো হবে।’

যদিও এই বিপুল পরিমাণ বালি কিভাবে নদী থেকে তুলে দিনের পর দিন একট বিশাল জায়গা জুড়ে কে বা কারা প্রশাসনের নজর এড়িয়ে মজুদ করলো সেই প্রশ্নের কোন সদুত্তর এদিন পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, সরকারি নিয়মের বাইরে গিয়ে নদী থেকে অতিরিক্ত বালি তুলে মজুদের বিরুদ্ধে জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তর প্রতি বছর অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণ অবৈধ মজুদ বালি বাজেয়াপ্ত করে। পরবর্তীতে সেই সমস্ত জায়গার মজুদ বালির পরিমাণ অনুযায়ী চলতি দরের দের গুন হিসেবে জরিমানা করা হয়। সেই ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী কেউই আর সেই বালি বিক্রি করতে পারে না।

ভূমি রাজস্ব দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাজেয়াপ্ত বালির জরিমানা অনাদায়ী থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাজেয়াপ্ত করা মজুদ বালির নিলাম করা হয়। যদিও এই নিয়মের সম্প্রতি পরিবর্তন হয়েছে বলে দপ্তর সুত্রে জানা গেছে। এক্ষেত্রে এখন জরিমানার পরিবর্তে সরাসরি নিলাম করার প্রক্রিয়া জারি করা হয়। সরকারি অনুমোদন প্রাপ্ত বালি ঘাট মালিকদের সেই নিলামে অংশ গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়।

কিন্তু বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগ সামনে আসে যে, প্রশাসনিক ভাবে বাজেয়াপ্ত বালির স্টক থেকেও বালি মাফিয়ারা বালি চুরি করে অনেক সময় বিক্রি করে দিচ্ছে। এমনকি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেই সমস্ত মজুদ বালির পরিদর্শনে গিয়েও বাজেয়াপ্ত বালি নির্দিষ্ট পরিমাণে না থাকার প্রমাণও পাওয়া যায় বলে ভূমি দপ্তরের একাংশ সুত্রে জানা গেছে। স্থানীয় ও বৈধ বালি ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, অবৈধ ভাবে মজুদ বালি কিভাবে চালান ছাড়া বিক্রি হয়ে যাচ্ছে?

উল্লেখ্য মজুদ বালি থেকে বালি বিক্রি শুরু হয় প্রধানত বর্ষাকালীন নদীর বালির ঘাট গুলো বন্ধ হওয়ার পর। তার আগে কোথায়, কারা বালি তুলে মজুদ করছে তার যদি সঠিক প্রশাসনিক  পর্যবেক্ষণ থাকে তাহলে এই ধরনের বিপুল পরিমাণ বালি বেআইনি ভাবে কেউই মজুদ করতে পারে না। হয়তো এখানে প্রশাসনিক ভাবে নজরদারির গাফিলতি থাকছে, আর এই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণীর বালি মাফিয়ারা। ক্ষতি হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সরকারি রাজস্বের বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত।

আরো পড়ুন