বর্ধমানে স্কুলের অনৈতিকভাবে চাওয়া টাকা দিতে অস্বীকার ছাত্রের, স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, বর্ধমান: উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের নির্দেশ বহির্ভূতভাবে একাদশ শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন এর জন্য স্কুল রীতিমত নোটিশ জারি করে ছাত্রদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা নিচ্ছে। আর এই টাকা দিতে না পারায় দুঃস্থ ছাত্রকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে বুধবার দুপুরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল বর্ধমান শহরের বড়বাজার বিসি রোডের সিএমএস হাই স্কুলে।

বিজ্ঞাপন

এব্যাপারে ছাত্রের মা বিউটি বিশ্বাস ইতিমধ্যেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিন্টু রায়ের বিরুদ্ধে জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর (মাধ্যমিক) ও বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাসের কাছেও প্রধান শিক্ষকের অভব্য আচরণের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন ছাত্রটির পরিবার। বিধায়ক বিষয়টি জানতে পেরে বর্ধমান পুরসভার কাউন্সিলার তথা স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির ভাবি সভাপতি রত্না রায় কে স্কুলে পাঠান খোঁজ নিতে। অভিযোগ, কাউন্সিলারের অনুরোধও রাখেননি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিন্টু রায়। অভিযোগ, এই স্কুলেরই ছাত্র বিশাই বিশ্বাস মাধ্যমিকে ৫৮০ নম্বর পেয়ে এবারে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হয়।

একাদশ শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন করানোর জন্য স্কুলের পক্ষ থেকে একটি নোটিশ জারি করা হয়েছিল। প্রধান শিক্ষকের সই করা সেই নোটিশে রেজিস্ট্রেশন ফি এর পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ১১৫০টাকা। ইতিমধ্যেই বিশাই বিশ্বাস স্কুলের অ্যাডমিশন ফি ২৪০টাকা এবং ল্যাবরেটরি ফি ১৮০টাকা, মোট ৪২০টাকা স্কুলে জমা করে দিয়েছে। এরপর বাড়তি টাকা তার পারিবারিক আর্থিক দুরাবস্থার কারণে দিতে অপারগ বলার কারণে তার রেজিস্ট্রেশন করাচ্ছে না স্কুল বলে ছাত্রের মা বিউটি বিশ্বাস এদিন সংবাদ মাধ্যমের কাছে অভযোগ করেন।

এমনকি এরপরই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিন্টু রায়ের কাছে এই বাড়তি টাকা আপাতত মুকুব করার জন্য আবেদন জানাতে গেলে ছাত্রের মা বিউটি বিশ্বাস অভিযোগ করেছেন, প্রধান শিক্ষক তাঁকে বলেন,” টাকা না থাকলে অন্য সস্তা স্কুলে নিয়ে গিয়ে ছেলেকে ভর্তি করুন, আমাদের মতো নামি স্কুলে পড়াতে গেলে এই টাকা দিতে হবে।” অভিযোগ এরপরই তার সঙ্গে অভব্য আচরণ করে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়। বিউটি বিশ্বাস বলেন,” প্রধান শিক্ষককে ছেলেকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট ( টিসি ) দিয়ে দিতে বললেও তিনি সেটা দিতেও অস্বীকার করেন এবং স্কুল থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন।” স্বাভাবিকভাবেই শহরের এই নামি স্কুলে এই ধরনের ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই নিন্দার ঝড় উঠেছে। পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমের কাছে ঘটনার বিষয় জানার পরই রীতিমত নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক শ্রীধর প্রামাণিক বলেন, ‘অভিযোগ জমা পড়েছে শুনেছি। খতিয়ে দেখব বিষয়টি।’ অতিরিক্ত জেলাশাসক(শিক্ষা) সানা আকতার বলেন, ‘অভিযোগ দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার নির্ধারিত টাকার বেশী কোন টাকা নেওয়া যাবে না কোনভাবেই।’ বিধায়ক খোকন দাস বলেন, ‘ওই প্রধান শিক্ষক মিন্টু রায় স্কুলে সরকারের বদনাম করছেন। জোর করে টাকা নিচ্ছে ছেলেদের কাছ থেকে। আমি ফোন করে ওনাকে এসব না করার জন্য বলেছি। কাউন্সিলার কে পাঠিয়েছি। তারপরেও কি করে ছাত্রকে স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয় সেটাও আমি দেখব এবারে।’

কাউন্সিলার ও বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির ভাবি সভাপতি রত্না রায় বলেন, ‘আমি স্কুলে গিয়ে মিন্টু রায় কে বলেছি, সরকার নির্ধারিত টাকা ছাড়া কোন বাড়তি টাকা যেন আদায় না করা হয়। এভাবে স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে ছেলেদের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে পারেননা উনি। সেটা উনি করছেন।’ টিএমসিপির জেলার সভাপতি মহম্মদ সাদ্দামের দাবি, “এ ভাবে টাকা আদায়ের নোটিশ সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। সরকারি নির্দেশিকার বাইরে গিয়ে এ ভাবে টাকা চেয়ে নোটিশ দেওয়া খুবই অন্যায় হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে।“

অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকের দাবি, “স্কুলের নোটিশে রেজিস্ট্রেশন এর জন্য এক হাজার একশো পঞ্চাশ টাকা নেবার কথা যেটা লেখা হয়েছে সেটা আমার ভুল হয়েছে। স্কুলে দুদিনের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য অভিভাবকদের মিটিং ডেকে আমরা এক হাজার টাকা করে নেবার কথা জানিয়েছিলাম। রেজিস্ট্রেশন করতে কেউ বাধা দেয়নি। ওই ছাত্র তিন মাসে আগে ক্লাসের ভিতর শিক্ষককে তাড়া করেছিলেন, অন্য ছাত্ররা আটকে দেয়। দু’দিন আগে এক শিক্ষককে ফেলেও দেয়। সে সব ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্যে অভিভাবকরা মিথ্যা রটনা করছেন। ওই ছাত্রকে টিসি দেওয়ার জন্যে শিক্ষকরা দাবি করেছিলেন। ওই ছাত্রটি স্কুলের জন্য ‘পয়জন’ একটি ‘বিষ ছাত্র’। স্কুলে থাকলে স্কুলের ক্ষতি হবে।’ প্রধান শিক্ষকের এই বক্তব্যের পরই অভিভাবকদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, একজন শিক্ষক কিভাবে একজন ছাত্রকে ‘পয়জন ‘ অর্থাৎ ‘ বিষ ‘ বলে আখ্যা দিতে পারেন। উনি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়ে এই ভাষায় যদি একজন ছাত্রকে বলতে পারেন তাহলে বাকি ছাত্রদের প্রতি তাঁর মানসিকতা নিয়ে রীতিমত প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে।

আরো পড়ুন