বাম আমলে প্রাথমিকে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ, আরটিআই করেও মেলেনি জবাব

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সাম্প্রতিককালে গোটা রাজ্য জুড়ে যে আলোড়ন চলছে তারই মধ্যে এবার নতুন সংযোজন ২০০৯ সালে বাম আমলে হওয়া প্রাথমিকের নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ। বাম আমলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুলেছেন বর্ধমানের এক চাকরি প্রার্থী। তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই) নিজের প্রাপ্ত নম্বর ও মেধা তালিকায় থাকা সর্বশেষ প্রার্থীর প্রাপ্ত নম্বর জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনও উত্তর পাননি তৎকালীন বাম সরকারের নিয়গকর্তাদের কাছ থেকে। তাঁর অভিযোগ, বাম আমলের ওই নিয়োগে অস্বচ্ছতা ছিল বলেই হয়তো তাঁকে ওই তথ্য দেওয়া হয়নি। বর্ধমানের ওই চাকরি প্রার্থী কৃষ্ণকান্ত মল্লিক আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে মামলার প্রস্তুতিও শুরু করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বর্ধমান শহরের লোকো এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণকান্ত। তিনি জানান, ২০০৯ সালে বর্ধমান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ শিক্ষক নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল তাতে আবেদন করেছিলেন। লিখিত পরীক্ষা হয়েছিল ২০১০ সালের ২ মে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। ওই বছরেরই ২১ জুন বর্ধমান রাজ কলেজের ১০ নম্বর টেবিলে তিনি ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন। ওই বছরই জুলাই মাসের শুরুর দিকেই প্যানেল প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। কিন্তু সেই প্যানেলে নাম ছিল না কৃষ্ণকান্ত মল্লিকের। শনিবার তিনি বলেন, “আমি পরীক্ষা ও ইন্টারভিউ ভাল দিয়েছিলাম। চাকরি পাবো নিশ্চিত ছিলাম। কিন্তু প্যানেলে নাম ওঠেনি। তাই ওই বছরই ১২ জুলাই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে আরটিআই করে জানতে চেয়েছিলাম লিখিত পরীক্ষায় কত, অ্যাকাডেমিক স্কোর কত, ইন্টারভিউ ও এক্সট্রা করিকুলাম অ্যাক্টিভিটিতে কত নম্বর পেয়েছি।

পাশাপাশি জানতে চেয়েছিলাম মেধাতালিকায় থাকা সর্বশেষ জনের প্রাপ্ত নম্বরই বা কত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা আমার আরটিআই-এর কোনও জবাব দেয়নি।” তিনি আরও বলেন, “আরটিআই করলে আমাকে তথ্য জানানোটাই নিয়ম। সেই নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে বলেই আমাকে সেই তথ্য জানানো হয়নি। আজ ১৩ বছর হয়ে গেল আমি জানতে পারলাম না কত নম্বর পেয়েছিলাম।” কৃষ্ণকান্তবাবু জানান, সেই সময় আরও অনেকেই আরটিআই করেছিলেন মেধাতালিকা নিয়ে সন্দিহান থাকায়। তারাও কোনও জবাব পায়নি তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে। তিনি বলেন, “আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছি। ওই সব চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি চাই আমি আরটিআই করে যা যা জানতে চেয়েছিলাম তা জানানো হোক।”

কৃষ্ণকান্তবাবু বর্তমানে শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেন। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন। সম্প্রতি কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের আগে তৈরি করেছিলেন শর্ট ফিল্ম। ফিফা সেটার স্বীকৃতি দিয়েছে। বাম আমলের নিয়োগ নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল। দলের রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, “সিপিএমের আমলে চিরকুটে চাকরি হতো। পরীক্ষা না দিয়েই নিয়োগ করতো। সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী কীভাবে চাকরি পেয়েছিলেন এখন সবাই জেনে গিয়েছে কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বাম আমলের কেঁচো খুঁড়লে কেউটে বেরবে। সব দুর্নীতি সামনে আসবে। জনগণই সিপিএমের নিয়োগ দুর্নীতি সামনে আনবে।”

সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ সাইদুল হক একসময় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানও ছিলেন। যদিও এই নিয়োগের সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন না। সেই সময় নীহাররঞ্জন রক্ষিত ও তার পরে সিরাজুল ইসলাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। কৃষ্ণকান্তবাবুর অভিযোগ প্রসঙ্গে সাইদুল হক সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেন, “সেই সময় স্বচ্ছতার সঙ্গেই নিয়োগ হয়েছিল। কোনও অনিয়ম হয়নি।” সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, “এত দিন ঘুমোচ্ছিল। ২০০৯ থেকে আজ ২০২৩ সালের ২৫ মার্চ, এত দিন কোথায় ছিল। পাগল ছাড়া এতদিন পর কেউ এমন অভিযোগ করবে না। এর কোনও মূল্য নেই। তৃণমূলের পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি সামনে এসেছে। তাই এখন এসব করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। তৃণমূল নিজেদের হাসাষ্পদ করে তুলছে।

আরো পড়ুন