ক্রাইম

গলসিতে নদী থেকে চুরি করা বালি দিয়ে সরকারি রাস্তা তৈরির অভিযোগ, নির্বিকার পুলিশ ও ভূমি দপ্তর

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,গলসি: সরকারি রাস্তার কাজ চলছে নদী থেকে চুরি করা বালি দিয়ে। ফলে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে প্রশাসনের নজরদারির অভাবে বালি মাফিয়াদের রমরমা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। গলসি-গোহগ্রাম রাস্তা তৈরির কাজ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। অভিযোগ বুন্দুটিয়া, পাথরহাটি, সুন্দলপুর থেকে গোহগ্রাম এই রাস্তার কাজে ঠিকাদার যে বালি ব্যবহার করছে সেই বালি আসছে সম্পূর্ন অবৈধভাবে। এমনই অভিযোগ করেছেন গোহগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিমল ভক্ত।

উপপ্রধান বিমল ভক্ত এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘যে এজেন্সি রাস্তা তৈরি করার বরাত পেয়েছে তার তো এটা ব্যবসা। রাস্তার কাজ যথারীতি বালি ও অন্যান্য সামগ্রীর মিশ্রণেই হচ্ছে। কাজ কিভাবে হচ্ছে সেটা তো প্রশাসনকেই নজর রাখতে হবে। ঠিকাদার যে বালি কিনছে সে তো টাকা দিয়েই কিনছে। কিন্তু সরকার রয়্যালটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কারণ ঠিকাদার যে বালি দিয়ে রাস্তার কাজ করছে সেটা অবৈধ বালি ঘাট থেকে তুলে নিয়ে আসা হচ্ছে। কোন বৈধ চালান ছাড়াই। তাহলে প্রশাসন কেন ঠিকাদার কে বলছে না রাস্তার কাজ করার জন্য যে বালি কেনা হচ্ছে সেটা যেন বৈধ কোন ঘাট থেকে চালান সহ কেনা হয়। যাতে সরকার তার রয়্যালটি ঠিকঠাক পায়। ঠিকাদারের তো বালি নিয়ে কাজ। বিএলআরও ও এডিএম এল আর -এর তো এই বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার যাতে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ে। ঠিকাদার কে নির্দেশ দেওয়ার দরকার বৈধ বালি ঘাট থেকে বালি কেনার বিষয়ে। কারণ রাস্তার কাজ চলছে সম্পূর্ন অবৈধ ও চুরির বালি দিয়ে।’

বিমল ভক্ত বলেন,’ গোহগ্রামে কোন বৈধ বালি ঘাট এই মুহূর্তে নেই। তবুও দীর্ঘদিন থেকেই অবৈধ ভাবে বালি তুলে পাচার করার কাজ করছে এক শ্রেণীর বালি মাফিয়ারা। পুলিশ ও প্রশাসন সবকিছু দেখেও কিছু দেখেনা। কিন্তু কেউ যদি নিজের বাড়ি বা ব্যক্তিগত কাজের জন্য এই বালি ট্রাক্টরে করে নিয়ে যায় তাকে ধরে কেস দেওয়া হচ্ছে। অথচ যারা বালি চুরি করে দিনের পর দিন অবৈধভাবে ব্যবসা করছে তাদের কে নাকি দেখতেই পায় না এরা। বনবুড়িতলার কাছে যে বালির স্টক টা রয়েছে, গতবছর থেকে প্রশাসন সেই স্টক অবৈধ বলে কেস করে রেখেছে। আরো কয়েকটি অবৈধ স্টক বালি রয়েছে। তাসত্ত্বেও সেই স্টক থেকেই বালি পাচার হয়ে যাচ্ছে। ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিকরা মেপে দেখলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

আমি বিএলআরও কে রিপোর্ট করেছি, কিন্তু তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। সরাসরি গোহগ্রামে কোন বালি ঘাট নেই। কিন্তু সেখান থেকেই জেসিবি দিয়ে বালি তুলে ডাম্পারে করে বালি পাচার হয়ে যাচ্ছে। সেখানকার ছবিও তুলে বিএলআরও কে পাঠিয়েছি। বিএলআরও বলেছেন থানার বড় বাবুকে বিষয়টি তিনি জানিয়েছেন, থানার বড়বাবু তাকে জানিয়েছেন, যে ব্যক্তি বালি তুলছে সে নাকি একটা টুর্নামেন্টের প্রাইজ দিয়েছিল। আমি বিএলআরও সাহেব কে বলেছি, যদি টুর্নামেন্টে প্রাইজ দিলেই নদী থেকে বালি চুরি করে কারবার চালানো যায়, তাহলে তো বালি তোলার জন্য আর সরকারি অনুমতির দরকার নেই। টুর্নামেন্ট করবে, পুলিশ খেলবে আর তাহলেই ওরা বালি তোলার অনুমতি পেয়ে যাবে।’

এদিকে স্থানীয় গ্রামবাসীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, রাস্তা তৈরির কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার কম টাকায় বালি পাওয়ার লোভে বেআইনিভাবে চুরির বালি কিনে রাস্তার কাজে ব্যবহার করছে। এরফলে রাস্তার কাজও শেষ হতে দেরী হচ্ছে। কারণ চুরির বালি যখন যেমন পাওয়া যাচ্ছে সেইমত ঠিকাদার কাজ করছে। আর এরমাঝে সমস্যায় পড়ছে এলাকার বসবাসকারীরা। প্রশাসনের এব্যাপারে নজর দেওয়া দরকার। এই প্রসঙ্গে অতিরিক্ত জেলাশাসক ( ভূমি ও ভূমি রাজস্ব) রিশিন ইসমাইল বলেন, আমার কাছে এব্যাপারে কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ আসলে ঘটনার বিষয়ে খতিয়ে দেখা হবে। তবু এই বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট আধিকারিক দের জানাচ্ছি।’ পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, এই ধরনের কোন অভিযোগ থানায় জমা পড়েনি। তবে ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।

Recent Posts