ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মেমারি: আদিবাসীদের পবিত্র স্থান জাহের থানের অসম্মান করার বিরুদ্ধে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হলো মেমারি ১ ব্লকের অন্তর্গত দুর্গাপুর অঞ্চলের চোটখন্ড উত্তর এলাকার তালঘেরা গ্রামে। প্রসঙ্গত আদিবাসী সাঁওতাল জনজাতির লৌকিক দেবতার মধ্যে অন্যতম জাহের বুড়ি, জাহের হাড়াম, মারাংবুরু, মড়েক, তুরুইক, সীমাসাড়ে প্রভৃতি। এই জনজাতির পূজা-পার্বণ স্থল ‘জাহের থান’ নামে পরিচিত। জাহের থান সাঁওতালদের সবচেয়ে পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি গ্ৰামের এক প্রান্তে অবস্থিত হয়। সাঁওতালদের গ্রাম নির্মাণের সাথে জাহের থানের নিবিড় সম্পর্ক আছে।
সেরকমই একটি পবিত্র ‘জাহের থান হল পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি ১ ব্লকের অন্তর্গত দুর্গাপুর অঞ্চলের চোটখন্ড উত্তর এলাকার তালঘেরার জাহের থান – যেটি ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এলাকার আদিবাসীদের অভিযোগ, স্থানীয় বাসিন্দা উন্নতি ঘোষ, স্বামী লাল্টু ঘোষ পবিত্র জাহের থানের তাদের দেবদেবী ছুঁড়ে ফেলে ভেঙে দিয়েছে। পবিত্র স্থানে গোবর ফেলে জাহের থান প্রাঙ্গনটি নোংরা করেছে। এছাড়াও তারা আদিবাসী দেখা মাত্রই অকথ্য ভাষায় কটুক্তি করেছেন। এবিষয়ে ইতিমধ্যে আদিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে মেমারি থানা, মেমারি ১ বিডিও, পূর্ব বর্ধমান জেলাশাসক ও এসডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের পক্ষ থেকে শিক্ষক মহাদেব টুডু বলেন, আদিবাসীদের ধর্মস্থান অপবিত্রকারীকে ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা না চাইলে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেওয়া হয়। এছাড়াও তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূল শাসিত দুর্গাপুর অঞ্চলের আদিবাসীদের নানান অভিযোগ ও সমস্যা সমাধানের কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দের জানালেও বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ তারা করেননি। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী আদিবাসীদের সুরক্ষা সম্মানের কথা বলছেন, সেখানে তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা এই বিষয়ে একপ্রকার মুখ ফিরিয়েই থাকছেন। তাদের কোন হেলদোল নেই। তিনি আরও দাবী করেন, ভেস্টেড ল্যান্ডে তিনপুরুষ ধরে আদিবাসীদের জাহের থান আছে। সেখানে কী করে উন্নতি ঘোষের নামে কিছু অংশ রেকর্ড হয়ে গেল? এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন মহাদেব টুডু থেকে আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিরা।
স্বাভাবিকভাবেই এদিন জাহের থানের দেবদেবীকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া, জাহের থানকে অসম্মান ও কলুষিত করা, সাঁওতাল সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ভাবাবেগের উপর পরিকল্পিত ভাবে উস্কানি দেওয়ার জন্য অবিলম্বে উন্নতি ঘোষ, লাল্টু ঘোষ, তার দুই পুত্র, পুত্র বধূকে গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়ে শুক্রবার মেমারি ১ বিডিও প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ দেখায় শতাধিক আদিবাসী মানুষ। এরপরই মেমারি ১ বিডিও শতরূপা দাস, মেমারি থানার ওসি দেবাশীষ নাগ, দুর্গাপুর অঞ্চলের প্রধান আশিয়া বিবি শেখ, মেমারি ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি বসন্ত রুইদাস, বিএলআরও বিশ্বজিৎ দাসের উপস্থিতিতে সমগ্র বিষয়টি নিয়ে উন্নতি ঘোষ ও আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি মহাদেব টুডু সহ আরও অনেককে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে মিটিং হয়। মিটিং চলাকালীন বিডিও কক্ষের বাইরে দফায় দফায় আদিবাসীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এবিষয়ে মেমারি ১ বিডিও শতরূপা দাস জানান, ‘সমগ্র বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দখলকৃত জায়গা প্রশাসনের উপস্থিতিত মাপজোখ করে উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ধর্মীয় স্থান অপবিত্র করার অধিকার কোন মানুষের থাকে না। যে বা যারা এই কাজটি করেছেন ভুল করেছেন। প্রশাসনের তরফ থেকে তাকে সাবধান করা হয়েছে।’ শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, প্রশাসন থেকে জাহের থান স্থানটি চিহ্নিত করণ করা হয়েছে। জাহের থানের পাশে উন্নতি ঘোষ ও তার আত্মীয়স্বজনদের জায়গাও চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। উন্নতি ঘোষকে প্রশাসনের তরফ থেকে সাবধান করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আগামীদিনে আদিবাসী সমাজের পবিত্র স্থানে কোনরকম অসম্মানকর কাজ করলে আইনানুসারে তার বা পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।