ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ফের ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের হল বর্ধমান থানায়। রোগীর আত্মীয় এক্ষেত্রে খোদ চিকিৎসক কৌশিক দাস এবং অভিযুক্ত কল্পতরু নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি, ভুল চিকিৎসা, দুর্ব্যবহার সহ নার্সিংহোমের চূড়ান্ত অব্যবস্থাকেই দায়ী করে রোগীর মৃত্যুর সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন। পাশাপাশি অভিযুক্ত চিকিৎসক কৌশিক দাসের বিরুদ্ধে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও মেডিক্যাল কাউন্সিলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে চলেছেন বলে জানিয়েছেন মৃত নাসমিন খাতুনের (১৮) বাবা শেখ জাকির হোসেন।
মৃতার আত্মীয় মহম্মদ মুরসালিন ফারহান বলেন, ‘পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষ থানার উজ্জ্বলপুকুর এলাকার বাসিন্দা ১৯বছর বয়সী নাসমিন খাতুন কে চিকিৎসক কৌশিক দাসের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশনের জন্য খোষবাগানের কল্পতরু নার্সিংহোমে গত ১৬মার্চ ভর্তি করা হয়েছিল। তার আগে ১৫তারিখ বড়নীলপুরে চিকিৎসকের বাড়িতে রোগীকে দেখানো হয়েছিল। তখনই চিকিৎসক অ্যাপেন্ডিক্স এর সমস্যার কথা জানায়। সেই অনুযায়ী বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় নাসমিন খাতুনের। রিপোর্টে কোন খারাপ কিছু ছিলনা।
১৭তারিখ নাসমিনের অপারেশন করা হয়। আশ্চর্যজনক ভাবে অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশনের জন্য চিকিৎসক প্রায় আড়াই ঘণ্টা সময় লাগিয়ে দেন। আমরা রোগীর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে চিকিৎসক কিংবা নার্সিংহোম কেউই আমাদের সহযোগিতা করেনি। এমনকি আমাদের কিছু না জানিয়েই রোগীকে আইসিইউ তে স্থানান্তর করে দেওয়া হয়। পরে আমাদের জানানো হয়, অপারেশনের পর রোগীর শারীরিক বেশ কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে তাই রোগীকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কিন্তু পরের দিন অর্থাৎ ১৮মার্চ রাত সাড়ে দশটা নাগাদ হটাৎ কল্পতরু নার্সিংহোম থেকে নাসরিন খাতুনকে নিয়ে চলে যাওয়া হয় নবাবহাট এলাকার বি সি রায় হসপিটালে। সেখানে ভর্তি করার আধ ঘণ্টার মধ্যেই রোগীর মৃত্যু হয়। আমরা অভিযোগ জানিয়েছি যে একজন সুস্থ, স্বাভাবিক মেয়ের সামান্য অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করতে গিয়ে কি এমন হল যে সে মারা গেল? এখানে সম্পূর্ণভাবে দায়ী চিকিৎসক কৌশিক দাস এবং নার্সিংহোম। এরা আসলে কেউ ডাক্তার নয়, কসাই। এদের উদ্দেশ্য রোগীর চিকিৎসা করা নয়, শুধু বেআইনি ভাবে টাকা রোজগার করা। আর এরফলে প্রতিদিন বর্ধমানে কোথাও না কোথাও ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এইসব বন্ধ করতে অবিলম্বে প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ করা উচিত।’
মৃতার আরেক আত্মীয় জহর আলী বলেন,’ আমরা অবাক হয়ে যাচ্ছি কিভাবে একজন গাইনোকলজিস্ট (সার্জন) দিনের পর দিন জেনারেল সার্জারি করে চলেছেন। এইদিকগুলোও স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদের দেখা উচিত। কেবলমাত্র টাকা রোজগারের জন্য সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারুর নেই। একটা তরতাজা মেয়ে, যায় মাস পাঁচেক আগে বিয়ে হয়েছিল। অকালে চলে গেল। এরা এতটাই নির্মম যে নাসমিন মারা যাওয়ার পর নার্সিংহোমের পক্ষ থেকে আমাদের টাকা নিয়ে বিষয়টি মিটমাট করে নেওয়ারও অফার দিয়েছিল। আমরা শুনিনি। আমরা বর্ধমান থানায় অভিযোগ জানিয়েছি। এরপর স্বাস্থ্য দপ্তর, মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকে শুরু করে যেখানে যা কিছু করার করবো। কৌশিক দাসের মতো চিকিৎসক যারা আছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।’
এদিকে অভিযুক্ত নার্সিংহোম সূত্রে জানা গেছে, নাসরিন খাতুনের অপারেশনের সময় অ্যানাসথেসিয়া করার জন্য উপস্থিত ছিলেন বীরভূমের রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের আয়নাস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান ( HOD) ডা. রণবীর চন্দ্র। প্রশ্ন উঠেছে, অন্য জেলার একটা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এতবড় দায়িত্ত্ব ছেড়ে কিভাবে দূরবর্তী আরেকটা জেলার বেসরকারি নার্সিংহোমে সময় দিচ্ছেন চিকিৎসক! এমনকি বিভিন্ন সুত্রে শোনা যাচ্ছে, অভিযুক্ত বর্ধমানের কল্পতরু নার্সিংহোমের চিকিৎসক কৌশিক দাস নামে বেনামে প্রায় সাতটি নার্সিংহোমের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। এমনকি কৌশিক দাস একজন প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ (gynecologist) হয়েও কিভাবে জেনারেল সার্জারি করছেন তা নিয়েও অভিযোগ তুলেছেন মৃতার পরিবারের লোকজন।
পূর্ব বর্ধমান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায় অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বর্ধমানের অনেক নার্সিংহোমই সম্পূর্ন বেআইনিভাবে চলছে। অনেক নার্সিংহোমের সঠিক পরিকাঠামো নেই। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অন্যদিকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতলের সুপার পলাশ দাস চিকিৎসক রণবীর চন্দ্রের প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ঘটনার খোঁজ নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে অভিযুক্ত চিকিৎসক কৌশিক দাস কে ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।