ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,জামালপুর: নদীগর্ভে অস্থায়ী সেতু তৈরি করে রীতিমত নদীর স্বাভাবিক গতিকে অবরুদ্ধ করে, এমনকি পরিবর্তন করে সরকারি নির্দেশ ও পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে কেবলমাত্র অবৈধভাবে মুনাফা লোটার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে কিছু বালি মাফিয়া। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ও পাল্লার মাঝে দামোদর নদের বুকে বালির গাড়ি যাতায়াতের জন্য বেআইনি ভাবে তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী সেতু। যার কারণে নদের স্বাভাবিক গতি অবরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এমনকি নদীর যে অংশ থেকে বালি তোলার সরকারি অনুমতি দেওয়া হয়, মাফিয়ারা সেই অংশ ছাড়িয়ে নদীর যত্রযত্র থেকে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বালি তুলে বিক্রি করে চলেছে বলে অভিযোগ।

জেলা জুড়ে নদ নদী গুলোতে যখন অবৈধ বালি খাদ চালানোর বিরুদ্ধে প্রশাসন কড়া নজরদারি চালাচ্ছে, তখন জামালপুরের সাঁচড়া মৌজায় রমরমিয়ে চলছে বেআইনি বালি ঘাট। অভিযোগ, গত জানুয়ারি মাসে যে বালি ঘাটের ( plot no. 1258 p) অনুমোদন শেষ হয়ে গেছে, সেই ঘাট থেকেই দিব্যি বালি কেটে পাচার করছে এক ইজারাদার। এমনকি অভিযোগ, ওই একই মৌজায় অন্য একটি বৈধ ঘাটের ঢাল বাঁশ দিয়ে আটকে পার্শ্ববর্তী প্রায় কয়েকশো বিঘা নদীর এলাকা জুড়ে (৭নং, ৯ নং, ১৩নং ঘাটের এলাকা) অবৈধভাবে বালি ও মাটি কাটছে এক ইজারাদার। অভিযোগ, এক্ষেত্রে বৈধ ইজারাদারের কাগজ ব্যবহার করে বন্ধ হয়ে যাওয়া বালি ঘাট থেকে বালি তুলে দেদার বালি লুট করছে ওই ইজারাদার। সম্প্রতি মেমারি থানার অন্তর্গত দোলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু বাসিন্দা নদী থেকে এই বেআইনি বালি উত্তোলনের বিরুদ্ধে পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সমস্ত দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, জামালপুরের দিক থেকে বালি তোলার কাজ চললেও, বালি বোঝাই বেশিরভাগ ট্রাক্টর নদীগর্ভে তৈরি করা অস্থায়ী সেতু পেরিয়ে মেমারি থানার পাল্লারোড হয়ে জাতীয় সড়ক ধরে চলে যাচ্ছে প্রতিদিন। তাদের অভিযোগ, এরফলে একদিকে যেমন নদীর বালি বেআইনিভাবে তুলে নেওয়া সরকারি রাজস্ব লুট হচ্ছে, তেমনই নদীর স্বাভাবিক গতিপথ আটকে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু দিনের পর দিন এই বালি লুট চললেও জেলা ও ব্লক ভূমি রাজস্ব দপ্তর কিংবা পুলিশের কোন হেলদোল নেই।
জামালপুর ব্লক ভূমি রাজস্ব আধিকারিক প্রত্যুষ বাগ জানিয়েছেন, ’ এই সম্বন্ধীয় একটা অভিযোগ পেয়েছি। দিন কয়েক আগে এলাকায় গিয়ে অভিযোগের বিষয় খতিয়ে দেখা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও এলাকায় নজরদারি চলছে। তবে নদীর মধ্যে বাঁধ তৈরির বিষয় ইরিগেশন দপ্তর দেখে। তারাই অনুমতি দেয়। সাঁচরা মৌজায় একটি মাত্র বৈধ ইজারাদার রয়েছে, বাকি আর কোনো বৈধ ঘাট নেই এই মুহূর্তে। অবৈধ খননের অভিযোগ ঠিক নয়।’ এব্যাপারে গৌতম রায় নামে এক ইজারাদার জানিয়েছেন, ’ যারা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তাদের বালি খাদ চালানোর কোনো অভিজ্ঞতা বা নূন্যতম টেকনিক্যাল জ্ঞান নেই। অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এসে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করে গেছে। কোন অনিয়ম থাকলে প্রশাসনই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
যদিও অভিযোগকারী গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবারও রীতিমত নদী থেকে বালি তুলে ট্রাক্টর লোড করার কাজ চলেছে। তাদের অনেকের অভিযোগ, প্রশাসনের লোকজন বালি ঘাটে অভিযানে আসার আগেই ’লোকেশন পার্টির’ লোকজন আগাম খবর দিয়ে দেয় ঘাটে। তারপরই দ্রুততার সঙ্গে কিছুক্ষণের মধ্যে বালি মাফিয়ারা মেসিন সহ গাড়ি সব কিছু সরিয়ে ফেলে। আর তারপর প্রশাসনের লোকজন চলে যেতেই ফের শুরু হয়ে যায় বেআইনি বালি খনন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সবাই সবকিছু জানে, তবু অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়না বেআইনি বালির কারবার।