দামোদরের জল কমতেই ধ্বসের আতঙ্ক খন্ডঘোষের বিস্তীর্ণ এলাকায়

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,খন্ডঘোষ: একটানা প্রবল বৃষ্টি আর তার সঙ্গে মাইথন ও দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে জল ছাড়ার ফলে পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষ এলাকার দামোদর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে দুদিন আগেই বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু জল ছাড়ার পরিমাণ কমতেই এবার নতুন আতঙ্ক গ্রাস করতে শুরু করেছে খন্ডঘোষ ব্লকের লোদনা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত মেটেডাঙা কলোনি, নীলকুঠি, বেলডাঙা সহ বনমালিপুর কলোনি এলাকার বাসিন্দাদের। এখন কার্যত এই এলাকার বসবাসকারী মানুষের রাতের ঘুম উড়েছে। কারণ দামোদরের জল যত কমছে, ততোই নদীর বাঁধে ধ্বসের আশঙ্কা বাড়ছে। ইতিমধ্যেই মেটেডাঙ্গা এলাকার দামোদর নদের বেশ কয়েকটি জায়গায় ধ্বস দেখতে পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

মেটেডাঙা কলোনির বাসিন্দা অনন্ত বৈরাগ্য এবং বেলডাঙা মৌজার বাসুদেব সরকার বলেন, ‘কলোনিতে বসবাসকারী এক একটি পরিবারের বসতবাড়ি থেকে নদী এখন মাত্র ১০০ ফুট দূরে। প্রতি বছর ধ্বস নামে নদীতে। বেশ কয়েক বছর আগে নদীর পাড় ছিল প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। পার ভাঙতে ভাঙতে এখন নদী জনবসতির কোথাও ১০০ ফুট আবার কোথাও ৫০ ফুটের মধ্যে চলে এসেছে। এলাকার মানুষের রাতের ঘুম উড়ে গেছে। সারা দিন উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকতে হচ্ছে আমাদের। আর আজকের এই পরিস্থিতির জন্য একমাত্র দায়ী নদীর বালি নিয়ে যারা ব্যাবসা করেন তারাই। তাদের জন্যই আমাদের এই অবস্থা।

প্রসঙ্গত সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নদীর বাঁধ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বালি তোলা নিষিদ্ধ। কিন্তু নৌকায় মেশিন লাগিয়ে এবং নেটের মাধ্যমে নদী বাঁধের গা থেকে অবৈধ ভাবে বালি তুলে নিয়েছে ব্যাবসায়ীরা। ব্লক ভূমি দপ্তরের অফিস থেকে বিডিও অফিস, পঞ্চায়েত সমস্ত জায়গায় জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। নদীর বাঁধ বরাবর বালি কেটে নিলে ধ্বস তো নামবেই। গত বছর নদী বাঁধ বরাবর একটা অস্থায়ী গার্ড দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। হটাৎ সেই কাজও বন্ধ করে দেওয়া হল।’

অনন্ত বৈরাগ্য, বাসুদেব সরকার রা বলেন, ‘মেটেডাঙা থেকে বেলডাঙা মৌজা হয়ে বাঁকুড়া জেলার সোমসার গ্রাম পর্যন্ত একটি যাতায়াতের রাস্তা ছিল। গত বছর নদের জল বাড়ায় অনেকটাই ক্ষতি হয়েছিল সেই রাস্তার। আর এবছর এর মধ্যেই প্রায় শেষের দিকে ওই রাস্তাটি। নদীর জলের তোড়ে ভেসে গেছে রাস্তার একটা বড় অংশ। সরকারিভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ না করলে নদীগর্ভে চলে যাবে রাস্তা, জমি থেকে বসত বাড়ি। অবৈধ ভাবে নদীর বালি তোলার জন্যই নদীগর্ভ এখন কোথাও ৭০ ফুট আবার কোথাও ৯০ ফুট।’ এলাকাবাসীর দাবি অবিলম্বে এই এলাকায় অবৈধ বালির ব্যাবসা বন্ধ করতে হবে।

এদিকে এই এলাকার বসবাসকারী দের একাংশই খোদ এই অবৈধ বালির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে স্থানীয় সূত্রে জানতে পারা গেছে। ফলে এলাকার সুরক্ষা নিয়ে যেখানে খোদ এলাকার মানুষই সচেতন নয় সেখানে প্রশাসনের উপর দায় চাপিয়ে দেওয়াটাও কতটা যুক্তিযুক্ত সে ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীর একাংশ। তৃণমূলের খন্ডঘোষ ব্লক সভাপতি অপার্থিব ইসলাম এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘ গৈতানপুর, চরমানা এলাকায় আমরা ইতিমধ্যে বাঁধ দেওয়ার কাজ করেছি। লোধনা পঞ্চায়েতের কয়েকটি গ্রামের কাছে নদী বাঁধের ক্ষয় রোধ করতে বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যেই একটা মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এই কাজ যাতে করা যায় সেব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও আরো সজাগ ও সতর্ক হতে হবে, যাতে নদী বাঁধের ক্ষতি কোনোভাবে না হয়।’ পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বিশ্বনাথ রায় জানিয়েছেন, ‘ ধ্বস প্রবন এলাকাগুলোর খুব শীঘ্রই পরিদর্শনে যাওয়া হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

আরো পড়ুন