ক্রাইম

বর্ধমান মেডিক্যালের মর্গের ডোমেদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিল কর্তৃপক্ষ, মৃতের আত্মীয়কে ফেরত করতে হল টাকা

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিলই। এবার বর্ধমান মেডিক্যালের মর্গে ডোমেদের অন্যায় জুলুমবাজি বন্ধে কড়া পদক্ষেপ করল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি পাল্লা রোডের বাসিন্দা মৃণালকান্তি কোলে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে মর্গের ডোমেদের বিরুদ্ধে তাঁর বাবার দেহ যথাযথ ভাবে ফেরত দিতে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে বলে অভিযোগ জানান। একই অভিযোগ জেলা শাসক, জেলা পুলিশ সুপার, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কেও পাঠিয়েছিলেন তিনি। এই ঘটনার খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও প্রকাশিত হয়। আর তারপরেই নড়েচড়ে বসে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন।

খোদ জেলাশাসকও এই ঘটনার রিপোর্ট তলব করেন। দীর্ঘদিন ধরেই বর্ধমান হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত করতে আসা শোকার্ত পরিবারের লোকেদের কাছ থেকে ডোমেরা জোর করে টাকা আদায় করে আসছিল বলে অভিযোগ ছিলই। এবার সেই ঘটনার হাতেনাতে অভিযোগ পাওয়ার পর বর্ধমান মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডা: কৌস্তব নায়েক সেই দুর্নীতি বন্ধ করতে করা পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন। উল্লেখ্য ডোমেদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ হওয়ার পরই সংবাদমাধ্যমের কাছেই মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপ্যাল বিষয়টি জানতে পেরে জানিয়েছিলেন, সবে মাত্র দায়িত্বে এসেছি। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে তা বন্ধ করব।

এরপরে বিষয়টি নিয়ে আভ্যন্তরীন তদন্তের পরে বুধবার মৃণালকান্তি কোলে কে নিজের অফিসে ডেকে পাঠিয়ে সমস্ত কথা শোনেন কৌস্তব নায়েক। বুধবার তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক ল্যাবের ভিতরে নিয়ে গিয়ে এদিন ডিউটিতে থাকা ডোমেদের সবাইকে ডেকে পাঠানোর পাশাপাশি আরও কয়েকজন কে ডেকে মৃণালকান্তি কে দিয়ে তাদের মধ্যে কারা সেদিন টাকা নিয়েছিল তাদের চিহ্নত করতে বলেন। প্রথম থেকে ডোমেদের দল এই ঘটনার কথা অস্বীকার করলেও এবং নানা ধরণের মন্তব্য করলেও পরে  মৃণালকান্তি সবার সামনেই দুজন কে চিহ্নিত করেন।আর তখনই সুর নরম হয়ে যায় সকলের।

মৃণালকান্তি কোলে বলেন, ‘অর্জুন মল্লিক ও সুরজ মল্লিক কে আমি দেখানোর পরেই তারা নিজেদের অপরাধ মেনে নেয়। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের নির্দেশে তারা আমার কাছ থেকে নেওয়া সাড়ে তিন হাজার টাকা এবং একই সঙ্গে এই ঘটনার এগারোদিন আগে আমার জ্যাঠিমা মারা যাবার সময়ে যে টাকা নিয়েছিল সেই টাকাও ফেরত দিয়ে আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। প্রিন্সিপ্যাল কৌস্তব নায়েক বলেন,’ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ‘

প্রসঙ্গত এর আগেও এই দুর্নীতি ডোমের দল চালিয়ে এলেও কোন অধ্যক্ষই এভাবে জোর করে টাকা নেওয়া বন্ধে এগিয়ে আসেননি। সেই নিয়ে মৃতের পরিজনদের মধ্যে ক্ষোভ ছিলই। বর্তমান বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কৌস্তভ নায়েক বলেন, ‘যা ঘটেছিল সেটা দুর্ভাগ্যজনক। আগে কি হয়েছে সেসব নিয়ে কোন মন্তব্য করব না। আমরা সিধান্ত নিয়েছি মর্গের বিভিন্ন জায়গায় এবার সাইন বোর্ড দেওয়া থাকবে। যেখানে কোনরকম টাকা কাউকে না দেবার কথা জানানোর পাশাপাশি দুটি মোবাইল নম্বরও দেওয়া থাকবে। হসপিটাল সুপার ও প্রিন্সিপ্যাল এর । কোনভাবে ভবিষ্যতে কেউ যদি টাকা চায় তাহলে যেন সংশ্লিষ্ট নম্বরে ফোন করে জানাতে পারেন যে কেউ। সেক্ষেত্রে আমরা দ্রুত তদন্ত করে ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবো।’

Recent Posts