রমজান মাস আর ভোট, বন্ধ শিবির – বর্ধমান মেডিক্যালে রক্তের সংকট চরমে

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: ভোট ঘোষণা থেকে শুরু করে গণনা, এই পর্বে কার্যত বন্ধ রক্তদান শিবির। আগে থেকে নির্ধারিত থাকা শিবিরও ভোটের কারণে বাতিল করা হয়েছে। যার জেরে রীতিমতো রক্তের সঙ্কট তৈরি হয়েছে জেলা সদর হাসপাতালের আঞ্চলিক রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্র অর্থাৎ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ব্ল্যাড ব্যাঙ্কে।বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, সমস্ত গ্রুপের রক্তেই টান রয়েছে। বিভিন্ন চাহিদাযুক্ত রক্তের গ্রুপের মজুতের সংখ্যা দশে এসেছে নেমেছে। নেগেটিভ গ্রুপ বা রেয়ার গ্রুপের রক্ত নেই বললেই চলে। ফলে, রক্তের জোগান দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে ব্ল্যাড ব্যাঙ্ককে।

বিজ্ঞাপন

রক্তের জোগান ঠিক রাখতে ‘ইন হাউস’ ক্যাম্পের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে৷ পাশাপাশি কেউ রক্ত নিতে এলে তাকে একজন ডোনার সঙ্গে আনতে হচ্ছে। রক্ত দিলেই মিলছে অন্য গ্রুপের রক্ত। ভোটের কারণে গত ২০ দিন রক্তদান শিবির না হওয়া এবং যে হাতে গোনা শিবির হয়েছে, সেখানেও রক্তদাতার সংখ্যা নিতান্তই হাতে গোনা হওয়ায় এই সঙ্কট আরো তীব্র হয়েছে। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেই মেডিক্যাল সূত্রে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। 

বর্ধমান হাসপাতালের অঞ্চলিক রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, মাসে এই হাসপাতালে প্রায় ২৪০০ ইউনিট রক্ত লাগে। এই রক্ত সঞ্চালন কেন্দ্র থেকে হাসপাতালের ব্যাপক সংখ্যক রোগীর চাহিদা মেটানোর পরেও আশেপাশের নার্সিং হোমের মুমূর্ষু রোগীদের জন্য এখান থেকে রক্ত যায়। এছাড়াও জরুরি পরিসেবা হিসেবে শিশু ও প্রসূতি বিভাগের জন্য এবং থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক রক্ত মজুদ রাখতে হয়। এই ব্যাপক পরিমাণ রক্তের জোগান আসে বিভিন্ন শিবির থেকেই। কিন্তু, পরিসংখ্যান বলছে ভোট ঘোষণা হওয়ার পর থেকে শিবির বাতিল হয়েছে প্রচুর। গত মাসের ২৪ থেকে ১ তারিখ পর্যন্ত মাত্র দুটি ক্যাম্প হয়েছে। যে দুটি ক্যাম্প হয়েছে সেখানে থেকে রক্ত সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৫০ ইউনিট।

চলতি মাসের ৩ তারিখ থেকে ৮ তারিখ, অর্থাৎ ভোটের আগের এক সপ্তাহ কোন ক্যাম্প হয়নি। ভোটের পরদিন এবং তারপরের দিন অর্থাৎ রবি ও সোমবার একটি করে ক্যাম্প হয়। ব্ল্যাড ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক দিলীপ ঘোষ বলেন, একদিকে শিবির কম হচ্ছে অন্যদিকে শিবির হলেও সেখান থেকে সংগ্রহও কম হচ্ছে৷ সেই কারণে সমস্যা হচ্ছে। তবু খুবই কষ্ট করে আমাদের পরিসেবা স্বাভাবিক রাখছি। রক্তের জোগান কম থাকায় ব্যাপক সমস্যায় পড়ছেন রোগীর পরিজনরা। রক্ত পেতে তাদের নাজেহাল হতে হচ্ছে।

বর্ধমান ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ আশরাফউদ্দিন (বাবু) রক্তের বর্তমান সংকট প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘ এটা সত্যি যে গত প্রায় এক মাস ভোটের আবহে সেইভাবে রক্তদান শিবিরের আয়োজন হয়নি। তার আগে এক মাস রমজান মাস চলায় সেইভাবে রক্ত দিতে পারেননি অনেকেই। ফলে সরকারি ব্লাড ব্যাংক থেকে বেসরকারি ক্ষেত্রেও এখন রক্তের একটা সংকট তৈরি হয়েছে। তবে আগামী দু একদিনের মধ্যে এই পরিস্থিতির অনেকটা পরিবর্তন হবে। আগামীকাল গলসির বাহিরঘন্যায় আমাদের সোসাইটির পক্ষ থেকে ২০০ বোতল রক্ত সংগ্রহের একটু শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি এরপর প্রতি রবিবার জেলার বিভিন্ন প্রান্তে আমরা ১০০বোতল রক্তের একটি করে ক্যাম্প আয়োজন করছি। আগামী ১অক্টোবর জেলার মধ্যে সব থেকে বড় ২হাজার বোতল রক্তের শিবির করবো আমরা। আশা করছি আমাদের সংগঠনের পাশাপাশি অন্যান্য সংগঠনও এই মুহূর্তে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছে। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই এই রক্তের সংকট দূর হয়ে যাবে। তবে এই সংকট দুর করতে যারা রক্ত দিয়ে সহযোগিতা করছেন তাদের যখন রক্তের প্রয়োজন পড়বে তখন কার্ডের বিনিময়ে যাতে রক্ত দেওয়া যায় সেই বিষয়টিও ভেবে দেখা উচিৎ সরকারি হসপিটাল কর্তৃপক্ষের। তখন যাতে সেই ব্যক্তিকে ডোনার নিয়ে এসে রক্ত নেবার শর্ত দেওয়া না হয় তার আবেদন করছি আমি। ‘

রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শুভ্র ঘোষ, সৌরভ দত্তরা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বহু মানুষ রক্তের না পেয়ে সমস্যায় পড়ছেন। আমরা রাতভোর ডোনার জোগার করে তাদের সাহায্য করছি। সমাজসেবা এবং রক্তদানের সঙ্গে যুক্ত তাপস মাঁকড় বলেন, সবাই এক সময়ে শিবির আয়োজন না করে, প্রখর গ্রীষ্মকাল, ভোটের মরশুম ইত্যাদি সময় যখন রক্তের একটা বড় চাহিদা তৈরি হয়, সেই সময় শিবির আয়োজনের দিকে জোর দেওয়া উচিত। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুপার তাপস ঘোষ বলেন, ‘এই সময়  রক্তের একটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আমরা ইন হাউস রক্তদান করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করছি। যারা রক্তদান করেন তাদের উদ্দেশ্যে বলব, বড় করে শিবিরের আয়োজন না করে এই সময় ছোট ছোট দল করে, আমাদের ব্ল্যাড ব্যাঙ্কে এসে ইন হাউস রক্তদান করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ব্যাপারে সহযোগিতা করুন।’ 

আরো পড়ুন