বিনোদন

রথে থাকেন রাধাকৃষ্ণ-বালগোপাল জীউ, রথ বের হয় পরেরদিন, রশিতে টান দেয় হিন্দু-মুসলিম সকলেই

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,জামালপুর: রথযাত্রা কে কেন্দ্র করে প্রায় দেড়শো বছর ধরে সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে রেখেছেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার সেলিমাবাদ গ্রামের মানুষ। রথের দড়িতে একইসঙ্গে টান দিয়ে রথকে নিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করেন হিন্দু, মুসলিম সহ গ্রামে বসবাসকারী সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। যদিও এই গ্রামে রথযাত্রায় জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা থাকেন না। পরিবর্তে রাধাকৃষ্ণ আর গোপাল জিউ কে রথে বসিয়ে গ্রাম ঘোরানো হয়। আবার রথের দিন এই গ্রামে রথ বের হয়না। পরিবর্তে রথযাত্রার পরের দিন বের করা হয় রথ। বসে রথের মেলাও।

এই প্রথা প্রায় শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে বলেই গ্রামবাসীদের অনেকে জানিয়েছেন। গ্রামেরই বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দা শক্তিপদ সাঁতরা, গনেশ দাস সহ প্রবীণ শেখ আলী মহম্মদ, শেখ ইব্রাহিম মোল্লা প্রমুখরা সেলিমাবাদ গ্রামের এই রথযাত্রা যে তাদের এক সূত্রে বেঁধে রেখেছে সে কথা অনায়াসে জানিয়েছেন। তাঁরা আরো জানিয়েছেন, শুধু রথযাত্রাই নয়, দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে ঈদ, ঝুলন, জন্মাষ্টমী, শিবরাত্রি প্রভৃতি সমস্ত উৎসবেই গ্রামের মানুষ উৎসাহের সঙ্গে একত্রিত হয়েই পালন করেন। এমনকি নতুন প্রজন্মের সৌভিক দাস কিংবা শেখ ওসমান আলীরাও তাদের গ্রামের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা এক বাক্যে স্বীকার করেছেন। তাদের একটাই বক্তব্য, ‘ আমরা একই গ্রামে পাশাপশি বসবাস করি। সারাবছর এক অপরের সুবিধা অসুবিধায় পাশে থাকি। স্বাভাবিকভাবেই উৎসবের দিন গুলোতেও আমরা সকলে মিলে আনন্দ উপভোগ করি। আমাদের গ্রামে কোনোদিনই সাম্প্রদায়িক মতপার্থক্য ছিল না, তাই আজও নেই। এটা আমাদের গর্ব’।

সেলিমাবাদ গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা গনেশ দাস বলেন,’ আমার শোনা কথা, আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে এই গ্রামে সম্রাট সেলিম কয়েকদিনের জন্য এসেছিলেন। কথিত আছে, তাঁর কোন সন্তান সন্ততি ছিল না। সেই সময় তিনি গ্রামে বালগোপাল জীউর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু সম্রাট মারা যাওয়ার পর গ্রামের মানুষই এই মন্দিরের দেখাশোনার কাজ করে আসছেন। সেই সময় থেকেই এই গ্রামের নাম সেলিমাবাদ। গ্রামেরই বাসিন্দা দ্বিজবর দাস বৈরাগ্য একসময় এই রথযাত্রা প্রথা শুরু করেছিলেন। তিনি বৈষ্ণব ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। তখন থেকেই গ্রামের সমস্ত পূজার্চনা বৈষ্ণব মতে পালন করা হয়। তাই রথযাত্রা উৎসবও রথের পরের দিন পালন করা হয়। অন্যান্য উৎসবও নির্দিষ্ট দিনের পরের দিন পালিত হয় সেলিমাবাদ গ্রামে।’