ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক, খন্ডঘোষ: অপেক্ষা শুধু সূর্য ডোবার। সন্ধ্যা হতেই খন্ডঘোষের শশঙ্গা পঞ্চায়েতের কুমিরখোলা থেকে কাঁটাপুকুর পর্যন্ত প্রায় ১২কিলোমিটার রাস্তা চলে যাচ্ছে কয়েক শো বালির গাড়ির দখলে। এরপর কাঁটাপুকুর থেকে বাঁকুড়া-বর্ধমান মেন রোডে উঠে বাঁকুড়া মোড় হয়ে সেইসব বালির গাড়ি প্রতিদিন চলে যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। অভিযোগ, সকাল থেকে বালি খাদে কয়েক শো গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকলেও, সন্ধ্যার পর এই সমস্ত বালি বোঝাই গাড়ির অধিকাংশই অতিরিক্ত বালি নিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন।
স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, গাড়ি প্রতি ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা রাস্তায় দিয়ে অনায়াসে ওভারলোড গাড়িগুলো বেরিয়ে যাচ্ছে। যদিও কে বা কারা এই টাকা নিচ্ছে সে ব্যাপারে মুখ খোলেননি এলাকাবাসীরা। অন্যদিকে অভিযোগ পেলে কিংবা রুটিন অভিযানে মাঝে মধ্যেই এই সমস্ত ওভারলোড বালির গাড়ি ধরে জরিমানা করে হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন খন্ডঘোষের ভূমি রাজস্ব আধিকারিক অরিন্দম বিশ্বাস। তিনি জানিয়েছেন, দুদিন আগেই চারটি গাড়িকে জরিমানা করা হয়েছে অতিরিক্ত বালি বহন করার অপরাধে। পাশাপাশি, বেআইনি বালি ঘাট ও বালির গাড়ির বিরুদ্ধে ভূমি রাজস্ব দপ্তর থেকে নিয়মিত অভিযান চালানো হয় খন্ডঘোষে।
অন্যদিকে খোদ শশঙ্গা পঞ্চায়েত অফিসের সামনে দিয়ে পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদের টোল ট্যাক্স মিটিয়েই এই অতিরিক্ত বালি বোঝাই গাড়িগুলো প্রতিদিন যাতায়াত করছে। কেবলমাত্র শশঙ্গা পঞ্চায়েতেরই তিনটি টোল ট্যাক্স অফিস রয়েছে তিনটি রাস্তায়। সেগুলো হলো সালুন সিনেমাতলা থেকে মোল্লা পাড়ার রাস্তায়। সালুন স্টোর মাথা থেকে সালুন গ্রামের রাস্তায়। এবং কাঁটা পুকুর থেকে বাসিলার রাস্তায়। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন এই সমস্ত রাস্তা দিয়ে দামোদর নদ থেকে বালি তুলে গড়ে প্রায় ১হাজার থেকে ১২০০গাড়ি যাতায়াত করে। গাড়ি প্রতি শুধু পঞ্চায়েতের টোল বাবদ ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা দিতে হয়। জেলা পরিষদের টোল আলাদা।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে কুমিরখোলা, নারিচা, রূপসা, সালুন হয়ে কাঁটাপুকুর পর্যন্ত রাস্তায় শয়ে শয়ে বালির গাড়ি যাতায়াতের ফলে সাধারণ মানুষের এই রাস্তা দিয়ে চলাচল কার্যত বিভীষিকা হয়ে উঠেছে। গত দশ বছরে এই বেহাল রাস্তা সংস্কারের কোন কাজ করেনি জেলা প্রশাসন। বরং কখনো সখনো বালি ঘাটের মালিকরাই ইট,বালি, ঘেঁশ ফেলে জোড়াতাপ্পি দিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এই বেহাল রাস্তা নিয়ে বারবার এলাকাবাসীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তবু টনক নড়েনি জেলা প্রশাসনের।
এলাকাবাসীদের অনেকেরই অভিযোগ, পঞ্চায়েত ও জেলাপরিষদ প্রতিটি বালির গাড়ি থেকে আলাদা করে ট্যাক্স আদায় করে। টোল ট্যাক্স চালানোর জন্য কোটি কোটি টাকার টেন্ডারও ডাকা হয়। টোল বাবদ প্রতিদিন লক্ষাধিক টাকা আদায় হয়। কিন্তু একাধিক গ্রামের কয়েক হাজার সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য এই পুরনো বর্ধমান-বাঁকুড়া রাস্তার সংস্কার আজও হয়নি। স্থানীয় পঞ্চায়েত ও গ্রামবাসীদের একাংশ সূত্রে জানা গেছে, এই রাস্তার জন্য চারবার টেন্ডার প্রক্রিয়া হলেও দরপত্র জমা করার ঠিকাদার পাওয়া যায়নি।
কারণ হিসেবে উঠে এসেছে এই রাস্তা দিয়ে অত্যাধক বালির গাড়ির যাতায়াতের চাপ। ফলে যে পরিমাণ টাকা ও সরঞ্জাম দিয়ে এই রাস্তা তৈরি করার কথা বলা হয় তাতে প্রথমত দীর্ঘ ১২কিলোমিটার রাস্তা তৈরি সম্ভব নয়। আবার যে মানের রাস্তা করলে প্রতিদিনের হাজার হাজার বালির গাড়ির চাপ সহ্য করে টিকে থাকবে এমন রাস্তা তৈরি করার মতো পরিকাঠামো ঠিকাদারদের নেই। ফলে বছরের পর বছর ধরে রমরমিয়ে বালির কারবার এই এলাকায় চললেও স্থানীয় গ্রামবাসী থেকে এলাকার পড়ুয়াদের কার্যত প্রাণ হাতে করেই জীবন কাটাতে হচ্ছে বলে অধিকাংশের অভিযোগ। সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন, আর তার আগে কুমিরখোলা থেকে কাঁটাপুকুর পর্যন্ত রাস্তার বেহাল দশা নিয়ে সোচ্চার হতে শুরু করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।
গ্রামবাসীদের অনেকের অভিযোগ, শশঙ্গা পঞ্চায়েত এলাকায় দামোদর নদে এই মুহূর্তে যেসব বালি ঘাট চলছে তার বেশিরভাগই অবৈধ। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের চালান ব্যবহার করে খন্ডঘোষের এই এলাকা থেকে বালি চুরি করে সন্ধ্যার পর থেকে গাড়ি গাড়ি বালি পাচার হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। প্রশাসন চারটি গাড়ি ধরছে, অন্যদিকে চারশো গাড়ি রাস্তায় টাকা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতিদিন সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে বলেই মনে করছেন ওয়কিবহল মহল।