ক্রাইম

বর্ধমান পুলিশের জালে ৬ ডাকাত, উদ্ধার আগ্নেয়াস্ত্র, মোবাইল, মূর্তি

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: কালী পুজোর আগেই বর্ধমান থানার পুলিশের অভিযানে ধরা পড়লো ডাকাতি ও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মোবাইল ও অন্যান্য জিনিস চুরির একটি বিরাট চক্র। গোপন সূত্রে খবরের ভিত্তিতে সোমবার ভোর রাতে বর্ধমান-গুসকরা রোডে এই অভিযানে ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়া ৬জন দুষ্কৃতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ধৃতদের সোমবার বর্ধমান আদালতে পেশ করে এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত আরো অন্যান্যদের ধরতে ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে আবেদন জানালে বিচারক দুজন আসামিকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। বাকিদের জেল হেফাজত হয়েছে।

ধৃতরা সকলেই বর্ধমান শহরের বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতরা হল রাজ রায় (১৮), বাড়ি বড়নীলপুর শক্তিপাড়া, কুনাল দাস @ বিরজু (২৪), বাড়ি ছোট নীলপুর, কচিপুকুর পাড়া, সুমন লেট (২৩), বাড়ি বাজেপ্রতাপপুর মাঠপাড়া, উদিত সরকার (২৪), ৪ নম্বর শাঁখারিপুকুর, অরূপ সরকার @ ফটিক (২৫), বাড়ি বড়নীলপুর নতুনপাড়া ও বিক্রম চাক্তবর্তী (২১), বাড়ি বড়নীলপুর শক্তিপাড়া। ধৃতদের কাছ থেকে পুলিশ একটি  দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি উন্নত পাইপগান ও এক রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে। এছাড়াও ধৃতদের কাছ থেকে পুলিশ একটি ভোজালি (দৈর্ঘ্য প্রায় দেড় ফুট), দুটি লোহার রড (দৈর্ঘ্য প্রায় তিন ফুট), দুটি বাঁশের লাঠি (দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ফুট) উদ্ধার করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, গোপন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে সোমবার ভোর রাতে বর্ধমান থানার পুলিশ বর্ধমান গুসকরা রোডে সাই কমপ্লেক্সের কাছে, NH-2B এর পাশে অভিযান চালিয়ে ৬জনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতরা ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছিল সেখানে। অভিযানের সময় এদের সঙ্গে থাকা আরও ৭/৮ জন ব্যক্তি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে এই রাস্তায় চলন্ত গাড়িতে ডাকাতির জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছিল এই দুষ্কৃতীরা। পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে ধৃতরা তাদের দোষ স্বীকার করেছে।  

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া আসামি রাজ রায় ও বিক্রম চক্রবর্তী পুলিশ কে জানিয়েছে, যারা আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ তাদের সরবরাহ করেছিল তাদের কে তারা চিনিয়ে দিতে পারবে। পুঙ্খানুপুঙ্খ জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত রাজ রায় এবং বিক্রম চক্তবর্তী স্বীকার করেছেন যে তারা অস্ত্র দেখিয়ে বর্ধমান শহর এলাকা এবং অন্যান্য এলাকায় অনেক চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় তারা জড়িত ছিল। আরও জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশ কে বলেছে যে তারা সুযোগ পেলে পুলিশকে আরও আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করতে সাহায্য করবে। এবং চুরি হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করতে সহায়তা করবে। যা তারা এর আগে চুরি করেছিল এবং বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে একাধিক ব্যাগ ও মোবাইল ছিনতাই এর অভিযোগ আসার পর পুলিশ দুষ্কৃতীদের ধরতে তৎপর হয়। সম্প্রতি শহরের ছোটনীলপুর পিরতলা এলাকায় রাত সারে দশটা নাগাদ এক সাংবাদিকের হাত থেকে তার মোবাইল কেড়ে নিয়ে পালিয়ে যায় দুই দুষ্কৃতী। তারা একটি মোটর সাইকেলে ছিল। ঘটনার পরই পুলিশ কে ঘটনার বিষয় জানালে বর্ধমান থানার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সংগ্রহ করা হয় সি সি ক্যমেরার ফুটেজ। এরপর সোর্স ইনফরমেশন ও সিসি ক্যমেরার ফুটেজ দেখে তদন্তে নামে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার গুসকরা রোড থেকে যে ছ’ জন কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও বেশ কয়েকটি চোরাই মোবাইল ফোন ও অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার হয়েছে। এই গ্যাং এর সঙ্গে যুক্ত বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ডিএসপি রাকেশ চৌধুরী বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগ থানায় জমা পড়েছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা মোটর সাইকেলে দ্রুত গতিতে এসে নির্জন জায়গায় এই যাতায়াতকারী মানুষের কাছ থেকে মোবাইল ও ব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। অনেক ক্ষেত্রেই অভিযোগকারীরা গাড়ির নম্বর বা রং সেইজন্য জানতে পড়ছিলেন না। বর্ধমান থানার পুলিশ এই সমস্ত অভিযোগের তদন্তে নেমে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করার পর এক জনকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়ে ডাকাতির উদ্দেশ্যে জড়ো হওয়া ৬জনকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতরা সকলেই তাদের দোষ স্বীকার করেছে। তদন্ত চলছে।”

Recent Posts