ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: বর্ধমান শহরের টোটো চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের বিরুদ্ধে এবার কঠোর পদক্ষেপের পথে হাঁটতে চলেছে প্রশাসন ও পৌরসভা। এই বিষয়ে আগামী কয়েকদিন প্রথমে রাস্তায় মাইকিং করে সচেতন করার পরিকল্পনা নিয়েছে পৌরসভা। তার পরেও টোটো চালকদের জন্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া একাধিক নিয়ম না মেনে রাস্তায় চললে তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে প্রশাসন বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে।
শুক্রবার থেকেই এই বিষয়ে প্রচার অভিযানও শুরু হয়েছে। যেখানে জানানো হচ্ছে, যে সমস্ত টোটো কিউআর (QR) কোড ও আইডেন্টিটি কার্ড পেয়েছে তারা জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার নির্দেশ মতো দুই অর্দ্ধে সঠিক সময়ে, নিয়ম মেনে টোটো চালাবেন। অন্যথায় জেলা প্রশাসন ও পৌরসভা আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বাধ্য থাকবে। পুরসভা সূত্রে জানা গেছে, একাধিক বৈঠক, মিটিং করে শহরের যানজট নিয়ন্ত্রনে আনতে লাগামহীন টোটোর বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে পদক্ষেপ করা হয়েছিল। নিয়ম করা হয়েছিল টোটোর চালক কেই টোটোর মালিক হতে হবে। অন্যদিকে নির্দেশ জারি করা হয়েছিল, পঞ্চায়েতের টোটো কোনোভাবেই শহরে প্রবেশ করবে না। শহরের টোটো পঞ্চায়েত এলাকায় যাবে না। যদিও জরুরি প্রয়োজনে এই নিয়ম কার্যকর থাকবে না বলেও বলা হয়েছিল।
নিয়ম করা হয়েছিল দিনে ও রাতে মোট টোটোর অর্ধেক করে নির্দিষ্ট রংয়ের, নির্দিষ্ট সংখ্যক টোটো ১৫দিন অন্তর পরিবর্তন করে শহরের রাস্তায় চলবে। সেই অনুযায়ী প্রায় এক মাস ধরে প্রায় চার হাজার টোটোকে কিউআর কোড, আইডেন্টিটি কার্ড দেওয়া ছাড়াও নীল সাদা ও সবুজ সাদা রং করার ব্যবস্থা করে পুরসভা। টোটো র ডানদিক দিয়ে যাতে কেউ ওঠা নামা করতে না পারে তার জন্য লোহার রড ঝালাই করে আটকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল পুরসভা। মোটকথা শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে টোটোর সংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল জেলা প্রশাসন ও পুরসভা।
কিন্তু কয়েকমাস যেতে না যেতেই প্রশাসনের জারি করা নিয়মকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ফের শহরের টোটোর দৌরাত্ম্য সেই আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে বলেই শহরবাসীর অধিকাংশের অভিযোগ। এমনকি যে কিউআর কোড দেওয়া হয়েছিল, যেটা টোটোর পিছনে বা সামনে লাগানো হয়েছিল, সেগুলোর অর্ধেকরই অস্তিত্ব নেই। কোন টোটো চালককেই আর আইডেন্টিটি কার্ড গলায় ঝুলিয়ে রাস্তায় গাড়ি চালাতে দেখা যায় না বলেও অভিযোগ। আবার কিউ আর কোড পায়নি যে সমস্ত টোটো তারাও দেদার শহরের রাস্তায় সেই আগের মতোই যানজট সৃষ্টি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সব থেকে বড় সমস্যা সৃষ্টি করছে পঞ্চায়েত থেকে মুড়ি মুড়কির মতো টোটো পুর এলাকার রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ফলে শহরের খোসবাগান, বিবি ঘোষ রোড, বিসি রোড, বড়বাজার, কলেজ মোড়, তেলিপুকুর সহ শহরের একাধিক রাস্তায় সেই আগের দুর্বিষহ যানজট পরিস্থিতি ফের ফিরে এসেছে। আর এই পরিস্থিতির গুরুত্ব পর্যালোচনা করে পৌরসভা ও জেলা প্রশাসন আগামী সপ্তাহেই ফের আলোচনায় বসতে চলেছে বলে বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন।
শহরবাসীর একাংশ অভিযোগ করছেন, শহরের মধ্যে দিয়ে টাউন সার্ভিস বাস ছাড়া সমস্ত বাস চলাচল আদালতের রায়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই বাস বন্ধের মূল কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে শহরের যানজট। তাহলে যানজট সমস্যা দূর করতে যদি প্রশাসন বাস বন্ধ করতে পারে, সেখানে দিনের পর দিন লাগামহীন টোটো চলাচলে কেন রাশ টানতে পারছে না। এর পিছনে দুটো কারণ থাকতে পারে বলেও অনেকে মত প্রকাশ করেছেন, এক, রাজনৈতিক বাধ্যবাতকতা। দুই, প্রশাসনিক উদাসীনতা। আর এরই মাঝে পড়ে শহরবাসীর স্বাভাবিক চলাফেরায় কার্যত নাভিশ্বাস উঠছে।