ক্রাইম

জেলায় ফের সক্রিয় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি ভুয়ো চাকরি চক্র!

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে ভুয়ো চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারনা চক্র ফের সক্রিয় পূর্ব বর্ধমান জেলায় বলে সূত্র মারফত খবর। সম্প্রতি রেল পুলিশের হাতে এই চক্রের ৭ জন ধরা পড়ার পর বিচার বিভাগীয় হেফাজত থেকে বেরিয়েই সেই চক্রের সদস্যরা ফের নতুন করে প্রতারণার কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে সূত্র মারফত জানতে পারা যাচ্ছে। এই চক্রের সদস্যরা খোদ বর্ধমান শহরের এবং শহর সংলগ্ন একাধিক জায়গায় ঠেক তৈরি করে চাকরি দেওয়ার নামে সাধারণ গরীব, শিক্ষিত, খেটে খাওয়া যুবক, যুবতীদের সঙ্গে এজেন্ট মারফত যোগাযোগ রেখে সুযোগ বুঝে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে বলে সূত্র মারফত খবর। যদিও কিভাবে, কখন, কোথায় এই চক্র প্রতারণার ফাঁদ পাতছে তার সঠিক কোন তথ্য প্রতিবেদকের কাছে এখনও আসেনি।

গোপন সূত্রে খবর, চাকরি প্রতারণা চক্রের চাঁই দের অনেকে খোদ বর্ধমান শহরে বসেই এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বন দপ্তরে চাকরি করে দেওয়ার টোপ দিয়ে গুসকরার ওরগ্রাম ফরেস্ট এলাকা সহ উত্তরবঙ্গের একাধিক ফরেস্ট এলাকায় এই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে বলে জানতে পারা যাচ্ছে। বর্ধমান শহরের গোলাপবাগ মোড়, নবাবহাট মোড়, বিসি রোড বড়বাজার সহ বর্ধমান – গুসকরা রোডের বিভিন্ন জায়গায় এই চক্রের সদস্যদের নিয়মিত ওঠাবসা রয়েছে বলে সূত্রের খবর। জানা গেছে রীতিমত একটা ‘ সিস্টেম ‘ তৈরি করে জেলা সহ রাজ্যের অন্যান্য জেলা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তের চাকরির খোঁজে থাকা শিক্ষিত যুবক যুবতীদের কাছ থেকে এজেন্টের মাধ্যমে যোগাযোগ করে কয়েক ধাপে চাকরি করে দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে এই চক্রের পান্ডারা।

অভিযোগ এর আগেও একইভাবে রেলে চাকরি করে দেওয়ার নামে এই চক্রের সদস্যরা লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা করেছে বহু চাকরি প্রার্থী গরীব মানুষের সঙ্গে। প্রতারিত একাধিক চাকরি  প্রার্থী অভিযোগ করেছে, তারা প্রতারিত হয়েছে বুঝতে পাড়ার পর অনেক সময়ই লজ্জায়, ভয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে পারে না। আবার বেশিরভাগ সময় চাকরি প্রার্থীরা এই প্রতারকদের সঙ্গে টাকা ফেরতের বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও নিরাশ হয় বলে অভিযোগ। অনেক সময় নানান ধরনের হুমকির মুখেও পড়তে হয় টাকা ফেরত চাইলে। অভিযোগ, এই চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, পূর্ব ও পশ্চিম মেদনিপুর, শিলিগুড়ি সহ রাজ্যের অন্যান্য জেলায় রীতিমত সক্রিয় রয়েছে।

সম্প্রতি এমনই একটি অভিযোগের ভিত্তিতে বর্ধমান পৌরসভার বিপরীতে রেলওয়ে ইনস্টিটিউটে অভিযান চালিয়ে ৭জন কে গ্রেপ্তার করেছিল বর্ধমান আরপিএফ। ধৃতদের বিরুদ্ধে রেলের গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদে চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারনা চক্র চালানোর অভিযোগ ছিল। ধৃতদের কাছ থেকে প্রচুর জাল নথি, রবার স্ট্যাম্প সহ অন্যান্য ভুয়ো কাগজ উদ্ধার হয়েছিল। পরবর্তীতে ধৃতদের বর্ধমান থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয় আরপিএফ। বর্ধমান থানার পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে বর্ধমান আদালতে পেশ করে। বিচারক শেখ জিন্নাত আলী নামে এক অভিযুক্তের ৮ দিনের পুলিশি হেফাজত ও বাকি ছয় অভিযুক্ত কে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। বর্তমানে সকলেই জামিনে মুক্ত বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

চাকরি প্রতারণা চক্রে অভিযুক্ত দের নাম শেখ জিন্নাত আলী ওরফে বাবর  (৩৪), বাড়ি বর্ধমান শহরের দুবরাজদিঘি, বাজেপ্রতাপপুর। অরূপ রতন মণ্ডল (৪৩), বাড়ি বর্ধমান শহরের ৩ নং ইছলাবাদ। রঞ্জিত কুমার সর্বজন ওরফে রঞ্জিত গাঙ্গুলী (৬৪), বাড়ি বর্ধমান শহরের শ্রীপল্লী এলাকার নিবাস ময়দান এলাকায়। বিবেকানন্দ মুখার্জি (৫১), বাড়ি কাটোয়া থানার বৈচি এলাকার সরগ্রাম। তারাশঙ্কর কুন্ডু (৫৮), বাড়ি গলসি থানার কোলকোল গ্রামে। প্রতুল কুমার রায় (৬৩), বাড়ি বর্ধমান শহরের ১২৩ মিঠাপুকুর ও ফজলু সেখ (৪৮), বাড়ি দেওয়ানদীঘি থানার নুতনগ্রাম।

বর্ধমান থানা সূত্রে জানা গেছে, ধৃতরা সকলেই তাদের অপরাধ স্বীকার করেছিল। জানা গেছে, এই চক্রের অন্যতম চাঁই গলসির কোলকোল গ্রামের বাসিন্দা তারাশঙ্কর কুন্ডু ও কাটোয়ার সরগ্রাম এলাকার বাসিন্দা বিবেকানন্দ মুখার্জি দীর্ঘদিন ধরে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে বহু বেকার যুবক যুবতীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে প্রতারণা চালিয়ে এসেছে। প্রার্থীদের আছে তারাশঙ্কর কুন্ডু ওরফে আর এন কুন্ডু ও বিবেকানন্দ মুখার্জি ওরফে অনির্বাণ মুখার্জি নামে বেশি পরিচিত বলে সূত্র মারফৎ জানা গেছে।

বর্ধমান শহরে রীতিমত অফিস খুলে এই প্রতারণার কারবার চালাতো কুন্ডু ও মুখার্জী বলে প্রার্থীদের অভিযোগ। সম্প্রতি ফরেস্টে চাকরি করে দেওয়ার নামে ফের এই চক্র সক্রিয় হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এমনকি রেলে চাকরি করে দেওয়ার জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকা করে লাগবে বলেও জানাতো তারা। অভিযোগ এর আগেও তারাশংকর কুন্ডু সহ এই চক্রের অনেকে প্রতারণার মামলায় জেল খেটেছে। এখন পুলিশ এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে আরো কারা জড়িত রয়েছে সেই ব্যাপারে তদন্ত চালাচ্ছে। একইসঙ্গে এই চক্রের সঙ্গে জড়িতদের গতিবিধির ওপরও নজরদারি রাখা হয়েছে বলে জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন। 

ছবি – ফাইল