সৌরীশ দে,বর্ধমান: সামনেই লোকসভা ভোট, আর তার আগেই ফের বর্ধমানের শতাব্দী প্রাচীন রেল ওভারব্রীজ ভেঙে ফেলার প্রায় ৬মাস পেরিয়ে গেলেও রেলেরই প্রতিশ্রুতি মতো নতুন ব্রীজ তৈরি না হওয়ায় এবার জোরদার আন্দোলন শুরু হতে চলেছে। নতুন করে ক্ষোভ সঞ্চার হতে শুরু করেছে রেলপারের সাধারণ মানুষের মধ্যে। স্বাভাবিকভাবেই লোকসভা ভোটের আগে এই নতুন ব্রিজ তৈরির দাবি নিয়ে বর্ধমান রেল স্টেশনের দুই প্রান্তের অসংখ্য সাধারণ মানুষ যে চরম আন্দোলনে নামতে চলেছে সেব্যাপারেও ইতিমধ্যে হুশিয়ারি দিয়েছেন বর্ধমান পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ নুরুল আলম (সাহেব)।
এমনকি এব্যাপারে গত ৪ ফ্রেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রকের অধীন পূর্ব রেলের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে পূর্ব রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার, ডিআরএম হাওড়া ডিভিশন ইস্টার্ন রেলওয়ে, পূর্ব বর্ধমান জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট কে দরখাস্ত দিয়ে নতুন ব্রীজ তৈরির দাবি জানিয়েছেন শেখ নুরুল আলম সাহেব। কিন্তু তারপর ২৪ দিন পেরিয়ে গেলেও রেলের পক্ষ থেকে কোন জবাব না আসায় কার্যত আন্দোলনের পথকেই বেছে নিতে চলেছেন কাউন্সিলর তথা তৃণমূল নেতা নুরুল আলম সাহেব বলে তিনি জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য বর্ধমান শহরের দক্ষিণ প্রান্তের সঙ্গে উত্তর দিকের মূল যোগাযোগ রক্ষাকারী সেতু ছিল এই ব্রিটিশ আমলের ব্রীজটি। প্রায় শতাধিক বছরের পুরনো এই ব্রিজের ওপর দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শহরের এক একদিক থেকে আরেকদিকে যাতায়াত করতেন। বর্ধমান স্টেশনের পাশে নতুন ফ্লাইওভার-কাম- ঝুলন্ত ব্রিজ চালু হওয়ার পরে, পুরানো ব্রিজটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছিল গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে। ফলে তখন থেকেই সাইকেল, রিকশা, ভ্যান চলাচলকারী হাজার হাজার সাধারণ মানুষ, স্কুলের শিক্ষার্থী ও বয়স্ক মানুষ প্রতিদিন এই নতুন ওভারব্রিজটি ব্যবহার করতে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হয়। পুরনো রেলওয়ে ওভার ব্রিজটি ভেঙে ফেলার আগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে ভেঙ্গে যাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে যা ভ্যান রিকশা বা সাইকেল ব্যবহারকারী সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে করা হবে।
নুরুল আলম সাহেবের অভিযোগ, কিন্তু প্রায় ছয় মাস অতিক্রান্ত হতে চললেও সেই প্রতিশ্রুতির কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। এ পর্যন্ত নতুন ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনায় অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। নুরুল আলম সাহেব জানিয়েছেন, ‘এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই রেল মন্ত্রক কে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। রেলের এই প্রতিশ্রুতি শীঘ্রই পূরণ না হলে এ বিষয়ে ব্যাপক গণআন্দোলন সংগঠিত করা হবে। সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন থামবে না। এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি নুরুল আলম আপনাকে লিখতে বাধ্য হচ্ছি, যারা প্রতিদিন এই ব্রিজটি ব্যবহার করতেন তাদের নতুন রেল ওভারব্রীজ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তাই অবিলম্বে বর্ধমান স্টেশনের পাশে দুপারের মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য নতুন ব্রীজ তৈরি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’
প্রসঙ্গত, পুরনো রেল ওভারব্রিজ ভেঙে ফেলার কারণ হিসাবে রেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, দূরপাল্লার রেক চলাচলের সুবিধা হবে। কয়লাবাহী রেক চালাতে যে সমস্যা হচ্ছিল তাও আর থাকবে না। রেলের আধিকারিকরা জানিয়েছিলেন, উঁচু রেক যাতায়াতের ক্ষেত্রে পুরনো ওভারব্রিজ সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছিল। ওই ওভারব্রিজের উচ্চতা কম থাকায় এই সমস্যা হচ্ছিল। ওই সেতু ভেঙে দেওয়ার কাজ সম্পূর্ণ হলে প্ল্যাটফর্ম এবং ট্র্যাকের পরিধিও বাড়বে। এছাড়াও পুরানো ওভারব্রিজটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারতো। তাতে বড় ধরনের রেল দুর্ঘটনার আশঙ্কা ছিল। তাছাড়া পুরনো এই সেতুটিতে টোটো, সাইকেল চলাচল করছিল। সবদিক খতিয়ে দেখে সেতুটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভেঙে ফেলা ওভারব্রিজের জায়গায় নতুন ফুট ওভারব্রিজ তৈরি করা হবে। তাতে সাইকেল চড়লেও বাইক ও ছোট যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে।
পুরনো রেল ওভারব্রিজের বদলে কেন্দ্র ও রাজ্যের টাকায় ঝুলন্ত রেল ওভারব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেই ব্রিজ এতই দীর্ঘ ও উঁচু যে রেল লাইনের অন্য পাড়ের বাসিন্দাদের যাতায়াতের ভরসা ছিল এই পুরনো রেল ওভার ব্রিজ, তাই এই সেতু ভাঙার আগে নতুন ফুট ওভার ব্রিজ তৈরির দাবি ছিল অধিকাংশ শহরবাসীর। বিকল্প সেতু তৈরির জন্য রেলের কাছে দাবি রেখেছিল জেলা প্রশাসনও। ছয় মাসের মধ্যেই ওই ফুট ওভার ব্রিজ তৈরি হয়ে যায় বলে রেলের পক্ষ থেকে আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপর প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও রেলের পক্ষ থেকে নতুন ব্রীজ তৈরির বিষয়ে এখনও কোন সদর্থক ভূমিকা না থাকায় শেষমেশ আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে এলাকার জনপ্রতিনিধি থেকে জনপ্রিয় হকার্স ইউনিয়নের প্রতিনিধি বৃন্দ ও বর্ধমান শহরের বাসিন্দাদের বৃহৎ অংশ।