ভোর থেকেই বর্ধমানে বিসি রোডের ব্যবসায়ীদের কাছে তোলাবাজির অভিযোগ স্থানীয় ক্লাবের বিরুদ্ধে, আলোড়ন

Souris  Dey

Souris Dey

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: হকার মুক্ত বিসি রোড করার জন্য প্রশাসনিক স্তরে উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। কার্জন গেট থেকে রানীগঞ্জ বাজার পর্যন্ত বিসি রোডের দু’ধারের রাস্তায় রেলিং দেওয়া হয়। রাস্তা দখল করে ব্যবসা করা যাবে না জানিয়ে হকারদের নির্দেশও দিয়েছিল প্রশাসন। তারপরেও বি সি রোডের দুধারের ছবি একটুও বদলায়নি। উপরন্তু, জবরদখল আরও বেড়ে গিয়েছে। রাস্তা দখল করে লটারির দোকান তৈরি হয়েছে। রেলিংয়ের ভিতরে ও বাইরে যথারীতি দোকান লাগিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছেন হকাররা।

বিজ্ঞাপন

এরই মধ্যে রানীগঞ্জ বাজার এলাকার একটি ক্লাবের মদতে গোটা বি সি রোড জুড়ে সকাল থেকে ব্যবসায়ীদের কাছে তোলাবাজি চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ জমা পড়ল জেলা পুলিশ সুপার ও পুরসভার চেয়ারম্যানের কাছে। ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত বি সি রোডে সবজি নিয়ে যাওয়ার জন্য আসা ভ্যান রিক্সা, টোটো ও অন্যান্য গাড়ির কাছ থেকে এই টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জমা পড়েছে। স্থানীয় একটি ক্লাবের সদস্যরা জোরপূর্বক এই কাজ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

বিসি রোড যানজট মুক্ত করতে পুজোর আগে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্তরে অতিসক্রিয়তা দেখা গেলেও পরবর্তীকালে সেই একই পরিস্থিতি রয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ শহরবাসীর একাংশের। কয়েক মাস আগে বর্ধমান শহরের বি সি রোডে যানজট সমস্যা মেটাতে রাস্তার উপর থেকে সরে গিয়ে হকারদের ব্যবসা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস, জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা, পুলিশ সুপার কামনাসিস সেন সহ প্রশাসনের আধিকারিকরা দফায় দফায় অভিযান চালান। সেখানে ব্যবসায়ীদের প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। কিছুদিন শহরবাসী স্বস্তি পেলেও ধীরে ধীরে পরিস্থিতি ফের একই অবস্থায় ফিরে গেছে বলেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকে। আর এবার এই সমস্ত অভিযোগ জানিয়ে গণসাক্ষর সম্বলিত অভিযোগ জমা পড়ল বর্ধমান পুরসভা ও বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপারের কাছে।

বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান পরেশ চন্দ্র সরকার জানান,”এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। মঙ্গলবার বর্ধমান পুরসভার বোর্ড মিটিং রয়েছে। সেখানে সমস্যা গুলি নিয়ে আলোচনা করা হবে।”জেলা পুলিশ সুপার কামনাসিস সেন জানান, ” এখনও পর্যন্ত অভিযোগের বিষয়ে জানা নেই। অভিযোগ পেলে ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়জনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস জানান,” এই ধরনের কথা আমিও শুনেছি, তবে রাতের অন্ধকারে কেউ টাকা চাইছে আর তারাও দিয়ে দিচ্ছে, এমন কিছু হলে তার দায়ভার দলের নয়। তবে কেউ এই ধরনের তোলাবাজি করে থাকলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে যারা অভিযোগ করেছেন তাদের পরিচয় জানানো উচিত। প্রকৃতপক্ষে যারা অন্যায়ের স্বীকার তারাই অভিযোগ করেছেন কিনা সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন ।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন জানান,” শুধুমাত্র একটি শহরে নয়। রাজ্যের প্রত্যেকটি শহরেই একই অবস্থা। সমস্ত লুম্পেন ও সমাজ বিরোধীরা এক ছাতার তলায় এসে শাসকদলের মদতে দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এই সরকারের পতন ছাড়া এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না।”

বিজেপির পূর্ব বর্ধমান জেলা মুখপাত্র সৌম বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ” কয়েকদিন আগেও শহরের শাখারিপুকুর এলাকায় স্থানীয় একটি ক্লাবকে সামনে রেখে একটি প্রাথমিক স্কুল বিল্ডিং ভেঙে ফেলা হয়েছে। বি সি রোডে তোলাবাজি চালানোর ক্ষেত্রেও যে অভিযোগ সামনে এসেছে সেখানেও একটি ক্লাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। এই ক্লাব গুলিকে সামনে রেখে তৃণমূলের নেতারা এই কাজ চালিয়ে আসছে। শাসকদলের মদত ছাড়া ক্লাবের পক্ষে এই কাজ চালানো সম্ভব নয়। উন্নয়ণের নামে চটকদারী সিদ্ধান্ত নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। ১১ বছর ধরে মানুষকে এভাবেই ভুল বোঝানো হয়েছে। এখন মানুষের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাই মানুষ গর্জে উঠেছে। বর্ধমানের এই ঘটনা তারই প্রতিফলন।

আরো পড়ুন