ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,গলসি: বালির বখরা ও কর্তৃত্ব কার হাতে থাকবে তা নিয়ে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের গলসি ২ব্লকের গোহগ্রাম অঞ্চলে। প্রসঙ্গত গোহগ্রাম অঞ্চলের শিকারপুর এলাকার দামোদর নদ থেকে প্রতিদিন গড়ে কয়েকশ ট্রাক্টর, ডাম্পার ভর্তি বালি ভাঙ্গাবাঁধ বাইপাসের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, প্রতিটি বালির গাড়ি থেকে নিয়মিত ২৫০থেকে ৩০০টাকা করে তোলা আদায় করছে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। এতদিন একপক্ষ এই তোলা আদায়ের কাজ চালিয়ে গেলেও সম্প্রতি এলাকার অপর আরেকটি গোষ্ঠীর লোকজন এই কর্তৃত্ব মানতে না চাওয়ায় সমস্যায় তৈরি হয়েই ছিল। অভিযোগ এবার স্থানীয় গ্রামবাসীদের সমর্থনে শাসক দলের কিছু নেতা কর্মীর মদতে এই বালির গাড়ির যাতায়াত বন্ধ করে দেয়।
বিজেপির স্থানীয় নেতা জয়দীপ চ্যাটার্জী বলেন, গলসির শিকারপুরে রাতের অন্ধকারে জেসিবি নামিয়ে অবৈধ ভাবে দামদরের বালি কেটে অবাধে পাচার করা চলছে। এক দুদিন নয়, দিনের পর দিন একইভাবে এই অবৈধ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বালি মাফিয়ারা। সব জেনেও স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন একপ্রকার নিষ্ক্রিয়। আর এর কারণ ব্লকের তৃণমূলের নেতাদের সাথে প্রশাসনের একটা ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ রয়েছে। বিভিন্ন বৈধ ঘাটের চালান দিয়ে প্রতিদিন রাতারাতি পাচার হয়ে যাচ্ছে শয়ে শয়ে ওভারলোডিং বালির গাড়ি। প্রশাসন কোন ভূমিকা পালন করছেন না। বালির গাড়ির যাতায়াতের জন্য গলসি শিকারপুর রাস্তার অবস্থা ফের খারাপ হচ্ছে। বিকল্প রাস্তার বাহানা দিয়ে প্রতি গাড়িতে ব্লক তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর নেতারা ২৫০ টাকা করে প্রতিদিন পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার টাকা তোলা তুলছেন। তাতে ওভারলোড কিংবা আন্ডারলোড যাইহোক তাদের কিছু যায় আসে না। ফলে নতুন করে সংস্কার হওয়া শিকারপুর গলসির রাস্তা নষ্ট হবার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। তৈরি হয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্লকের তৃণমূলের অন্য এক গোষ্ঠীর লোকেরা টাকার ভাগ না পাওয়ায় তারা অতিরিক্ত বালি বোঝাই সমস্ত গাড়ি আটকে দেয় শিকারপুর ঢালের রাস্তায়। ফলে শতাধিক বালির গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে রাস্তা জুড়ে। এই পরিস্থিতির কথা ব্লকের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক সবই জানতেন। তবুও তিনি অজানা কোন কারনে গাড়িগুলিকে জরিমানা করেননি। রাতভর গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকার পর শনিবার তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সমঝোতা হলে রাত থেকে পরের দিন সকালে সব বালির গাড়ি বেড়িয়ে যায়। আমার ধারনা প্রশাসনের মদতেই গোহগ্রাম অঞ্চলে রমরমিয়ে চলছে বালির অবৈধ কারবার। সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হলেও একপ্রকার নির্বিকার প্রশাসন। আমারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আন্দোলন শুরু করবো।’
যদিও গলসি ব্লক ভূমি আধিকারিক প্রবোধ আড্য বলেন, ‘ ১এপ্রিল থেকে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প শুরু হওয়ার কারণে দপ্তরের অফিসারেরা ব্যস্ত ছিলেন। শিকারপুর এলাকায় কিছু বালির গাড়ি আটকে পড়েছিল। পরে সেগুলো বেরিয়ে যায়। আমি খোঁজ খবর নিয়ে এনকোয়েরি শুরু করেছি। আমাদের সারা বছরই ওভারলোডিং গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালু থাকে। প্রচুর গাড়ি কে আটক করে জরিমানাও করা হয়। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রেইডও চলে। বালিঘাট মালিকদের ডেকে পাঠানো হয়েছে। যদি কোন বেআইনি কার্যকলাপ থেকে থাকে তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গলসি ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি সুজন মন্ডল বলেন,’ গলসি শিকারপুর রাস্তা দিয়ে বালির গাড়ি যাতায়াতের ফলে রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। এই রাস্তার উপর অনেকগুলি গ্রামের মানুষ নির্ভরশীল। স্বাভাবিকভাবেই রাস্তা খারাপ হলে গ্রামবাসীদেরই অসুবিধা। তাই তারা বিরোধিতা করেছে। আমি প্রশাসন কে সব জানিয়েছি। প্রশাসন ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’